
গণপরিবহনে যত ভোগান্তি
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচ খান রতন

দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ নিয়মিত গণপরিবহনের যাত্রী। তাদের যাতায়াতের জন্য সেই প্রাগৈতিহাসিক পরিবহন ব্যবস্থার আসলে কতটা উন্নতি হয়েছে? সমাজে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান অতীতে ছিল; বর্তমানে আছে; ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু যে পরিবহনে নির্ধারিত ভাড়ার বিনিময়ে সাধারণ, মধ্যবিত্ত, এমনকি ধনিক শ্রেণির নাগরিকও প্রয়োজনে যাতায়াত করে; ওই পরিবহন ব্যবস্থায় মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। একে তো গণপরিবহনের যাত্রীরা ন্যূনতম স্বস্তিকর পরিবেশে যাতায়াতের অধিকার থেকে বঞ্চিত; তার ওপর পরিবহনগুলোতে আসন বিন্যাস যারপরনাই অস্বস্তিকর। যাত্রীকে যুদ্ধ করে আসনে স্থান করে নিতে হয়। তেল চিটচিটে সিট কভার। বাধ্য না হলে কেউ নোংরা এ আসন ব্যবহারের কথা ভাবতেও পারে না। নাক-মুখ বন্ধ করে যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছে যাত্রীরা। দেশের ৯০ শতাংশ পাবলিক পরিবহনের বাস্তব চিত্র এটি।
অনেক সময় অস্বস্তিকর এ যাত্রায় প্রশিক্ষণবিহীন পরিবহনকর্মীর সঙ্গে অনেক ভদ্র যাত্রীকেও অপ্রাসঙ্গিক তর্কে জড়িয়ে মেজাজ হারাতে দেখা যায়। অথচ বিদ্যমান স্থানে মাত্র দুটি আসন কম বসালেই এই কঠিনতর অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারে মানুষ। জঘন্য এই পরিবেশ দেখার কেউ আছে বলে মনে হয় না। যদিও বা সৌভাগ্যক্রমে কোনো যাত্রী আসনে বসার সুযোগ পায়, তার হাঁটুর সন্ধিবন্ধনী ছিটকে বেরিয়ে আসার অবস্থা হয়। অনেক সময় দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামে কোনো কোনো যাত্রী নিজের অজান্তে সামনের আসনে মাথা ঠেকিয়ে ঝিমিয়ে পড়লে সিট কভারের নোংরা পরিবেশের স্পর্শে কপালে জীবাণু সংক্রমণের মতো ঘটনাও ঘটছে। দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা না পারে ঠিকমতো দাঁড়াতে, না পারে সহযাত্রীর সঙ্গে সৌজন্য রক্ষা করতে। গণপরিবহন আর ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে এই যে বৈষম্য, তা ক্রমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অধিক সুবিধাভোগী ব্যক্তি রাষ্ট্রের প্রতি তার দায়িত্ব ভুলে গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ও পাবলিক পরিবহনের জ্বালানির দামে ব্যবধান থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ, ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে সুবিধাভোগী বাসার ড্রয়িংরুমের বিলাসী জীবন উপভোগ করছে।
অন্যদিকে গণপরিবহনের যাত্রী অস্বস্তিকর ও দুর্বিষহ যন্ত্রণা সহ্য করেও সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না। সেই সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত ভাড়ার বিড়ম্বনা তো আছেই। রাস্তায় নিরন্তর যানজট সৃষ্টির জন্য মূলত ব্যক্তিগত গাড়িগুলোই দায়ী। একই দামে জ্বালানি ক্রয় করে অধিক সুবিধাভোগী ব্যক্তির রাষ্ট্রকে অধিক সেবা দেওয়া উচিত। রাস্তা নির্মাণে ১০ জনের সমপরিমাণ জায়গা নিয়ে চলা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারী ব্যক্তি যেমন কর প্রদান করে; গণপরিবহনের যাত্রীরাও নির্ধারিত কর পরিশোধ করে। কিন্তু সুবিধা ভোগের ক্ষেত্রে বৈষম্য বিস্তর। সরকারের উচিত এমনভাবে গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা; ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলেও তা ব্যবহার না করে স্বস্তিকর পরিবেশ, দ্রুত ও সাশ্রয়ী সেবার জন্য মানুষ যেন গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহী হয়। এতে রাস্তায় যানজট যেমন কমবে, সময়ও বাঁচবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়টি ভেবে দেখা সময়ের দাবি।
ঢাকা
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com