
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গেরিলাদের কৃতিত্ব চাপা পড়েছে: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২৩ । ১৯:১৩ | আপডেট: ১৮ মার্চ ২৩ । ১৯:১৩
সমকাল প্রতিবেদক

বাংলা একাডেমিতে ‘বিদ্রোহী মার্চ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ছবি: সমকাল
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ইতিহাসে এমনভাবে উপস্থাপিত হয়েছে যে তাতে অনেক সময় গেরিলা বাহিনীর কৃতিত্ব ঢাকা পড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের সব কৃতিত্ব নিয়ে গেছে সেনাবাহিনী। আমরা যারা গেরিলা যুদ্ধ করেছি, তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর যুদ্ধের কোনো তুলনা চলে না। গেরিলা যোদ্ধারা যেভাবে যুদ্ধ করেছেন, যেভাবে জীবন দিয়েছেন দেশের জন্য সিভিলিয়ানরা, তাতে তারা ও তাদের সহযোগীরা কেন বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব পাবেন না? সেটি যে এখন করা যাবে না তা নয়। আমি এটির দাবি অতীতেও করেছি, এখনও করছি।’
আজ শনিবার বাংলা একাডেমিতে ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর আয়োজিত ‘বিদ্রোহী মার্চ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছিল, যুদ্ধে কার কী কৃতিত্ব বা কাজের ফিরিস্তি কী, তা যেন লিখিত আকারে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা সিভিলিয়ানরা তখন এ নিয়ে সেভাবে ভাবিনি৷ বলতেই হয়, ওই সময়ে সুযোগের বিকৃতি সাংঘাতিকভাবে হয়েছে৷
অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার কবির রচিত ‘আমার একাত্তর’ ও ‘আমাদের একাত্তর’ শিরোনামে দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। এ সময় আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আ ক ম মোজাম্মেল হক পরে ইতিহাসবিদদের উদ্দেশে বলেন, সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে যে ইতিহাস লেখা হবে, তা ফরমায়েশি। ওই ফরমায়েশি ইতিহাসে সঠিক তথ্য উঠে আসে না। ইতিহাস লিখতে হবে নির্মোহভাবে। পরে সেসব ইতিহাস একীভূত করে সত্যিকারের একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করা যেতে পারে।
বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, তারা এখনও স্বাধীনতা মেনে নেয়নি। তারা মার্চ মাসকে স্বীকার করে না। একাত্তরের ১৭ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের যে প্রথম সরকার গঠিত হয়েছিলো, জিয়াউর রহমান বলেছিলেন ওই সরকারের অধীনে তিনি যুদ্ধ করবেন না। তিনি ওয়ার কাউন্সিল গঠনের কথা বলেছিলেন।
এ সময় অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে কেউ বলেন জনযুদ্ধ, কেউ বলেন মুক্তিযুদ্ধ, তবে দুটির সংজ্ঞা মেলে না। জনযুদ্ধের সংজ্ঞায় গেলে ওই যুদ্ধকে মুক্তিযুদ্ধ বলা যাবে না।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ ইস্যুতে জেনারেল এম এ জি ওসমানী এবং এ কে খন্দকার জাতিকে বিভক্ত করে গেছেন। সেপ্টেম্বর-আগস্ট মাসে যারা বাইরে থেকে দেশে এসেছেন, যারা গান করেছেন, খবর পড়েছেন তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু যারা সম্মুখ সমরে গেছেন, তারা তো কোনো সনদ বা সুযোগ সুবিধাপ্রাপ্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধে যাননি। তাদের মধ্যে যারা খেতাবপ্রাপ্ত নন, তাদের যুদ্ধটা তাহলে কোথায় যাবে?
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com