খাল দখল করে বাড়ি-বাঁধ

অন্তত ৪০টি বাঁধ দিয়ে দখল করেছেন প্রভাবশালীরা

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ১৮ মার্চ ২৩ । ১৫:১১ | প্রিন্ট সংস্করণ

মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)

সাটুরিয়ার উত্তর কাওন্নারা খাল দল করে নির্মাণ করা বাড়ি ও বাঁধ - সমকাল

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া সিনেমা হল সড়কের দুই কিলোমিটার খালের ওপর বাঁধ নির্মাণ করে দখল করছেন দু’পাড়ের বসবাসকারীরা। পানি প্রবাহ বন্ধ করে নির্মাণ করেছেন বাড়ি ও পাকা স্থাপনা। ফলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজারো কৃষক পানি নিষ্কাশন নিয়ে বিপদে পড়েছেন। অবৈধ দখলকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ মুখ খুলতেও সাহস পাচ্ছেন না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় খালটি দখল হচ্ছে। এর আশপাশ দিয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চলাচল করেন। মৌখিকভাবে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি। ভূমি অফিসের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী বিষয়টি জানলেও তাঁরা দখলদারের কাছ থেকে সুবিধা পেয়ে থাকেন বলে অভিয়োগ রয়েছে। অবশ্য কাওন্নারা এলাকায় একটি বাঁধ নির্মাণকাজ সম্প্রতি বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

জানা গেছে, পূর্ব কুষ্টিয়া থেকে উত্তর কাওন্নারা দিয়ে সাটুরিয়ার চন্দ্রাখালী নদীতে মিশে গেছে শত বছরের খালটি। এক সময় সড়ক পথে চলাচলের ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বর্ষা মৌসুমে মানুষ ছোট-বড় পালতোলা নৌকায় পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া ও চলাচল করত। কৃষকের শস্য উৎপাদনে এ খালের ভূমিকা ছিল। সেই খাল দখলদারের কবলে পড়ে হারিয়েছে গতি।

কুষ্টিয়া গ্রামের মো. আতাউর রহমান ও কাওন্নারা গ্রামের মো. আক্কাছ আলী বলেন, বৃষ্টি বা বর্ষা হলে নিচু জমির পানি এ খাল দিয়ে প্রবাহিত হতো। অনেক সময় কৃষকের আবাদি জমিতে পানির প্রয়োজন হলে খাল থেকে সেচ দিতেন। খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ফসল ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় থাকতে হয় কৃষকদের।

সরেজমিন জানা গেছে, সাটুরিয়া সিনেমা হল সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটির দু’পাশে বসবাসকারীরা এক সময় বাশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতো। এর পর তাঁরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাটি ফেলে ভরাট করেন। দুই কিলোমিটার খালের মধ্যে প্রায় ৪০টি বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক স্থান পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। ফলে খালের পানি র্দুগন্ধ হয়ে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।

খালটি দখল হওয়ায় বিপদে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। এটি দিয়ে বালিয়াটি, হাজীপুর, কুষ্টিয়া, উত্তর কাওন্নারা ও সাটুরিয়ার কৃষকরা বর্ষা মৌসুমে পানি বের করে দিতেন। ফলে সময় মতো তাঁদের শস্য ফলাতে পারতেন। তবে প্রায় ২০ বছর ধরে খাল দিয়ে পানি ঢুকতে না পারায় ফসল উৎপাদন ঠিক মতো করতে পারছেন না। কৃষকদের দাবি, খালটি উদ্ধার করে খনন করতে হবে।

সাটুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সামাদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি খাল দখল করে বাড়ি করেছেন। মোকাদছ আলী, শাহ আলম ও তানি আলমরা বাঁধ দিয়ে আটকে দিয়েছেন। এতে জমা পানি দূষিত হয়ে রোগবালাই দেখা দিয়েছে ও মশার উপদ্রব বেড়েছে।

এ বিষয়ে আব্দুস সামাদ মিয়া বলেন, একসময় এ খালে স্রোত ছিল। এতে তাঁদের জমি ভেঙে খাল প্রসারিত হয়েছে। ওই জায়গা ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

ইউপি সদস্য মো. শহর আলী বলেন, বাঁধ দেওয়ায় ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) একাধিকবার বলা হয়েছে। এর পরও কোনো কাজ হয়নি। দখলদাররা দখল করেই চলেছে।

সাটুরিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন পিন্টু বলেন, সিনেমা হল সড়কের খালটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটিতে বাঁধ দিয়ে দখল করায় কৃষকরা সমস্যায় পড়েছেন। অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে খালটি ফের চালু করতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আরা বলেন, খালের ওপর অবৈধ বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খালটি কে কে দখল করে বাঁধ ও বাড়ি নির্মাণ করেছে, তা সার্ভে করার জন্য সহকারী তহশিলদারকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com