‘পাকা ঘরে এসে ভয়ে থাকতে হয়’

মুন্সীগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্প

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২৩ । ০৯:৪৩ | আপডেট: ১৯ মার্চ ২৩ । ০৯:৪৯

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

দেওয়ানকান্দি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের খুঁটিতে ফাটল - সমকাল

‘যেভাবে ফাটল ধরেছে, বাতাস ছাড়লে যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের থাকার জন্য ঘর দিল কিন্তু দুর্নীতির কারণে ঘর ভালো হলো না। এই ঘর দিয়ে লাভ কী হলো?’ কথাগুলো বলছিলেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬৬ নম্বর ঘরের বাসিন্দা শিলা বেগম।

সুখের খোঁজে ভূমি ও গৃহহীন মুক্তা আক্তার আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে ওঠেন। কিন্তু দুই বছর পার না হতেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তিনি। তাঁর বসবাসরত ১৪ নম্বর ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে পলেস্তারা। গত বছর সিত্রাং ঝড়ে ঘরের চাল আলগা হয়ে আছে।

এমন পরিস্থিতিতে ভালো নেই বলে জানান মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়নের দেওয়ানকান্দি এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মুক্তা আক্তার।

শিলা বেগম ও মুক্তার আক্তারের মতো শঙ্কা নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করছেন সুবিধাভোগীরা।

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য জমি ও গৃহ প্রদান’ কার্যক্রমের আওতায় এসব ঘর নির্মাণ করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে উপজেলার দেওয়ানকান্দি এলাকায় ৭৭টি ঘর নির্মাণ করে উপকারভোগী পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ঘরপ্রতি নির্মাণ ব্যয় হয় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকল্পের পূর্ব পাশের ৭৬ নম্বর ঘরের বারান্দার চাল ও পিলার গত বছরের সিত্রাং ঝড়ে ভেঙে পড়ে আছে। দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে অধিকাংশ ঘরের। ১৪ নম্বর ঘরের পিলারে ফাটল রয়েছে। বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পিলারটি, যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। অনেক ঘরের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। এ ছাড়া ৯টি ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়।

প্রকল্পের বাসিন্দা মো. শাহীন জানান, পূর্বপাশের ১২টি ঘরের মধ্যে ৭টি ঘরে নির্মাণের পর থেকে কেউ থাকেন না। তাঁরা এখানে নিজেদের নামে ঘর নিলেও বসবাস করেন নিজ বাড়িতে।

৪ নম্বর ঘরের শেফালি বেগম বলেন, ‘মাটির ঘরে থাকতে আমাদের ভয় না করলেও এখন পাকা ঘরে এসে ভয় করছে। গত বছর ঝড়ের কবলে পড়ে পূর্ব দিকের দুটি ঘরের চাল উড়ে যায় এবং পিলার ভেঙে গেছে। ঝড়ের সময় আমি এবং আমার স্বামী ঘরের চাল ধরে বসেছিলাম, যাতে চাল উড়ে না যাই। আমাদের ঘরে যে ফাটল দিয়েছে, তাতে যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।’

৬৭ নম্বর ঘরের আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘরে বালুর জন্য থাকা যায় না। চিমটি দিলে ঘরের পলেস্তারা খুলে পড়ে যায়। তিনটি দেড় ফুটের চাকা দিয়ে সেপটিক ট্যাংক করায় প্রতি মাসেই শৌচাগার মলমূত্রে ভরে যায়। পূর্বপাশের ১২টি ঘরের জন্য একটি কল ছিল কিন্তু সেটাও চুরি হয়ে গেছে।

রসমালা বেগম, রাশিদা বেগম, আয়শা বেগম, ফাতেমা বেগমসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেক বাসিন্দা জানান, পরিমাণ মতো সিমেন্ট না দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। পিলারে রড নেই। এখন দেয়াল ও পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাতাস ছাড়লে ঘরে থাকতে ভয় করে। মাটির ঘরে ছিলাম, কিন্তু এতটা ভয় পেতাম না। এখন পাকা ঘরে এসে ভয়ে থাকতে হয়। ঘরে ওঠার পর থেকেই এ রকম ফাটল দিন দিন বাড়ছে। যে কোনো সময় ঘর ভেঙে পড়তে পারে।

জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসূল জানান, যেসব ঘরে ফাটল ধরেছে, পলেস্তারা খসে পড়ছে, সেগুলোর খোঁজ নেওয়া হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু করার আছে সবটুকু করা হবে। যেসব ঘরে মানুষ থাকে না, তাদের নাম বাতিল করে অন্যদের দেওয়া হবে। যেখানে টিউবওয়েলের ব্যবস্থা নেই, সেখানে টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করা হবে।’

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com