প্রচ্ছদ

সারাদিন ফুরফুরে

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রিক্তা রিচি

মরা পাতাদের ঝরে যাওয়া, ডালে ডালে ফুটে থাকা রংবেরঙের ফুল, প্রকৃতিতে বইয়ে যাওয়া হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে বসন্ত চলছে। প্রকৃতিতে বসন্ত তাতে কি! বাইরে যে কড়া রোদ! কিছুক্ষণ হাঁটতে গেলেই ভ্যাপসা গরমে যাচ্ছেতাই অবস্থা। এ সময় বাইরে যাওয়ার আগে কিছু নির্দেশনা মানা উচিত। কড়া রোদে বেশিক্ষণ থাকলে ঘাম হয়। যাদের ত্বক সেনসেটিভ, তাদের ত্বকে র‌্যাশ ও চুলকানি দেখা দেয়। কড়া রোদের অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে। সূর্যরশ্মি ত্বকে মেলানিনের মাত্রা বাড়িয়ে ত্বকের রং কালো করে দেয়। সে ক্ষেত্রে রোদে যাওয়ার অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ও সানব্লক ব্যবহার করতে হবে বলে জানান রেড বিউটি স্টুডিও অ্যান্ড সেলুনের স্বত্বাধিকারী ও রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন।

তিনি বলেন, ‘রোদে যাওয়ার আগে অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সানব্লক ও সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। কড়া রোদ থেকে চোখকে সুরক্ষা দিতে বাইরে যাওয়ার আগে সঙ্গে সানগ্লাস নিতে হবে।’

‘অনেকে খুব অল্প পরিমাণে সানব্লক কিংবা সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই অভিযোগের সুরে বলেন, নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করেও ত্বক পুড়ে যাচ্ছে, ত্বক কুঁচকে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হলো, যে পরিমাণ সানব্লক ব্যবহার করা প্রয়োজন, সে পরিমাণ ব্যবহার করা হচ্ছে না’– জানান আফরোজা পারভীন।

কতটুকু সানব্লক কিংবা সানস্ক্রিন ক্রিম?
রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভিনের মতে, প্রতিটি মানুষের উচিত পর্যাপ্ত পরিমাণে সানব্লক ব্যবহার করা। আঙুলের একটা কোর ভরে সানব্লক বা সানস্ক্রিন ক্রিম নিতে হবে। খুব অল্প বা নামমাত্র নিলে হবে না। তার পর ত্বকে লাগাতে হবে। যাঁরা খুব অল্প সময় রোদে থাকেন, নিজস্ব গাড়িতে চলাচল করেন এবং গাড়ি থেকে নেমেই অফিসে কিংবা বাসায় ঢুকে যান, তাঁরা এসপিএফ ৩০+ সানব্লক ব্যবহার করলেই হবে। যাঁরা বেশ খানিকটা সময় রোদে থাকেন, যাঁদের ত্বকে টান পড়ে দ্রুত, তাঁরা এসপিএফ ৫০+ সানব্লক ব্যবহার করতে হবে। 

যাঁদের ত্বক খুব শুষ্ক তাঁরা সানব্লক ব্যবহারের আগে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নেবেন। যাঁরা ত্বকের পরিপূর্ণ যত্ন চান, তাঁরা আগে সিরাম ব্যবহার করবেন। তার পর ময়েশ্চারাইজার। এর পর সানব্লক ব্যবহার করবেন। তখনই বাইরে গেলে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে।

চোখের সুরক্ষায় সানগ্লাস
কড়া রোদে বাইরে গেলে আলোতে চোখ প্রসারিত করা যায় না। চোখ সংকুচিত হয়ে থাকে। সানগ্লাস পরা থাকলে সে ভয় থাকে না। এ ছাড়া চোখের রেটিনা ও কর্নিয়া সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা পায়।

পাতলা পোশাকে আরাম
এই সময়ে পরার জন্য সুতি, ভিসকস, লিনেন, মার্সেরাইজড কটন, জর্জেটের পোশাক নিয়ে এসেছে পোশাকের ব্র্যান্ডগুলো। গরমে ক্যাজুয়ালি পরার জন্য লা রিভ কিছু সাব ক্যাটাগরির পোশাক নিয়ে এসেছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ডিজাইনার মারুফা শিল্পী। গরমে পরার জন্য লং টিউনিক, শর্ট টিউনিক, লং টপস, মিড টপস, টিউনিক উইথ শ্রাগ আনা হয়েছে। লং টিউনিকের লেংথ লম্বা। এসব টিউনিকগুলোয় ঘের থাকে। শর্ট টিউনিকগুলোয় এ লাইন, প্রিন্ট প্যাটার্ন টিউনিক করা হয়েছে। শর্ট টিউনিকের মধ্যে আছে বেলুন টপস, প্লেইন টপস ইত্যাদি। টিউনিক, টপস ও শ্রাগ পরে অফিস, ক্লাস, বন্ধুদের আড্ডায় যাওয়া যায়। যাওয়া যায় জাঁকজমক নিমন্ত্রণেও।

