
ত্রিদেশীয় মহাসড়ক
নেপিদোর ওপর নির্ভর করছে ঢাকার অন্তর্ভুক্তি
ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিদেশীয় মহাসড়কে আগ্রহী বাংলাদেশ
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২৩ । ০৯:৪৯ | প্রিন্ট সংস্করণ
কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিদেশীয় মহাসড়কে যুক্ত হতে দীর্ঘদিন ধরে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে বাংলাদেশ। এ অন্তর্ভুক্তিতে রাজি ভারত ও থাইল্যান্ড। এখন মিয়ানমারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশ তাতে যুক্ত হতে পারবে কিনা।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে তৃতীয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব। আর থাইল্যান্ডের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি সারুন চারোয়েনসুওয়ান। বৈঠকে যোগ দিতে সারুন চারোয়েনসুওয়ান প্রতিনিধি দল নিয়ে গত সোমবার ঢাকায় আসেন।
দুপুরে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ বিফ্রিংয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গত বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করেছে। এফওসিতে দুই দেশের সম্পর্কের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বর্তমানে দুই দেশের বাণিজ্য ১০০ কোটি ডলারের মতো। নিকট ভবিষ্যতে এ বাণিজ্য দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবসায়িক সম্প্রদায় জাগ্রত রয়েছে। আর সরকারও নীতি-সহায়তা ও সহায়ক পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করবে।
লুক ইস্ট নীতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই পূর্বের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছেন। ওই দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে নিরসনে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। শুধু দূরের দেশগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা খুঁজতে মানা করেছেন। কারণ, পূর্বের দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। আমাদের সক্ষমতা ও সমস্যা একই ধরনের। ফলে আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারি এবং একে অপরের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারি। আমরা আমাদের নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারি।
এ চিন্তাধারা নিয়েই থাইল্যান্ডের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক নিয়ে বর্তমানে কাজ চলছে। নিকট ভবিষ্যতে এ সমঝোতাগুলো সই হবে। থাইল্যান্ড বর্তমানে বিমসটেক জোটের সভাপতি। এ বছর তারা বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করবে। সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে থাইল্যান্ড। সামনের দিনগুলোতে বিমসটেক ও দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দ্রুত বৃদ্ধির প্রত্যাশা করি। গত এক বছরের কম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড দুটি এফওসি বৈঠক করেছে, যা দুই দেশের সম্পর্ক বাড়ানোর আগ্রহের গুরুত্বের বিষয়টি ইঙ্গিত করে।
থাইল্যান্ডের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি সারুন চারোয়েনসুওয়ান বলেন, বৈঠকটি খুবই সময়োপযোগী হয়েছে, আমরা করোনা মহামারি থেকে উত্তরণ করছি। আর এ উত্তরণে আমাদের একে অপরকে দরকার। এ ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের উত্তর অংশীদার হচ্ছে বাংলাদেশ। অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বের হয়ে আসবে। বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এ দেশের সঙ্গে কাজ করতে পারলে আমরা খুশি হবো।
বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার অগ্রগতির কেন্দ্রবিন্দু জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন খাতে আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারি। এ কারণে আমার সঙ্গে শীর্ষ থাই প্রতিষ্ঠানগুলো সফরে এসেছে। তারা বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও ব্যবসায়িক সুযোগ খুঁজবেন। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব। আমরা নিয়মিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকগুলো করতে চাই এবং দুই দেশ একত্রে অগ্রগতি করতে চাই।
ব্রিফিংয়ে ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিদেশীয় মহাসড়কে যুক্ত হওয়া নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ত্রিদেশীয় মহাসড়কে যুক্ত হওয়া নিয়ে বাংলাদেশ তার আগ্রহের কথা বৈঠকে তুলে ধরেছে। এটি শুধু ত্রিদেশীয় মহাসড়কে যুক্ত হওয়া নয়, এটিতে বিমসটেক কানেকটিভিটিও জড়িত।
বিমসটেক কানেকটিভিটি নিয়ে ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশসহ সব সদস্য রাষ্ট্র একমত। আমরা শুধু সড়কপথে যোগাযোগে মনোযোগ দিচ্ছি না, আমরা আকাশ ও সমুদ্রপথে যোগাযোগকেও সামনে আনছি। বর্তমানে ঢাকা-ব্যাংককের মধ্যে সপ্তাহে ৩৫টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। চাহিদা বাড়লে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। এ নিয়ে একটি সমঝোতা তৈরি হচ্ছে, যা সই হলে সুযোগ ও সম্ভাবনা আরও বাড়বে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com