‘চাপা পড়ে যাই, হাত নাড়ালে লোকজন টেনে বের করে’

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২৩ । ২২:৪৭ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২৩ । ২২:৪৭

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ছবি: সমকাল

‘আমি দোকানের চেয়ারে বসে ছিলাম। বিস্ফোরণে সব ছিটকে যায়, ভবন ধ্বসে পড়ে, এ সময় আমি চাপা পড়ে যাই। ভাগ্যক্রমে হাত বাইরে ছিল, নাড়াতে থাকি। পরে লোকজন দেখে টেনে বের করে।’ বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে এভাবে গুলিস্তানের বিস্ফোরণের ঘটনা জানান সানি হোসেন (৩২)। তাঁর পায়ে মারাত্মক জখম হয়েছে এবং দুই চোখ প্রায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম। তিনি বিস্ফোরিত ভবনের আজাদ স্যানিটারী দোকানে কাজ করতেন।

মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনের দুই পাশে আরও দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সানি হোসেনের সহচর্যায় পাশে ছিলেন দোকানের আরেক কর্মচারী মো. রাসেল হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের দোকান দোতলায়।

বিস্ফোরণে আরও আঘাত পান দোকানের আরেক কর্মচারী আরমান হোসেন (১৭)। তার অবস্থা খুব একটা ভালো না। ঢামেকের আইসিউ থেকে তাকে বার্ন ইনস্টিটিউট আইসিইউতে নিয়ে আসা হয়েছে। আরমানের বাবা আমাদের দোকান থেকে একটু সামনে ফল বিক্রি করত, সেই সুবাদে আমাদের দোকানে কাজ করত সে। তবে তার বাবার কিছু হয়নি।

রাসেল বলেন, আরেকজন কর্মচারী ছিলেন মাইনুদ্দিন (৫০)। তিনি মারা গিয়েছেন। তার এক ছেলে আছে হৃদয় নামে, বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। তাকে মঙ্গলবার রাতে নিয়ে আত্মীয়রা নিয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া আমাদের মালিক জাকির হোসেন আজাদ, তিনিও আঘাত পেয়েছেন। তবে অন্যদের থেকে কম, এখন তিনি চিকিৎসা নিয়ে বাসায় আছে।

রাসেল আরও বলেন, আমাদের মালিকের দুটি দোকান। তার ছোট ছেলের নামে আফরাজ স্যানিটারি আরেকটা দোকান আছে আরেকটু সামনে। সেখানে আমি কাজ করি। সেখানে কিছু হয়নি। আর এ দোকানের সব মালামাল চুরমার হয়ে গেছে। যা ছিল, সিটি করপোরেশনের লোকজন নিয়ে যাচ্ছিল, পরে গিয়ে যা পেয়েছি উদ্ধারের চেষ্টা করছি। মালিকের এলসির কিছু কাগজপত্র ছিল, সেগুলো জরুরি ছিল। পরে পেয়েছি।

বুধবার সরেজমিনে ঢামেকে দেখা যায়, বিভিন্ন ওয়ার্ডে মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আহতদের। কারো পা, কারো হাত, চোখ অথবা পেটে মারাত্মক আঘাত রয়েছে। জানা যায়, বিস্ফোরণে আহত প্রায় শতাধিক মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ঢামেকে। এরমধ্যে ২০ জনকে ১০০, ১০১-১০৩, ২০১ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়াও পাশ্ববর্তী শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রায় ১১ জনকে ভর্তি করা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের বর্ণনা দেন বাংলাদেশ স্যানিটারীর নুরনবী। তিনি বলেন, আজাদ স্যানিটারী দুই তলায়, নিচতলায় ছিল আনিকা এজেন্সিজ এবং বাংলাদেশ স্যানিটারী। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই তিন দোকান। আমাদের মালিক মেহেদী হাসান স্বপনকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আনিকা’র মালিককে মৃত উদ্ধার করা হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘হায় খোদা! কী যে দেখলাম! বিস্ফোরণের পর বিকট শব্দে বাসের জানালাগুলা ফাইটা ফাইটা ঝুরঝুরাইয়া পড়ল। রিকশাগুলা ইট-কাচে চাপা পইড়া ভাইঙা ভাইঙা পড়ল। পাশের গলিতে ভ্যানগুলাও ভাইঙা ভাইঙা পড়ল। চোখের সামনে ঝইলসা গ্যাল চালকগো শরীর। আর চারদিকে ভাইসা উঠল খালি আহাজারি।’

নুরনবী বলেন, ‘আমি দুপুরে খেয়ে দোকান থেকে একটু বের হইছি। হঠাৎ করে বিকট শব্দ। বাইরে আইসা দেখি চারদিকে ধূলা আর ধোঁয়া। এরকম ছিল প্রায় ১০ মিনিট। বিস্ফোরণের তেজে আশেপাশের দূরের ভবনেরও কাঁচ ভাইঙা পড়ে। বিকট শব্দে বাসের জানালা ভাইঙা পড়ে। এসি ফাটলে কী এমন ভয়ঙ্কর হয়, আল্লাহ মালুম! আমি একটু দূরে ছিলাম, নইলে তো এতক্ষণে আমিও শ্যাষ!’

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com