
জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সরানো নিয়ে বিতর্ক
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ১৯ মার্চ ২৩ । ০৫:১৬ | প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ছবি: ফাইল
জাতীয় জাদুঘরের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের প্রতীকী ‘মুক্তির অগ্নিপুরুষ’ ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলেছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সরানোর কারণ নিয়ে ভাস্কর এবং জাদুঘর কর্তৃপক্ষের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ভাস্কর্যটি সরানোর বিষয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সিদ্ধান্ত ছিল, এতে বঙ্গবন্ধুর অবয়বের যথাযথ প্রতিফলন হয়নি। এ ছাড়া গত বছর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ভাস্কর্যটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সেটি মেরামত করে বর্তমানে স্টোর রুমে রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে, ভাস্কর্যটির ভাস্কর উত্তম ঘোষের দাবি, তাঁর ভাস্কর্যটি দর্শকনন্দিত হলেও এটা নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ফাইবার দিয়ে তৈরি ভাস্কর্য সহজে ভাঙে না। এটা ঝড়ে ভাঙার কথা নয়। কেউ কোপ দিয়ে ভাস্কর্যের হাত কেটে ফেলেছে। জাদুঘর কর্তৃপক্ষের আহ্বানে তিনি সেটি মেরামতও করেছেন।
এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য উত্তম ঘোষকে চিঠি দেয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে তারা জানায়, ‘ভাস্কর্যটিতে বঙ্গবন্ধুর মুখাবয়ব, বিশেষ করে ৭ মার্চের ভাষণের অভিব্যক্তি, ভাস্কর্যটির গুণগত মান, নান্দনিকতা ও শিল্পমান একেবারেই সন্তোষজনক নয় বিধায় এটি জাদুঘরের জন্য সংগ্রহ বা জাদুঘরের কোনো স্থানে প্রদর্শন মোটেই উপযুক্ত নয়।’
প্রত্যুত্তরে নিজের অবস্থান জানিয়ে জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন জানিয়ে ভাস্কর বলেন, আমার দেওয়া চিঠির জবাব আমি পাইনি। তাই ভাস্কর্য সরাইনি। পরে আমাকে গত বছরের ২৪ অক্টোবর জানানো হয়, ঝড়ে ভাস্কর্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাকে মেরামতের জন্য ডাকা হয়। আমি অনেক কষ্টে সেটি মেরামতও করেছি। এর পর তারা বলল, এটি পুনঃস্থাপন করতে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর অনুমতি লাগবে। প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। তবে এখনও সেটি স্থাপন করা হয়নি।
এ বিষয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ সমকালকে বলেন, ভাস্কর্য সরানো হয়নি, এটি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই মেরামত করে স্টোরে রাখা হয়েছে। এটি পুনরায় স্থাপন করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দিয়েছিলাম, তারা এটার বিপক্ষে মতামত দিয়েছে, এটা যেন আমরা এখানে পুনঃস্থাপন না করি। এটা যথাযথ মানসম্পন্ন হয়নি। তাই আপাতত এটি পুনঃস্থাপনের চিন্তা নেই।
জানা যায়, ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী আয়োজিত হয়। সেখানে উত্তম ঘোষের
‘মুক্তির অগ্নিপুরুষ’ ভাস্কর্যটি প্রদর্শিত হয়। আয়োজনে ভাস্কর্যটি প্রশংসিত হলে শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকে এটিকে জাদুঘরে স্থায়ীভাবে রাখার জন্য পরামর্শ দেন। ভাস্কর ও জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে ভাস্কর্যটি উপহার দিতে চান বলে জানান। পরে ভাস্কর্য সেখানেই ছিল।
ভাস্কর্যটি নিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভায় একটি কমিটি করা হয়। কমিটিতে শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুন নবী, ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন ছিলেন।
কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ভাস্কর্যটি কাজের বিচারে মাঝারি মানের হয়েছে, খারাপ হয়নি। তবে এটি জাদুঘরে রাখা হবে, এর অবস্থান, সঠিক পরিমাপসহ যাবতীয় অনেক বিষয় আছে। ভাস্কর্যটি ফাইবারে তৈরি। ফলে ফাইবারের তৈরি ভাস্কর্য বেশিদিন স্থায়ী হয় না। এটি রঙের উজ্জ্বল্য নষ্ট হয়ে যায়। এটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। জাদুঘরে একটি কাজ হবে, সেখানে প্রতিযোগিতামূলক হলে আরও ভালো আসতে পারত। অন্যদেরও তো সুযোগ দেওয়া উচিত। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা মতামত দিয়েছি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নেওয়া হোক।
তিনি আরও বলেন, সঞ্জয় পাল নামের আরেকজন শিল্পী কাজটি তাঁর বলে দাবি করেছেন। তিনি তাঁর পক্ষে বিভিন্ন প্রমাণও দেখিয়েছেন। আমরা তো এতদিন এই ধারায় আছি, উত্তম ঘোষ অল্প সময়ে এত ভালো ভাস্কর্য বানাতে পারবেন বলে মনে হয়নি। ফলে প্রকৃত ভাস্কর্য নির্মাতা নিয়ে একটি ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে উত্তম ঘোষ বলেন, তাঁর সঙ্গে ভাস্কর্য নির্মাণে কাজ করেছেন সঞ্জয় পাল। পরে তাঁকে বিভিন্ন কাগজপত্র দিয়ে ভাস্কর্য দাবি করতে পাঠানো হয়েছে। এই দাবি সঠিক নয়।
জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ঢাবির প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এদিকে জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেছেন, ভাস্কর্যটি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশে সেটি স্টোর রুমে রাখা হয়েছে।
জাদুঘরের সচিব গাজী মো. ওয়ালি উল হক বলেন, শিল্পী সমাজের লোকজন বলেছেন, এটি বঙ্গবন্ধুকে যথাযথভাবে প্রতিফলন করে না। তাই বোর্ড বলেছে সরিয়ে ফেলতে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এটি সরানো হয়েছে। আমরা তাঁকে চিঠিও দিয়েছি।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com