সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দিনভর হট্টগোল

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২৩ । ০০:১১ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২৩ । ০০:৩৫

সমকাল প্রতিবেদক

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির দু’দিন ব্যাপী বার্ষিক নির্বাচন বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে দুপুরে ১ ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের এই সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর ভোটার রয়েছেন প্রায় ৯ হাজার। আগামীকাল বৃহস্পতিবারও ভোটগ্রহণ চলবে। এদিকে শুরুর আগেরদিন মঙ্গলবার ভোটকে কেন্দ্র করে দিনভর হট্টগোল হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করার পর দু’পক্ষের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির এই নির্বাচন পরিচালনার জন্য গত ২ মার্চ যে সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছিল তার আহ্বায়ক ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাবেক বিচারপতি মো. মনসুরুল হক চৌধুরী। ব্যাক্তিগত কারণ দেখিয়ে সোমবার রাতে তিনি পদত্যাগ করেন। দেখা দেয় নতুন জটিলতা। আজ যথারীতি ভোটগ্রহণ শুরু করতে বিএনপি-আওয়ামী লীগ দু’পক্ষই মঙ্গলবার নতুন দু’জনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করে। আওয়ামী লীগপন্থীদের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুজ্জামানকে এবং বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের পক্ষ থেকে সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি এ এস এম মোক্তার কবিরকে নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত বার ভবনে দু’পক্ষের মধ্যে চরম হট্টগোল ও উত্তেজনা চলছিল। মঙ্গলবার সারাদিন দু’পক্ষের মধ্যে আক্রমণ ও টান টান উত্তেজনা থাকায় রাত ৯টার দিকে বার ভবনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। 

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন (মানিক) সমকালকে রাত সাড়ে ১১টায় বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাবেক বিচারপতি মো. মনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগ করায় সুপ্রিমকোর্ট বারের ইসি কমিটি নতুন আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুজ্জামানকে নিয়োগ দিয়েছে। এর প্রতিবাদে বিএনপি সারাদিন মিছিল-হট্টগোল করেছে। তারা ব্যালটপেপার ছিঁড়ে ফেলেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুপ্রিমকোর্ট বারের নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মানিক বলেন, ‘বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা যা করেছেন, এটি খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা। তাদের প্রতিবাদ থাকতে পারে, কিন্তু তারা নির্বাচনী প্যান্ডেল ও কনফারেন্স কক্ষে ঢুকে ব্যালটপেপার ছিঁড়ে ফেলতে পারেন না। নজিরবিহীন ঘটনা সৃষ্টি করলেন বিএনপিপন্থী কিছু উশৃঙ্খল আইনজীবী।’

এসবের পরও আজ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিমকোর্ট বার ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল সমকালকে রাত ১১টায় বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে বিশ্বাসী। কিন্তু এবারে সুপ্রিমকোর্ট বারের লালিত ঐতিহ্য ধ্বংস করছেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। আমরা শুনেছি, আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে একটি পক্ষ ব্যালটপেপার ও বাক্স ছিনতাই করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চেষ্টা চালাচ্ছে।’

নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থী প্রার্থীরা ‘সাদা প্যানেল’ হিসেবে এবং বিএনপিপন্থি প্রার্থীরা ‘নীল প্যানেল’ হিসেবে পরিচিত হয়েছেন।

সাদা প্যানেল: নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ থেকে বারের বর্তমান সভাপতি মো. মোমতাজউদ্দিন ফকির আবারও এই প্যানেল থেকে সভাপতি পদে এবং আবদুন নূর দুলাল ফের সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন-সহ-সভাপতি পদে মোহাম্মদ আলী আজম ও জেসমিন সুলতানা, ট্রেজারার পদে মাসুদ আলম চৌধুরী, সহ-সম্পাদক পদে নুরে আলম উজ্জ্বল ও হারুনুর রশিদ। কার্যনির্বাহী সদস্য পদে সাত প্রার্থী হলেন-সাফায়েত হোসেন সজীব, মহিউদ্দিন রুদ্র, শফিক রায়হান শাওন, সুভাষ চন্দ্র দাস, নাজমুল হোসেন স্বপন, দেলোয়ার হোসেন, মনিরুজ্জামান রানা।

নীল প্যানেল: বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য ফোরাম থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এএম মাহবুবউদ্দিন খোকনকে সভাপতি পদে এবং সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া দুটি সহ-সভাপতি পদে হুমায়ুন কবির মঞ্জু, সরকার তাহমিনা সন্ধ্যা, সহ-সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, আব্দুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ পদে রেজাউল করিম প্রার্থী হয়েছেন। কার্যনির্বাহী সদস্য পদে আশিকুজ্জামান নজরুল, ফাতিমা আক্তার, ফজলে এলাহি অভি, ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর, শফিকুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ ও রাসেল আহমেদ প্রার্থী হয়েছেন।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com