ফেডারেশনে বিভক্তির উদ্যোগে ক্ষুব্ধ সরকারি কর্মচারীরা

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২৩ । ২২:২০ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২৩ । ২২:২০

সমকাল প্রতিবেদক

‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারি কল্যাণ ফেডারেশন’ বিভক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সারাদেশের ১১ থেকে ২০ গ্রেডভুক্ত বেসামরিক কর্মচারীদের নিয়ে এ সংগঠনটি গঠিত। গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে সাবেক কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে কাউন্সিল আহ্বানের অভিযোগ তুলেছেন ফেডারেশনের বর্তমান নেতারা। সংগঠনের সাবেক একজন সভাপতি আগামী শনিবার রাজধানীতে কাউন্সিল ডাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ফেডারেশন সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ তৃতীয় শ্রেণী সরকারি কর্মচারী সমিতি ২০০০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত সংগঠনের জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে এ সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন লুৎফর রহমান খান। ২০১৫ সালে লুৎফর রহমান খান চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ায় একই বছরের অক্টোবর মাসে ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল হয়। ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারী সমিতির পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন’ নামকরণ অনুমোদন পায়। এতে ওয়ারেছ আলী সভাপতি ও হেদায়েত হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়। কাউন্সিলে তৎকালীন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খানকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও লুৎফর রহমান খানকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।

এরপর ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল হয়। এতে হেদায়েত হোসেন সভাপতি ও আকতার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ৯৫ (পঁচানব্বই) সদস্য বিশিষ্ট ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়।

ফেডারেশনের নেতারা জানিয়েছেন, ওয়ারেছ আলী পদোন্নতি পেয়ে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হয়ে যাওয়ায় গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ-১ (ক) ও অনুচ্ছেদ-৩ (ক) অনুযায়ী এ ফেডারেশনের সাধারণ সদস্য হওয়া বা নেতৃত্বে আসার সুযোগ নেই। কিন্তু তিনি গত কাউন্সিলের পরপরই নিজেকে সভাপতি করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। যা  সাধারণ সদস্যরা গ্রহণ করেননি। কিন্তু তিনি আগামী ১১ মার্চ ঢাকায় সংগঠনের নামে নতুন কাউন্সিল ডেকেছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা এটা পারেন না।

ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা লুৎফর রহমান খান সমকালকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনটি শক্তিশালী অবস্থানে যাওয়ার পথে রয়েছে। এই সময়ে ঐকবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। তাই যারা বিভক্তির উদ্যোগ নিচ্ছেন তাদের অনুষ্ঠানে সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের কেউ যেন অংশ না নেন তার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাই।’

ফেডারেশনের বর্তমান সভাপিত হেদায়েত হোসেন সমকালকে বলেন, ‘একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা নিজেকে স্ব-ঘোষিত সভাপতি দাবি করে কয়েকটি দপ্তরের অনির্বাচিত ব্যক্তিকে সংগঠিত করে কাউন্সিল ডাকতে পারেন না। আগামী শনিবার রাজধানীর এলজিইডি অডিটোরিয়ামে কাউন্সিল সভার আহবান করে স্বরাষ্টমন্ত্রী ও সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে যথাক্রমে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি করে পোস্টার ছাপিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। যা সাধারণ কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।’

ফেডারেশনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের সক্রিয় সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ আছি। ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খানের নেতৃত্বে দেশজুড়ে ওই সময়ে চলা সহিংসতার বিরুদ্ধে শাহবাগ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত পদযাত্রা করেছি। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। বর্তমানে কর্মচারীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের জন্য যখন আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার তখন ঐক্য বিনষ্ট করতে যারা কাউন্সিল ডেকেছেন তাদের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন।’

এদিকে ওয়ারেছ আলীর ডাকা কাউন্সিলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অংশ না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ফেডারেশনের সভাপতি হেদায়েত হোসেন মন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন। আবদনে উল্লেখ করেছেন, ‘ওয়ারেছ আলী বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন সদস্য নন। তিনি সমাজসেবা অধিদপ্তরে চাকরির সুবাদে ৪৫ দিন মেয়াদি একটি ছাড়পত্রে সংগঠনের নাম ব্যবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে কর্মচারীদের উসকিয়ে দেওয়ার নানা কৌশলে লিপ্ত রয়েছে। আপনার মত রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করলে সরকার বিরোধীরাই ঐক্যবদ্ধ হবার সুযোগ পাবে।’

এ বিষয়ে ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ওয়ারেছ আলীকে বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অন্তত ছয়বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। প্রতিবেদক পরিচয় দিয়ে এসএমএস পাঠালেও কোনো উত্তর না পাওয়ায় তাঁর কোনো মন্তব্য জানা যায়নি।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com