টিউনিক উইথ শ্রাগ পোশাকটি গরমে পরা যায়। এটি ফ্যাশনেবল তো বটেই। ঝামেলাহীনও। কারণ শ্রাগের সঙ্গে আলাদা ওড়না না নিলেও হয়। লা রিভে টপসের সঙ্গে সংযুক্ত শ্রাগের পাশাপাশি সিঙ্গেল শ্রাগ আছে বলেও জানান মারুফা শিল্পী। টি-শার্ট, টপস কিংবা স্লিভলেস কামিজের সঙ্গে পরা যায় সিঙ্গেল শ্রাগ।

হাতার ডিজাইন: ক্যাজুয়ালি যেসব টিউনিক রয়েছে, সেসবের হাতায় রয়েছে বৈচিত্র্য। ল্যান্টন, কাফ, কোয়ার্টার, এ লাইন, বিলো, কিমোনো হাতা ব্যবহার করা হয়েছে। টিউনিকভেদে হাতার ভিন্নতা অন্যান্য পোশাক থেকে আলাদা করেছে।

গরমে উপযোগী কাপড়: এ সময়ের জন্য মার্সেরাইজড কটন, ভিসকস, জ্যাকার্ড, স্যাটিন ফেব্রিক ব্যবহার করা হয়েছে। গরমের পোশাকে ভিসকস কাপড় বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। এর কারণ হলো, এই কাপড় খুব বেশি পাতলা নয়। আবার পরে আরামদায়ক। ভিসকস কাপড়ের ঘাম শোষণের ক্ষমতা ভালো।

পার্টি লুকের জন্য: পার্টিতে যাওয়ার পোশাকের জন্য ক্রেপ, অরগাঞ্জা, স্যাটিন ফেব্রিক ব্যবহার করা হয়েছে। জর্জেট ও পলিয়েস্টার ফেব্রিকের ব্যবহারও বেড়েছে পোশাকে।

থিম ও রং যেমন: গরমে পরার জন্য লা রিভে যেসব পোশাক আছে তার থিম ‘র’। অর্থাৎ প্রকৃতির অনুষঙ্গ থেকে নেওয়া সঠিক রং। এই সময়ের উপযোগী রংগুলো হলো সাদা, প্যাস্টেল, আকাশি, কমলা, হলুদ, মেরুন। আরডি টোন, বেইজ টোন, মিন্ট শেড, পেল পিঙ্ক বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। পোশাকে পাতা, শুকনা পাতা, মার্বেল, পাথরের টেক্সার বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। এর পাশাপাশি ফ্লোরাল, জিওম্যাট্রিক মোটিফ ব্যবহার করা হয়েছে।

পরার পর পোশাক ময়লা হলে সঠিকভাবে নিয়ম মেনে ধুতে হবে। ভিসকস, মার্সেরাইজড কটন, জর্জেট হাতে ধোয়া যাবে আবার মেশিনেও ধোয়া যাবে। যেসব পোশাকে কারচুপি কাজ থাকে কিংবা ভারী কাজ থাকে, সেসব পোশাক মেশিনে না ধোয়া ভালো। সিল্কের পোশাক অবশ্যই ড্রাইওয়াশ করতে হবে।

গরমে আরামদায়ক পোশাক তো পরতেই হবে। এর সঙ্গে বাইরে গেলে সানগ্লাস পরার পাশাপাশি সঙ্গে ছাতা রাখতে হবে। এতে কড়া রোদে কম ক্লান্ত হবেন।

যাঁরা নিয়ম করে রোজ হাঁটেন, ব্যায়াম করেন তাঁরা সেগুলো ভোর কিংবা সকালের দিকে সেরে নিতে পারেন। কড়া রোদে বাইরে বেশি হাঁটাহাঁটি করা, অধিক কায়িক শ্রম করা বয়স্কদের জন্য ক্ষতিকর বলে জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা অনুষদের ডিন এবং প্রাক্তন অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ ডাক্তার শুভাগত চৌধুরী। রোদে যাওয়ার আগে খুব বেশি তেল-মসলা, ভাজা জাতীয় খাবার না খাওয়া ভালো। এর চেয়ে বরং পানি ও পানি জাতীয় খাবার, ঘোলের শরবত, ডাবের পানি ইত্যাদি পান করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।

এ সময় অবশ্যই রোজ স্নান করতে হবে। বাইরে গেলে পানির বোতল সঙ্গে রাখতে হবে। খুব প্রয়োজন না হলে শু না পরে পায়ে চপ্পল পরা যেতে পারে। নয়তো কড়া রোদ ও গরমে হিটস্ট্রোক হতে পারে। ঠিক দুপুরে বাইরে না যাওয়াই ভালো বলে যোগ করেন শুভাগত চৌধুরী।

রোদে যাওয়ার অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে আঙুলের একটা কর ভরে সানব্লক ব্যবহার করতে হবে। যাঁরা অল্প সময় রোদে থাকেন তাঁরা এসপিএফ ৩০+ সানব্লক ব্যবহার করলেই হবে। যাঁরা বেশ খানিকটা সময় রোদে থাকেন, যাঁদের ত্বকে টান পড়ে দ্রুত, তাঁদের এসপিএফ ৫০+ সানব্লক ব্যবহার করতে হবে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com