
প্রযুক্তি
পাল তুলে ছুটবে জাহাজ
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ০৬ মার্চ ২৩ । ০৫:৪৯ | প্রিন্ট সংস্করণ
শিহাবুল ইসলাম

পণ্যবাহী জাহাজে জ্বালানি ব্যবহার কমাতে এভাবেই ব্যবহার হবে সিউইং - সংগৃহীত
মাঝসমুদ্রে কনটেইনার নিয়ে ছুটে চলেছে জাহাজ। বিশালাকার একটি উড়ন্ত প্যারাসুট জাহাজের সামনে সামনে ছুটছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, এ যেন পালতোলা নৌকা। প্রকৃতপক্ষে এ ধারণাকেই কাজে লাগানো হয়েছে পণ্যবাহী জাহাজের ক্ষেত্রে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। সম্প্রতি ফরাসি একটি প্রতিষ্ঠানের এ প্রযুক্তি সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। জ্বালানি সমাধান নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান এয়ারসিস এর নাম দিয়েছে সিউইং।
মূলত বিশালাকার ঘুড়ি ব্যবহার ও স্বল্প জ্বালানি পুড়িয়ে জাহাজ কীভাবে সমুদ্র পাড়ি দিতে পারে, তার পরীক্ষা চালানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সিউইং প্রযুক্তি জাহাজের জ্বালানি ব্যবহার ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ গড়ে ২০ শতাংশ কমিয়ে দেবে।
বর্তমানে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে বিশ্বজুড়ে জোর প্রচেষ্টা চলছে। সরকার থেকে প্রতিষ্ঠান সব পক্ষই বিভিন্ন পদক্ষেপের ঘোষণা দিচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে ভূমিকা রাখা এ নিঃসরণ আধুনিক বিশ্বের অন্যতম বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ সমস্যা কমাতেই প্রাচীন পালতোলা নৌকার ধারণা ব্যবহার করা হয়েছে।
একসময় মানুষের যাতায়াতের নিত্যসঙ্গী ছিল পালতোলা নৌকা। বায়ুশক্তি ব্যবহার করে নদী বা সাগর পাড়ি দিতে নৌকার সঙ্গে পাল যুক্ত করা হতো। তবে আধুনিক নগর সভ্যতায় যান্ত্রিক যানবাহনের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে পালের ব্যবহার। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও মাছ ধরার ছোট জাহাজে পালের ব্যবহার দেখা যায়।
ভিল দে বোরডপ নামের একটি ফরাসি কনটেইনার জাহাজে এ প্রযুক্তি পরীক্ষা করা হয়েছে। জাহাজটিতে বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের যন্ত্রাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফ্রান্সে পরিবহন করা হয়। ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্যের জাহাজটিতে ২ হাজার ৭০০ বর্গফুটের সিউইং ব্যবহার করা হয়। জাহাজের ডেক থেকে ৬৬০ ফুট উঁচুতে এটি উড়েছে।
বিশ্বের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের প্রায় ২ শতাংশের জন্য দায়ী শিপিং খাত। তবে সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রাস অক্সাইডের ১৫ শতাংশ নিঃসরণ এ খাত থেকে। গ্যাস দুটি মানুষ ও মাছ– উভয়ের ক্ষেত্রেই শ্বাস নেওয়ার জন্য বিষাক্ত হিসেবে বিবেচিত।
কার্গো জাহাজের মালিক থেকে শিপইয়ার্ড পর্যন্ত সংশ্লিষ্টরা এ খাতের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর উপায় খুঁজছেন। প্রায় দুই ডজন বড় বাণিজ্যিক জাহাজ এখন ঘুড়ি, প্যারাসুট, ঘূর্ণায়মান পালসহ ‘বায়ু-সহায়ক প্রপালশন’ ব্যবহার করছে। ইন্টারন্যাশনাল উইন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশন জানায়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করা জাহাজের সংখ্যা ৫০-এ উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এটি বর্তমানে পণ্য পরিবহন পরিষেবায় থাকা লক্ষাধিক জাহাজের তুলনায় খুব কম। তারপরও এটি নিয়ে আশাবাদী বিশ্লেষকরা।
এয়ারসিসেস সিউইং সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। একটি বোতামের চাপেই এটি কমান্ড কনসোল থেকে বেরিয়ে বাতাসে উড়তে শুরু করে। এরপরেই এটি জাহাজের দোলা, উচ্চতা ও বাতাসের গতিবেগ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে সিউইংটি বায়ুশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ক্রমশ অবস্থান পরিবর্তন করে। যখন পালটি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না কিংবা বাতাস স্থির হয়ে যায়, তখন সেটি কমান্ড কনসোলে নেমে আসে।
এক বিবৃতিতে এয়ারসিসের প্রধান নির্বাহী (সিইও) ভিনসেন্ট বেরনাটি বলেন, আমরা শিপিং খাতের নিঃসরণ কমানোর একটি সমাধান পেয়ে গর্বিত। এটি ভবিষ্যতে এ খাতের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ শূন্যে নামানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পারে।
তবে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, উড্ডয়ন শেষে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে সিউইংটি যেন সুন্দরভাবে নেমে আসে। কারণ জাহাজের সামনের এ পয়েন্টে বড় ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি চলমান থাকা অবস্থায় সেটি মসৃণভাবে নামানো চ্যালেঞ্জিং।
এরই মধ্যে পণ্য পরিবহন পরিষেবা দেয়া জাপানি প্রতিষ্ঠান কে লাইন থেকে পাঁচটি সিউইং সিস্টেমের ক্রয়াদেশ পেয়েছে এয়ারসিস। পাশাপাশি আগামী কয়েক বছরে সিউইং-যুক্ত প্রায় ৫০টি জাহাজ তৈরির ঘোষণা দিয়েছে কে লাইন।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com