
এসি ব্যবহারে সতর্কতা
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আজহার মাহমুদ

কোনো ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া এসি ব্যবহার করা বিপজ্জনক। দীর্ঘদিন এসি বন্ধ রাখা হলেও কনডেনসারে ধুলা জমে। তা থেকে তাপ ও চাপ বেড়ে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই নির্দিষ্ট সময় পরপর চেকআপ ও সার্ভিসিং করাতে হবে। লিখেছেন আজহার মাহমুদ।
দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে যা করবেন: ভালো মানের এবং সঠিক মান ও স্পেকের পাওয়ার ক্যাবল ব্যবহার করতে হবে। দক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে এসির কনডেনসার নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। বাজার থেকে এসি কেনার সময় কমপ্রেসারে রেফ্রিজারেন্ট আর৪১০-এ গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, নিশ্চিত হয়ে নেবেন। হাই টেম্পারেচার ও হাই প্রেসার পরীক্ষা করে নিতে হবে। এসির ভেতরের পাইপের কোথাও ব্লক আছে কিনা, তা নিয়মমাফিক পরীক্ষা করতে হবে। এতে করে এসি থেকে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য একনাগাড়ে কখনোই ৮ ঘণ্টার বেশি এসি চালানো উচিত নয়। এ ছাড়া আউটডোর মেশিন এমন স্থানে বসাতে হবে, যেন পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে। অনেক পুরোনো বা নিম্নমানের এসির ব্যবহার করা উচিত নয়। এ ছাড়া রুমের আকার অনুযায়ী সঠিক ক্ষমতার এসি ব্যবহার করতে হবে।
দীর্ঘ সময় পর বন্ধ এসি চালু করতে গেলে এসি থেকে শব্দ হতে পারে। এমনকি পানিও পড়তে পারে। এমনটা হলে অবশ্যই এসি বন্ধ রাখতে হবে এবং দ্রুত সার্ভিসিং করাতে হবে। এ ছাড়াও এসি অনেক দিন বন্ধ থাকলে এর কুলিং বা ঠান্ডা করার ক্ষমতা কমে যায়। এ ক্ষেত্রে এসির ভেতরের নেট খুলে ডাস্ট ক্লিনিং করে নিতে হবে। কুলিং যদি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে এসির ভেতরে গ্যাস ফুরিয়ে গেছে। পরবর্তী সময়ে গ্যাস রিফিল করে নিতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসি দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ হলো রক্ষণা-বেক্ষণের অভাব। শীতের পুরোটা সময় ধরেই এসি বন্ধ থাকে। তাই গরমের শুরুতেই এসি চালানোর আগে বাড়তি যত্ন নেওয়া উচিত। গরমের শুরুতে এসি চালানোর আগে অবশ্যই এসির মেরামত করতে হবে। পেশাদারদের মাধ্যমে চেকআপ ও সার্ভিসিং করিয়ে নিতে হবে। এসির এয়ার ফিল্টারে কোনো ময়লা আছে কিনা কিংবা বৈদ্যুতিক সংযোগ, সকেট, ফিল্টার ঠিক আছে কিনা সেসব বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
এসির মধ্যে ধুলা জমে গেলে তা অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কনডেনসারে ময়লা জমলে এসি তাপ বাইরে বের করতে পারে না। এতে তাপ ও চাপ বেড়ে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি তৈরি হয়। তবে বাংলাদেশে এসি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বাহ্যিক কারণকেই প্রধান বলে মনে করা হয়। গ্যাসের লাইনে ছিদ্র কিংবা রুমে থাকা দাহ্য পদার্থ থেকে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে এসির যত্ন নেওয়া ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি কক্ষে যাতে কোনো দাহ্য পদার্থ না থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এসি স্থাপন ও সংযোগ ব্যবস্থায় ত্রুটি, অতিরিক্ত তাপ, ময়লা ও দূষণ, পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট এবং আশপাশে দাহ্য পদার্থের উপস্থিতি এসবই সাধারণত এসি দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
সারাবিশ্বেই এসি থেকে দুর্ঘটনায় তথা অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অগ্নিনিরাপত্তা সংস্থার তথ্য অনুসারে, এসিজনিত দুর্ঘটনায় তাদের দেশে বছরে ২০ জনের মৃত্যু হয় আর ক্ষতি হয় আট কোটি টাকার বেশি সম্পদের।
বাংলাদেশেও এসির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুসারে, প্রতি বছরই এসি থেকে সংঘটিত আগুন বা বিস্ফোরণের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০২০ সালে এসি থেকে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ছিল ৩২। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯টি। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে এসি থেকে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ৪৮টি।
ফাল্গুন মাস হলেও বেশ গরম পড়েছে। শীতকালে প্রায় দু-এক মাস খুব একটা এসি চালানো হয় না। গরম পড়তেই হুট করে যাঁরা এসি ব্যবহার করছেন, তাঁদের কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। নয়তো যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com