
চট্টগ্রাম মেডিকেলে স্বজনহারাদের আহাজারি
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ০৫ মার্চ ২৩ । ০৬:০৪ | প্রিন্ট সংস্করণ
আহমেদ কুতুব ও শৈবাল আচার্য, চট্টগ্রাম

সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডে সহকারী ইলেকট্রিশিয়ান মো. জাহেদ। অন্যদিনের মতো গতকাল শনিবার বিকেলেও কারখানায় কাজ করছিলেন। হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণের শব্দে মূর্ছা যান। দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর নিজেকে জাহেদ আবিষ্কার করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। তখন তাঁর পুরো শরীর ব্যান্ডেজে মোড়া। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে জাহেদ বলেন, হঠাৎ বিস্ফোরণে লন্ডভন্ড মনে হচ্ছিল সবকিছু। আমরা ৩০ থেকে ৪০ জন কাজ করছিলাম প্লান্টে। এখন কে কোথায় আছে জানি না।
হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জাহেদ মাথা, বুক, পিঠ ও হাতে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তবে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়। জাহেদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে হলেও তিনি সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীতে থাকেন। শুধু জাহেদ নন, অক্সিজেন প্লান্টটিতে তাঁর মতো আরও অন্তত ২০ জন আহতকে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁদের অনেকের অবস্থা এখন খারাপ।
হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে নেওয়া হয়েছে মো. আরাফাত নামে এক আহতকে। তিনি প্লান্টে অক্সিজেনের লেভেল চেক করেন। গতকাল বিকেলেও দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। কিন্তু বিস্ফোরণে হাত ও বুকে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তাঁর বাড়ি সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীতে। আরাফাত বলেন, যেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখান কিছুটা দূরে থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছি। কিন্তু ২৫ থেকে ৩০ গজ দূরে থেকেও যেভাবে আঘাত পেয়েছি, সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এমন কান ফাটানো বিকট শব্দ আগে কখনও শুনিনি।
খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন আরাফাতের মামা জাহেদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাগ্নে বড় বাঁচা বেঁচে গেছে। অল্পের জন্য মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছে। এখনও তাঁর মা জানে না আরাফাত হাসপাতালে।’ চমেক পুলিশ ফাঁড়ির খাতায় আহত একজনের নাম লেখা রয়েছে প্রবাস।
আনুমানিক ৪০ বছর বয়সী এই ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক। সন্ধ্যায় তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রথমে নিউরোসার্জারি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন তিনি।
রাতে হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, সাইরেন বাজিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স ঢুকছে। বিস্ফোরণে কারও পা থেঁতলে গেছে, কেউ মাথায় আঘাত পেয়েছেন। কারও চোখে জখম, কারও বুকে-পিঠে মারাত্মক আঘাত। আহতদের সঙ্গে হাসপাতালে ভিড় করেছেন তাঁদের স্বজনরাও। একদিকে আহতদের আর্তনাদ, অন্যদিকে স্বজনদের আহাজারি। সব মিলে ভারি হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, নিহতদের ছাড়াও রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আহত ২০ জনকে ভর্তি করা হয়। তাঁদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে অতিরিক্ত চিকিৎসক ও নার্সেরও। কিছু রোগীর রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে। আমরা সেটাও ব্যবস্থা করছি। এই সময়ে হাসপাতালে ছয়জনের মরদেহ আনা হয়েছে।
চমেক হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, আহতদের হাসপাতালে আনা হলে অনেক লোকজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছেন। অনেকেই আবার কৌতূহলী হয়ে ভিড় করছেন। এ নিয়ে যাতে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য পুলিশ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com