শতাধিক একর জমির মাটি লুট

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ০৩ মার্চ ২৩ । ১৩:২০ | প্রিন্ট সংস্করণ

কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু, মুন্সীগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জ সদরের ইউএনও হোসাইন মো. আল জুনায়েদ বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ বিষয়ে গোলাম কিবরিয়া মিয়াজী বলেন, ‘যেসব জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে, সেখানে আমাদের জমি রয়েছে। এ ছাড়াও অনেকের কাছ থেকে মাছ চাষের জন্য জমি লিজ নিয়েছি।’ ওইসব জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন জানিয়ে দাবি করেন, কারও জমির মাটি জোর করে কাটছেন না।

মাটি কাটা দেখভালের দায়িত্বে থাকা লিটন ফকির ওরফে টুন্ডা লিটন বলেন, কিবরিয়া মিয়াজী মাছের ঘের করার জন্য একরপ্রতি ৩ লাখ টাকা দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে তিন বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। এখানে কারও জমি অন্যায়ভাবে কাটা হচ্ছে না।

কৃষক মোর্শেদ আলম দেড় একর জমিতে ধান, আলু ও সরিষা চাষ করে সংসার চালান। কিন্তু কিবরিয়া মিয়াজী ওই জমির মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বাধা দিলেও শুনছেন না।

ওই এলাকায় সাড়ে চার একর জমির মালিক কৃষক আমজাদ ব্যাপারী। তাঁর জমির মাটি কেটে নেওয়ায় চলতি মৌসুমে আবাদ করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের না জানিয়ে জমির মাটি কেটে নিয়েছে।’ পরে স্থানীয় মাতব্বররা তাঁদের নিয়ে বাধা দিতে যান। পরে শুনেছেন মাতব্বররা টাকা খেয়ে চুপ হয়ে গেছেন। এ বিষয়ে কিবরিয়ার কাছে গিয়েছিলেন। তাঁকে বলা হয়, তিন বছরের জন্য নাকি জমি বিক্রি হয়ে গেছে।

চর আব্দুল্লাপুর মৌজায় এক একর জমির মালিক কৃষক নুর ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতি বছর ওই জমিতে ধান ও আলু চাষ করতেন। দুই মাসে তাঁর জমি ৫-৬ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নেন কিবরিয়া মিয়াজী। যে কারণে ওই জমিতে আর ফসল ফলানো যাবে না।

কয়েকজন কৃষক বলেন, দুই মাস ধরে কিবরিয়া মিয়াজীর নেতৃত্বে ৬০-৬৫ জন শ্রমিক প্রতিদিন এক্সক্যাভেটরের সহায়তায় মাটি কাটছেন। কিবরিয়া অতীতে নৌ-ডাকাতি, সন্ত্রাসী নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া টুন্ডা লিটনসহ আরও কিছু সন্ত্রাসীকে মাটি কাটা দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন। যে কারণে কৃষকরা প্রতিবাদের সাহস পান না। পুরো চরাঞ্চলে একরকম ভীতিকর পরিবেশ দেখা দিয়েছে।

খাড়ারচর ও বাহেরচর গ্রামের পদ্মা-মেঘনা নদীঘেঁষা এলাকায় মঙ্গলবার দেখা যায়, ২৫-৩০ জনের তদারকিতে মাটি কাটা চলছে। সাংবাদিক বা অন্য কেউ এর ছবি তুলছেন কিনা– তা দেখভাল করছেন ইয়াসিন আরাফাত নামের এক যুবক। আর মাটি কাটা দেখাশোনায় রয়েছেন লিটন ফকির ওরফে টুন্ডা লিটন। স্থানীয় লোকজন জানায়, লিটনের বাড়ি সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের রাঢ়ীপাড়া গ্রামে। বোমাবাজ ও সন্ত্রাসী হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে।

দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে সাবেক এ জনপ্রতিনিধি বলেন, ভূমিদস্যুদের আইনের আওতায় আনা না হলে কৃষকদের না খেয়ে মরতে হবে।

গোলাম মতুর্জা সরকারের ভাষ্য, তিনি মাটি কাটায় বাধা দেওয়ায় ২০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব পান। কৃষকদের কথা ভেবে ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ‘আজ নয়, কাল দেখছি’ বলে সময়ক্ষেপণ করছেন।

সম্প্রতি এ বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ দিয়েছেন একই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা সরকার। ওই এলাকায় প্রায় ৫০ একর জমি রয়েছে তাঁর। তিনি বলেন, ওই জমিতে আলু, ধান ও সরিষা আবাদ করতেন। ইতোমধ্যে প্রায় ২০ একর জমি ৭-৮ ফুট গর্ত করে মাটি নিয়ে গেছে ভূমিদস্যুরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, বাংলাবাজার ইউনিয়নের চর আব্দুল্লাহপুর মৌজার খাড়ারচর ও বাহেরচর এলাকায় দিন-রাত নিরীহ কৃষকদের দুই ফসলি জমির মাটি লুট করা হচ্ছে। কোনো কোনো জমি এখন ৭-৮ ফুট গভীর পুকুরে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে মাটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে কেটে ভরা হচ্ছে ড্রাম ট্রাকে। ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি নিয়ে ৫০ মিটার দূরে পদ্মা নদীর পাড়ে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে মাটি তোলা হচ্ছে বিশাল আকারের বাল্কহেডে। যা নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়।

গত দুই মাসে মুন্সীগঞ্জ সদরের বাংলাবাজার ইউনিয়নের দুটি এলাকা থেকে শতাধিক একর কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা। এ নিয়ে প্রশাসন ও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি কৃষকরা। তাঁদের ভাষ্য, মাটি কাটায় নেতৃত্ব দেওয়া মো. গোলাম কিবরিয়া মিয়াজীর বিরুদ্ধে পদ্মা-মেঘনায় ডাকাতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তাঁর নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসীর একটি দল মাটি কাটা সরাসরি তদারক করছে। কৃষকদের জমি থেকে জোর করে মাটি কাটলেও এ কারণে তাঁরা প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছেন না।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com