
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নিচের সারিতে বাংলাদেশ
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ০৯ মার্চ ২৩ । ১০:৪৫ | প্রিন্ট সংস্করণ
জাকির হোসেন

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘নারী, ব্যবসা এবং আইন’– শিরোনামে বিশ্বব্যাংক প্রতিবছর একটি সূচক প্রকাশ করে। এতে বিশ্বের ১৯০টি দেশের কর্মজীবী নারীরা মোট ৮টি মানদণ্ডে পুরুষের তুলনায় কেমন অবস্থায় আছেন এবং সর্বশেষ কোন কোন দেশে গত এক বছরে নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় কী কী সংস্কার করেছে, তার পরিস্থিতি তুলে ধরে।
সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, বিশ্বে সামগ্রিকভাবে আইনি সংস্কারের মাধ্যমে নারীর পুরুষের সমান সুযোগ প্রতিষ্ঠায় সংস্কারের গতি গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২২ সালে মাত্র ১৮টি দেশে জেন্ডার সম্পর্কিত ৩৪টি সংস্কার হয়েছে। এ সংখ্যা ২০০১ সালের মধ্যে সর্বনিম্ন। উল্লেখযোগ্য সমতা আনতে আরও ১ হাজার ৫৪৯টি সংস্কার দরকার। বর্তমান ধারা অনুযায়ী এসব সংস্কারের জন্য অন্তত ৫০ বছর লাগবে। ২০২৩ সালের সূচকে বৈশ্বিক স্কোর ৭৭ দশমিক ১, যা আগের বছরের চেয়ে মাত্র শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান সংকটের সময় এ প্রবণতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে।
সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারেই নিচের সারিতে। বাংলাদেশর স্কোর ১০০ এর মধ্যে মাত্র ৪৯ দশমিক ৪। এর মানে পুরুষদের যেসব আইনি অধিকার রয়েছে, তার অর্ধেকেরও কম রয়েছে নারীদের। বাংলাদেশের স্কোর ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৭৫তম। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে শুধু আফগানিস্তান। এ অঞ্চলে এগিয়ে আছে নেপাল, যার স্কোর ৮০ দশমিক ৬। ২০২২ সালের ১ অক্টোবর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক এ সূচক তৈরি করেছে। এতে দেখা যায়, এ পর্যন্ত এক বছরে বাংলাদেশে নারীর সম-অধিকারে কোনো আইনি সংস্কার করা হয়নি।
বিশ্বব্যাংক ৮টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে নারীর সম-অধিকারের স্কোর নির্ণয় করে। এর একটি হলো নারীর চলাচলের স্বাধীনতা। বাংলাদেশের নারীদের পুরুষের মতো নিজের পছন্দের জায়গায় বাস করতে, বাইরে যেতে, বিদেশ যেতে এবং পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে কোনো আইনি বাধা নেই। এই একটি মানদণ্ডে বাংলাদেশের স্কোর ১০০। কর্মক্ষেত্রে সম-অধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর মাত্র ৫০। কেননা এখানে কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে কোনো আইন নেই। এ ছাড়া যৌন হয়রানির জন্য কোনো ফৌজদারি জরিমানা বা দেওয়ানি সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশে সবচেয়ে কম স্কোর (২০) রয়েছে প্যারেন্টহুড (পিতৃত্ব/ মাতৃত্ব) মানদণ্ডে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এ দেশে সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটির শতভাগ পরিশোধ করে না। পিতৃত্বকালীন ছুটি সহজলভ্য নয়। পিতৃত্বকালীন ছুটির জন্য পরিশোধ ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীর চাকরিচ্যুতির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
বেতন এবং পেনশন মানদণ্ডেও বাংলাদেশের স্কোর খুবই কম, মাত্র ২৫। এ দেশে একই কাজের জন্য নারী ও পুরুষের সমান বেতন দেওয়ার আইনি বিধান নেই। নারীরা পুরুষের মতো একইভাবে শিল্পকারখানায় কাজ পান না। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পুরুষের মতো তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয় না। নারীরা পুরুষের মতো একই বয়সে পূর্ণ পেনশন এবং আংশিক সুবিধাসহ অবসরে যেতে পারেন না।
বাংলাদেশে সম্পত্তির ক্ষেত্রেও নারীদের প্রতি বৈষম্য রয়েছে। পিতা-মাতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীরা কম অংশ পান । উত্তরাধিকার সম্পত্তির ওপর জীবিত স্বামী-স্ত্রীর প্রাপ্যতার ক্ষেত্রেও নারীরা পিছিয়ে।
বিশ্বব্যাংকের সূচকে ১০০ স্কোর রয়েছে ১৪টি দেশের। এসব দেশে ৮টি মানদণ্ডের সব ক্ষেত্রেই আইন নারী ও পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে বেলজিয়াম, কানাডা, সুইডেন, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল ইত্যাদি। বাংলাদেশের চেয়ে কম স্কোর থাকা দেশের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, ইরাক, সোমালিয়া, কুয়েত, জর্ডান, কাতার সুদান ইত্যাদি।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্টারমিট গিল বলেন, যখন বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে আসছে, তখন এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রতিটি দেশের উচিত তাদের সম্পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করা। নারীদের সম-অধিকার অস্বীকার করা শুধু অন্যায্য নয়, এটি সবুজ, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে বাধা।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com