সুদিন ফিরছে বিজ্ঞানে

বিবিএ’র রমরমা আর নেই

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সমকাল প্রতিবেদক

ছবি-সংগৃহীত

দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা হচ্ছে নতুন বিভাগ। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। একই সঙ্গে প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে শিক্ষার্থীও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। বিপরীতে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক দশক আগেও চাকরির বাজারে বিবিএ-এমবিএর চাহিদা ছিল বেশি। সেই চাহিদার কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাণিজ্যের বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তির আগ্রহ বেড়ে যায়। এ জন্য তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসব বিষয় রমরমা ছিল। সময়ের সঙ্গে তাতে পরিবর্তন আসছে। এখন বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে ভর্তি হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতেও শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার বেড়েছে। তবে বেসরকারি পর্যায়ে আইনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে।

 বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বাণিজ্যের বিষয়ে এক দশকে শিক্ষার্থী কমেছে ৬৯ শতাংশ। বিপরীতে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল এবং কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিষয়গুলোতেও শিক্ষার্থী বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ করে।

চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এক দশক আগেও ব্যবসায় প্রশাসনে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ছিল বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই অনুষদে তখন শিক্ষার্থী ছিল ৫ হাজার ১৪৩ জন। এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে শিক্ষার্থী আছে মাত্র ৮০৫ জন। বিপরীতে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ৫৩৬ জন। এখন শিক্ষার্থী বেড়ে হয়েছে ৮৩০ জন।

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে শিক্ষার্থী ছিল ৫ হাজার ৪৪ জন। বর্তমানে এই অনুষদে শিক্ষার্থী আছে ১ হাজার ৬২৮ জন। বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদে শিক্ষার্থী ছিল ২ হাজার ১৯৭ জন। এই অনুষদে শিক্ষার্থী বেড়ে এখন ২ হাজার ৭৬০ জন।

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে শিক্ষার্থী ছিল ৪ হাজার ৬১৭ জন, এখন আছে এক হাজার ৪৪৩ জন। বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদে শিক্ষার্থী ছিল এক হাজার ১৮১ জন। এখন শিক্ষার্থী বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৩৭৩ জন।

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে শিক্ষার্থী ছিল এক হাজার ৬৫০ জন, যা এখন আছে ৫১৩ জন। বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদে শিক্ষার্থী ছিল এক হাজার ৬৫৩, এখন আছে ৯৫৭ জন।

ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটিতে এই অনুষদে শিক্ষার্থী ছিল ৯০০ জন, বর্তমানে আছে ৮৮৪ জন। বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদে শিক্ষার্থী ছিল ৫৩২ জন, এখন আছে এক হাজার ১১৫ জন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএসটিসি) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে শিক্ষার্থী ছিল ৮৪৭ জন, যা এখন আছে ২৪৯ জন।

শুধু দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদে শিক্ষার্থী বেড়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে একদশক আগে শিক্ষার্থী ছিল ১৫০ জন, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৫৭২ জন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদে শিক্ষার্থী ছিল ১৮ জন, বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ২৫৫ জন। এ ছাড়া পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে শিক্ষার্থী ছিল ৩৯৬ জন, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৫৫ জনে।  একদশক আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদে শিক্ষার্থী ছিল ৯২২ জন, যা এখন আছে ৩ হাজার ২৫০ জন।
চট্টগ্রামে বর্তমানে নয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ধারাবাহিকভাবে ব্যবসায় প্রশাসনে ভর্তির হার কমছে। ২০১৪ সালে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৮৫৪ জন। এরমধ্যে শুধু ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের শিক্ষার্থী ছিল ১৮ হাজার ৭৪৭ জন। বিপরীতে বিজ্ঞানে শিক্ষার্থী ছিল ২ হাজার ৩৬৯ জন, কলা ও মানবিকে ৪ হাজার ১৯১ জন, সামাজিক বিজ্ঞানে ৩৭৯ জন, আইনে ৬ হাজার ২০২ জন, ফার্মেসিতে এক হাজার ১৮ জন, প্রকৌশলে ৬ হাজার ৭৪৪ জন, সার্টিফিকেট কোর্স, ডিপেস্নামা কোর্স ও পোস্ট ডিপেস্নামা কোর্সের শিক্ষার্থী ছিল ২০৪ জন।

বর্তমানে নয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে শিক্ষার্থী রয়েছে ২৮ হাজার ৪৮১ জন। একদশকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী কমেছে ১১ হাজার ৩৭৩ জন। ব্যবসায় প্রশাসনে বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৬৫৭ জন। বিপরীতে বিজ্ঞানে শিক্ষার্থী রয়েছে এখন ৯ হাজার ৫৭৩ জন। এছাড়া কলা, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানে ৫ হাজার ৬৮৮ জন, আইনে ২ হাজার ২৬০ জন, ফার্মেসিতে ৬৪১ জন ও প্রকৌশলে ১ হাজার ৮৭৭জন।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com