
অবৈধভাবে সার্ভারে ঢুকে জন্ম–মৃত্যু সনদ তৈরি করতেন তারা
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২৩ । ০১:৩০ | আপডেট: ০৩ মার্চ ২৩ । ০১:৩২
সমকাল প্রতিবেদক

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের তথ্য ব্যবস্থাপনা সার্ভারে অবৈধভাবে ঢুকে ভুয়া জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রস্তুতকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের মধ্যে দু’জন ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর্মী। সিআইডি বলছে, এই চক্রটি গত ছয় মাসে অন্তত তিন হাজার ভুয়া জন্ম ও মৃত্যু সনদ ইস্যু করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন– ভুয়া সনদ তৈরিতে জড়িত ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন মাহবুব আলী ও শাহ আলম। সম্প্রতি রাজধানীর পল্লবী থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল-৪-এর স্প্রেম্যান হাসান তারেক ও ভ্যাকসিনেটর কোহিনুর সুলতানাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এ সময় সেখানে জন্ম নিবন্ধনের জন্য ভুয়া কাগজপত্রসহ ফাইল জমা দিতে আসা চক্রের সদস্য মো. ফয়সালকেও গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে তাদের কাছ থেকে বেশকিছু জন্মসনদ, সনদ তৈরির ভুয়া কাগজপত্রসহ আটটি ফাইল, তিনটি হার্ডডিস্ক, চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
সিআইডি সূত্র জানায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন অধিদপ্তরের রেজিস্টার জেনারেল রাশেদুল ইসলাম সিআইডিতে একটি চিঠি পাঠান। তিনি উল্লেখ করেন, অবৈধভাবে বিকল্প পদ্ধতিতে কেউ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে সনদ তৈরি করছে। তাদেরকে চিহ্নিতকরণ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ জানান তিনি। এরপর সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়ার নির্দেশনায় সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে।
কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাদের কাছ থেকে 'জন্ম নিবন্ধন হেল্প ডেস্ক' নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা বলছে, একদিনেই দেশের যে কোনো জেলার জন্ম–মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করুন। সাইবার পুলিশ সেন্টার গ্রুপের অ্যাডমিনসহ চক্রটিকে শনাক্ত করে।
সিআইডি বলছে, সিটি করপোরেশনের গ্রেপ্তার হওয়া দুই কর্মচারী অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আইডি ও পাসওয়ার্ড নিয়ে সার্ভারে ঢুকে ভুয়া তথ্য সংবলিত আবেদনপত্রে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সনদ ইস্যু করে মাহবুব ও ফয়সালকে সরবরাহ করত। গত ছয় মাসে তারা সার্ভারে ঢুকে অন্তত তিন হাজার ভুয়া সনদ ইস্যু করেছে। এই কাজে তাদের অফিসের আরও কর্মচারী এবং সিটি করপোরেশনের উত্তর–দক্ষিণসহ অন্যান্য অফিসেও এরকম অসাধু কর্মচারী জড়িত রয়েছে। তাদেরকেও চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিআইডি জানায়, আসামিদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রুজু হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিআইডি জানায়, মাহবুব আলী ও শাহ আলম ফেসবুকে লোভনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সারাদেশ থেকে ক্লায়েন্ট সংগ্রহ করে। ফয়সাল তার দোকানে ফরম পূরণ করতে আসা লোকদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ভুয়া তথ্য সংযোজন করে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরির ফাইল বানিয়ে সিটি করপোরেশনের দুই কর্মচারীর কাছে জমা দিত। প্রতিটি ফাইলের বিপরীতে ৫৫০ থেকে এক হাজার টাকা করে নিত তারা। যদিও জন্ম নিবন্ধনের সরকারী ফি মাত্র ৫০ টাকা। এই কাজে তারা দেশের সকল জেলার আগ্রহী লোকদের আবদনের সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি এলাকার একটিমাত্র বিদ্যুৎ বিলের কাগজ যুক্ত করে দিত। অনেক ক্ষেত্রে মিরপুরের একটি স্কুলের ট্রান্সক্রিপ্ট এডিট করে সেখানে শুধু ছাত্র/ছাত্রীর নাম, পিতার নাম পরিবর্তন করে একই রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের কাগজ একাধিক আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করে দিত। কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই চক্রটিকে জন্ম সনদ দেওয়া হত।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com