চট্টগ্রামের ৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারি ভার্সিটিতে ২৮ হাজার শিক্ষার্থী

গত এক দশকে শিক্ষার্থী কমেছে সাড়ে ১১ হাজার # চাকরির সুযোগ কমায় বিবিএ এমবিএর দাপটও কমেছে # ডিগ্রি-সনদ উৎপাদন নয়, জ্ঞান সৃষ্টির দিকে নজর দিতে হবে

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

--

‘গ্রামের জ্ঞানকানন’ হিসেবে পরিচিতি নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস সমকাল

চট্টগ্রামে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষায় অনন্য অবদান রাখছে ৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার আধুনিক সব সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। গবেষণায়ও বেশ জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ সংখ্যার প্রতিবেদনগুলো তৈরি করেছেন আবদুল্লাহ আল মামুন

বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ সংখ্যা-২

চট্টগ্রামের তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সবগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। এক দশকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী কমেছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিষয় ও আসন বাড়ায় বেসরকারিতে শিক্ষার্থী কমছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এক দশক আগে চট্টগ্রামের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল প্রায় ৪০ হাজার। বর্তমানে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে শিক্ষার্থী আছে সাড়ে ২৮ হাজার।
চট্টগ্রামে বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে নয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো–বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চিটাগং।

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কত শিক্ষার্থী :সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানকার ৭টি অনুষদে শিক্ষার্থী হয়েছে ৭ হাজার ২০ জন। এরপরে পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিক্ষার্থী রয়েছে। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি অনুষদে শিক্ষার্থী ৫ হাজার ৬৯৫ জন।

তৃতীয় সর্বোচ্চ শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি অনুষদে শিক্ষার্থী আছে ৪ হাজার ৭৩৯ জন। শিক্ষার্থী অধ্যয়নের দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে আছে বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। ২০০১ সালে চট্টগ্রামের চন্দনাইশে প্রতিষ্ঠা হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদের শিক্ষার্থী রয়েছে ২ হাজার ৪০২ জন।
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ছাত্র সংখ্যার দিক থেকে দিক থেকে আছে পঞ্চম অবস্থানে। বিশ্ববিদ্যালয়টির মাত্র তিনটি অনুষদে শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে ২ হাজার ১৮১ জন। এরপরে ষষ্ঠ অবস্থানে আছে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অনুষদের দুই হাজার ১৩৮ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি অনুষদে এখন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে ১ হাজার ৬৩৮ জন। এছাড়া ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চিটাগংয়ের তিনটি অনুষদে শিক্ষার্থী রয়েছে ১ হাজার ৩৯জন।

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন অনুষদে কত শিক্ষার্থী :বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে (ইউএসটিসি) বিজ্ঞান অনুষদে শিক্ষার্থী রয়েছে ২ হাজার ৩৪৭ জন। ফার্মেসি অনুষদে শিক্ষার্থী আছে ৬৪১ জন। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ২৮৯ জন। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৭৭ জন। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদে শিক্ষার্থী রয়েছে ২ হাজার ৭৬০ জন, বাণিজ্য অনুষদে ১ হাজার ৬২৮, কলা ও মানবিকে ৮৭৪, সামাজিক বিজ্ঞানে ৭০৩ ও আইনে ৪০৬ জন।

বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটিতে কলা ও মানবিকে ৩৬০ জন, সামাজিক বিজ্ঞানে ১৫, বিজ্ঞানে ২০১, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ৮০৫, আইনে ৩৯২ এবং প্রকৌশল ও কারিগারি অনুষদের ৬২৯ জন। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে কলা ও মানবিক অনুষদে এক হাজার ১৯ জন, সামাজিক বিজ্ঞানে ১৭৬, বিজ্ঞানে ১২৫, ব্যবসায় প্রশাসনে ১ হাজার ৪৪৩, আইনে ৭২৮ ও প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদে ১ হাজার ২৪৮ জন।

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ৬৫০ ও বিজ্ঞানে ৫৩১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও মানবিক অনুষদে ১৮২ জন ও বিজ্ঞান অনুষদের ১ হাজার ১১৫ জন। পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কলা ও মানবিক অনুষদে ৬৪৭ জন, বিজ্ঞানে ৩ হাজার ২৫০জন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ১ হাজার ৩৫৫ জ ও আইনে ৪০৭ জন। চট্টগ্রাম ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানে ৪৮৪ জন, বিজ্ঞানে ২৫৫ জন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ৫৭২ জন ও আইনে ৩২৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চিটাগংয়ে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানে ২০১ জন, বিজ্ঞানে ৬৪৮ জন ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ১৯০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

শিক্ষার্থী কমেছে প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে :চট্টগ্রামের আটটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তিনটিতে ছাড়া সবগুলোতে শিক্ষার্থী কমেছে। একদশক আগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল চার হাজার ২০৩ জন, একদশকে শিক্ষার্থী কমেছে দুই হাজার ৬৭৪ জন। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ১১ হাজার ৩৩ জন।

একদশকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমেছে ৩ হাজার ৯১৩ জন। বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থী ছিল ৭ হাজার ৪৪৫ জন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমেছে ৫ হাজার ৪৩ জন। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে একদশক আগে শিক্ষার্থী ছিল ৯ হাজার ৫৮৫ জন। শিক্ষার্থী কমেছে ৪ হাজার ৮৪৬।

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে শিক্ষার্থী ছিল ৪ হাজার ৪২২ জন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমেছে ২ হাজার ২৮৪ জন, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিতে একদশক আগে শিক্ষার্থী ছিল ১ হাজার ৫৫০ জন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বেড়েছে ৬৩১জন। পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থী ছিল এক হাজার ৪৪০। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বেড়েছে চার হাজার ২৫৫। চট্টগ্রাম ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থী ছিল ১৭৬ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী বেড়েছে এক হাজার ৬২ জন।

এদিকে বিজ্ঞানে শিক্ষার্থী কমা প্রসঙ্গে ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সিকান্দার খান বলেন, ‘বিজ্ঞানের দিকে শিক্ষার্থীদের যাত্রা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে উচ্চশিক্ষায় বিষয় পছন্দের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী চাকরির বাজারে কোন বিষয়ের সনদের চাহিদা বেশি সেটিই প্রায় সময় বিবেচনায় নেন। যার কারণে একসময় চাকরির বাজারে বিবিএ-এমবিএ’র চাহিদা ছিল বেশি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ছিল বেশি। এখন বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এই বিষয়ে পড়ার আগ্রহ কমে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতায় চাকরির বাজারে এখন বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর সনদের চাহিদা বেড়েছে। তাই বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীরা। এটি যদি গবেষণার প্রতি আগ্রহ থেকে হতো তাহলে খুব ভালো হতো।’

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com