
প্রজন্মের প্রেরণা বঙ্গবন্ধু
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২৩ । ১১:৩৭ | প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম এই ভূখণ্ডের মানুষের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। তাঁহার জন্ম দিবসটি সেই জন্যই আমরা গভীর শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করি। শতাব্দীকাল পূর্বে গোপালগঞ্জের এক নিভৃত পল্লিতে যেই শিশুটা প্রথম চক্ষু মেলিয়া তাকাইয়াছিল; সেই শিশু ধাপে ধাপে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা-দূরদর্শিতা-বিচক্ষণতার মধ্য দিয়া যেভাবে উপমহাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্রের পরিবর্তন ঘটাইয়াছিল, তাহা অনেকের কাছে বিশ্বের বিস্ময়। শুধু উপমহাদেশ নয়, বিশ্বের শোষিত মানুষের পক্ষে তাঁর অবস্থান ছিল দৃঢ়। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার কোটি কোটি মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার নাম বঙ্গবন্ধু। সেই জন্যই বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিবস একই সঙ্গে আমাদিগের নিকট জাতীয় শিশু দিবস।
বঙ্গবন্ধু শিশুদিগের ভালোবাসিতেন। তাহাদিগের লইয়া তিনি জন্ম দিবস পালন করিতেন। সকল শিশুর শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতে তিনি যুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ এবং তাহা সকলের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করিয়া এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ লইয়াছিলেন। এই বৎসর দিবসটির প্রতিপাদ্য– ‘স্মার্ট বাংলদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদিগের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন।’ বস্তুত বাংলাদেশের সমৃদ্ধির ভিত তিনিই রচনা করিয়া দিয়াছিলেন। বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক এক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন। তাঁহার স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা গড়ার পথে দেশ এরই মধ্যে অনেক দূর অগ্রসর হইয়াছে। মাত্র সাড়ে তিন বৎসরের রাষ্ট্র পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে যে উচ্চতায় লইয়া গিয়াছিলেন; আজকের বাংলাদেশ সেই শক্তিশালী ভিতেরই বহিঃপ্রকাশ।
প্রেরণার আধার হিসাবে বঙ্গবন্ধুই পথ প্রদর্শন করিয়াছেন। তিনি আমাদিগের শক্তি ও সাহসের উৎস। তাঁহার দর্শন, মানবিকতা ও রাজনীতি ক্রমে শক্তিশালী হইতেছে। আমাদের প্রত্যয়– বঙ্গবন্ধু কোনো নির্দিষ্ট দলের নন। তিনি বাংলাদেশেরই অপর নাম। বঙ্গবন্ধু যে প্রত্যয় লইয়া বাংলাদেশকে অগ্রসর করিবার সূচনা করিয়াছিলেন; আমাদিগের দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশি চক্রান্তে তিনি সপরিবারে ঘাতকদিগের হাতে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হইলে সেই স্বপ্নযাত্রা মাঝপথে থমকিয়া দাঁড়ায়। তবে স্বস্তির বিষয়, বাংলাদেশ আজ জাতিসংঘ স্বীকৃত একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র এবং ঘাতকের বুলেট বঙ্গবন্ধুকে কাড়িয়া না লইলে বাংলাদেশ নিশ্চয় বহু পূর্বেই এই স্বীকৃতি পাইত।
বর্তমানে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত দল এবং তাঁহার কন্যার হস্তে পরিচালিত হইতেছে। একই সঙ্গে তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালনকারী সরকার দেশকে উন্নতির উচ্চ শিখরে লইয়া গিয়াছে– তাহা বিশ্ববাসীও স্বীকার করে। বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথে গণতান্ত্রিক ধারায় সরকার দেশ পরিচালনা করিতেছে। এই বৎসর রাজনৈতিক দিক হইতে গুরুত্বপূর্ণ এক সময়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিবস উদযাপন করিতেছি। বৎসরান্তে অনুষ্ঠিতব্য আগামী সংসদ নির্বাচন লইয়া এই সময়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি। আমরা বিশ্বাস করিতে চাহি, বঙ্গবন্ধু যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা করিয়া গিয়াছেন; তাঁহাকে অনুসরণে বর্তমান সরকারও জাতির এই ক্রান্তিকালে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে।
বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথেই জাতির মুক্তি ও সমৃদ্ধি। বাঙালির পরিচয় উদ্ভাসিত করিয়াছে বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ। তাঁহার সংগ্রাম সার্থক হইয়াছে। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদশ স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে পরিচয় লাভ করিয়াছে। আমাদিগের অর্জন কোনো দিক হইতেই কম নহে। কিন্তু ইহা লইয়া আত্মতুষ্টির সুযোগ নাই। বঙ্গবন্ধু বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়িবার প্রত্যয় ব্যক্ত করিয়াছিলেন; তথায় আমাদিগের অবস্থান কতটা প্রত্যাশিত? এখনও সকল শিশু কি শিক্ষার আওতায় আসিয়াছে? লক্ষ লক্ষ পথশিশুই বা পথ পাইবে কবে?
হতাশার মাঝেও আশার আলো বঙ্গবন্ধু। তাঁহার জীবন ও কর্ম আমাদিগের সকল সংকট উত্তরণে সহায়ক হইতে পারে; তজ্জন্য তাঁহার জীবনী চর্চা সমাজের সর্বস্তরে প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবসে শিশু-কিশোর, যুবক-বৃদ্ধ– আমরা সবাই প্রত্যাশা করি, রাজনীতিবিদরা শপথ গ্রহণ করুন দেশ গঠনের। এই দিবসে সমকালের পক্ষ হইতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই; দেশবাসীকেও আমাদিগের শুভেচ্ছা।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com