প্রাথমিক বৃত্তির ফলে ভুল কারিগরি দলের ‘গাফিলতিতে’

প্রাথমিক প্রতিবেদনে সাতজন দায়ী

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২৩ । ০৪:৪৮ | প্রিন্ট সংস্করণ

সাব্বির নেওয়াজ

ছবি: ফাইল

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) কারিগরি দলের কাজে ‘গাফিলতি’ ও ‘ভুলে’ প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল তৈরি হয়। এ জন্য প্রাথমিকভাবে সাতজনকে দায়ী করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সচিব জানিয়েছেন।

ফলের ত্রুটি খতিয়ে দেখতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠন করা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) নূরজাহান খাতুন সমকালকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। ঊর্ধ্বতনরাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’  

তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, বৃত্তির ফল তৈরির সঙ্গে জড়িত কারিগরি দলের অন্তত তিনটি ক্ষেত্রে গাফিলতি ধরা পড়েছে। গাফিলতি না থাকলে এ ভুলগুলো এড়ানো যেত বলেও তদন্ত কমিটি মন্তব্য করেছে।

তদন্তে দেখা যায়, বৃত্তি পরীক্ষা শেষে জেলা শিক্ষা অফিসে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে কোড দেওয়া হয়। এর পর শিক্ষকরা সেই খাতা মূল্যায়ন করেন। ফলে কার খাতা কোনটি তা বোঝা যায় না। তবে মূল্যায়নের পর প্রাপ্ত নম্বর কোড অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন নম্বরে যোগ হয়। শেষের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডি-কোডিং। এই কোডিং এবং ডি-কোডিং প্রক্রিয়ায় ভুল হয়েছে। দেখা গেছে, এবার দুটি উপজেলার ওয়েবসাইটে একই কোডে প্রবেশ করায় এমন বিপর্যয় ঘটেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারই প্রথম ‘ডিপিএমআইএস’ নামে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বৃত্তির ফল প্রস্তুত ও প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সফটওয়্যারে কোডিং বিষয়টি মাথায় না থাকার কারণে এমনটা ঘটেছে। তবে সফটওয়্যারে কোনো কারিগরি ত্রুটি ছিল না।

এতে আরও বলা হয়, ২০০৯ সালে সর্বশেষ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বৃত্তির ফল তৈরি করেছিল। এর পর দীর্ঘদিন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর ফল তৈরি করা হয়েছে। সেই ফলের ভিত্তিতে তখন বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। তদন্তকালে কারিগরি দলের সদস্যরা তদন্ত কমিটির কাছে দাবি করেন, ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও সরকারি কর্ম কমিশনের ফলেও এমন সমস্যা হয়েছিল।

এদিকে, তদন্ত প্রতিবেদনে কারিগরি দলের চিহ্নিত সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহাম্মদ। গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমি প্রতিবেদনটি এখনও পুরোটা দেখিনি। তবে যেটুকু দেখেছি, কারিগরি ত্রুটির বিষয়টিই মুখ্য হয়ে উঠেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।’

অন্যদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষার কারিগরি বিষয়টি দেখেছে অধিদপ্তরের তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের একটি দল। আর সামগ্রিকভাবে পুরো প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. উত্তম কুমার দাশ। তবে প্রতিবেদনে তাঁকে দায়ী করা হয়নি বলে দাবি তাঁর।  

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালের বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। তবে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে ফল স্থগিত করা হয়।  ফল নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও পৃথক আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের তদন্ত কোন পর্যায়ে আছে, তা জানা যায়নি।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com