‘‌ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২৩ । ১৩:১৫ | আপডেট: ০৪ মার্চ ২৩ । ১৭:৫০

সমকাল প্রতিবেদক

‘‌ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা

ভাষা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বাঙালি জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পরিণত করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ লক্ষ্যে ছাত্রসমাজকে দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিষ্ঠা করেন ছাত্রলীগ। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ভাষা আন্দোলনে তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।   

‘‌ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। কলাবাগানে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সরদার মাহামুদ হাসান রুবেল। 

আলোচনা সভায় অংশ নেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ শামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বাঙালির জন্য একটি পৃথক রাষ্ট প্রতিষ্ঠা- এটা প্রথম উপলব্ধি করেন তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ওই বয়সে ছাত্রনেতা হিসেবে সকলকে এক করে ভাষা আন্দোলনসহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিকতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে বোঝাতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। আরবি হরফে বাংলা ভাষার লেখার প্রস্তাব দিয়েছিল পাকিস্তানিরা। কিন্তু মানেননি বঙ্গবন্ধুসহ ভাষা আন্দোলেনের নেতারা।  

ভাষাসৈনিক শওকত আলীর ছেলে ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ অনুষ্ঠানে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ভাষা আন্দোলনের নিয়ে লেখা বই থেকে এই আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমান ও ছাত্রলীগের ভূমিকার নানা তথ্য তুলে ধরেন।

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ধর্মঘট চলাকালে পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত শওকত আলীকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন শেখ মুজিবুর রহমান  (সূত্র- বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন) 

ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ভাষা আন্দোলনই শুধু নয়, বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মূল কারিগর বঙ্গবন্ধু। দেশভাগ হলেও পরের বছরই শেখ মুজিবুর রহমান অনুধাবন করলেন বাংলা ভাষায় কথা বলাসহ বাঙালি তাদের ন্যায্য অধিকার পাচ্ছেন না। এই কারণে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় ছাত্রলীগ, যে সংগঠনকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে ১৯৪৮ সালে শেখ মুজিবকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। আন্দোলন যখন বেগবান হতে থাকে তখন তরুণ জনপ্রিয় ছাত্রনেতা শেখ মুজিবকে ঢাকা কারাগার থেকে ফরিদপুরে স্নানান্তর করা হয়। এই কৌশল বুঝে তিনিও পাল্টা কৌশলে লঞ্চে যাত্রাপথে নারায়ণগঞ্জে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতাসহ আন্দোলনে সক্রিয় অন্যদের এই আন্দোলনের দিকনির্দেশনা দিয়ে যান। 

ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সরদার মাহামুদ হাসান রুবেল বলেন, বাংলা ভাষার উপর বারবার আঘাত এসেছে। যখন যারা বাংলায় এসেছে তারা তাদের সংস্কৃতি বাঙালির উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পাল বংশ, সেন বংশ থেকে বিট্রিশ ও পাকিস্তানিরা কেউ বাদ যায়নি। তৎকালীন পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষ বাংলায় কথা বলতো। কাজেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা হোক এই দাবিতে সোচ্চার ছিলেন বঙ্গবন্ধু। মাতৃভাষার ব্যাপারে তিনি ছিলেন সহানূভূতিশীল। এ কারণে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতেও তিনি কিন্তু অন্য ভাষাকে বিদ্রুপ করেন নাই। ভাষা আন্দোলনই ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। 

বক্তারা বলেন, ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের একুশ দফা কর্মসূচি ছিল যার প্রথম দফাই ছিল ‘বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হবে’।

তাঁরা বলেন, দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে সমগ্র পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা কি হবে তা আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারণের দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা না মানায় বঙ্গবন্ধু আন্দোলনে নেমে পড়েন। কারাগার থেকে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, কারাগার থেকে মুক্ত হব জ্যান্ত অথবা মৃত অবস্থায়। এভাবে বাংলা ভাষার দাবির প্রতি তিনি ছিলেন অনড়। এই অনশন করতে গিয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তারপরও দাবি থেকে বিচ্যুত হননি। 

বাংলা ভাষার গবেষণা, প্রচলন, ব্যবহারসহ রাষ্ট্রীয় সকল পর্যায়ে বাংলা ভাষা প্রচলনের আহ্বান জানান বক্তারা। 

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি এম মনসুর আলী, সিদ্দিকুল বাহার, লায়ন হামিদুল আলম সখা, সঞ্জিব কুমার রায়, মো. এনামুল হক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন এস. এম. ওয়াহিদুজ্জামান (মিন্টু), নির্মল বিশ্বাস, দপ্তর সম্পাদক এ কে এম ওবায়দুর রহমান, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ নূর ইসলাম, সমাবজসেবা বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশরী মো. আওয়াল, উপ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিসয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মোহা. মশিউর রহমান, কার্যনির্বাহী সদস্য ইমাম শাহীন, পারভীন আক্তার নীলা, রিয়াজুল ইসলাম (শাওন), আবু আলম এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের নড়াইল জেলা আহ্বায়ক ড. তপন সরকার, বঙ্গবন্ধু পরিষদ পূবালী ব্যাংক শাখার সভাপতি কাজী মাহাতাব আলী রাশেদ প্রমুখ। 

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com