
ক্ষুদ্র ও মাঝারি দুর্নীতি
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২৩ । ০১:১১ | প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়
দেশের এসএমই তথা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের ৭৪ শতাংশ সরাসরি দুর্নীতির শিকার হন বলিয়া সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গিয়াছে। উপরন্তু সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ পরিচালিত ওই গবেষণার বরাত দিয়া বুধবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, এই খাতের উদ্যোক্তাদের চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতি ও অনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতারও মুখোমুখি হইতে হয়। আরও উদ্বেগজনক, দুর্নীতির শিকার ব্যবসায়ীরা যথাস্থানে অভিযোগ জানাইতে ভয় পান এবং তাঁহাদের ২৫ শতাংশ ভয়কে জয় করিয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করিলেও অভিযোগসমূহের মাত্র ২৫ শতাংশ আমলে লওয়া হয়। এই সকল তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে কেহ যদি মনে করেন, দেশের এসএমই খাতে সুশাসনের ঘাটতি রহিয়াছে, তাঁহাকে নিশ্চয় দোষ দেওয়া যাইবে না।
অবশ্য, যথায় সমগ্র অর্থনীতিই দুর্নীতি নামক ব্যাধিতে ভুগিতেছে, তথায় এসএমই খাতের এহেন হতাশাজনক চিত্র ব্যতিক্রম কিছু হইতে পারে না। জানুয়ারির শেষদিকে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি গত বৎসর ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের ৭৮ শিল্পোদ্যোক্তার উপর পরিচালিত এক জরিপের ফল প্রকাশ করিয়াছিল। উহাতেও দেখা গিয়াছে, ৬৫ শতাংশ বৃহৎ উদ্যোক্তা মনে করেন, বাংলাদেশে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা দুর্নীতি। এমনকি ২০২১ সালে সিপিডি পরিচালিত একই ধরনের আরেক জরিপেও অনুরূপ চিত্র প্রতিফলিত হইয়াছিল। ঐ সকল জরিপে অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাগণ ইহাও বলিয়াছিলেন, দুর্নীতির কারণে তাঁহাদের উৎপাদিত কিংবা আমদানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়াছিল। যাহার নেতিবাচক প্রভাবে একদিকে দেশীয় ভোক্তাদের বাড়তি ব্যয়ের ধাক্কা মোকাবিলা করিতে হইয়াছে; অপরদিকে রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা হ্রাস পাইয়াছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি দুর্নীতি এসএমই খাতকেও যে একই ভোগান্তিতে ফেলিয়াছে, উহাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নাই।
তবে মনে রাখিতে হইবে, বৃহৎ ব্যবসায় বা শিল্প খাতের আর্থিক সামর্থ্যের সহিত এসএমই খাতের আর্থিক সামর্থ্য মোটেই তুল্য নহে। অধিকন্তু দেশের বৃহৎ ব্যবসায়ীগণ যথেষ্ট সংগঠিত। অতএব, তাঁহাদের দরকষাকষির ক্ষমতাও যথেষ্ট, যাহা একেবারেই অসংগঠিত এসএমই খাতের বিষয়ে কল্পনাও করা যায় না। আইনি সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্তির প্রশ্নেও এসএমই খাত চরম অবহেলিত। মূলত ইনফরমাল বা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত হওয়ায় ইহা প্রচলিত শ্রম আইনবহির্ভূত; রাষ্ট্র প্রদত্ত বিভিন্ন কর সুবিধা হইতে বঞ্চিত। এমনকি ব্যাংক ঋণ পাইতে গেলেও এই খাতের উদ্যোক্তাদের প্রচুর কাঠখড় পোড়াইতে হয়। এত কথা বলিবার উদ্দেশ্য ইহা তুলিয়া ধরা, এসএমই খাতের বাহ্যিক আঘাত সহ্য করিবার ক্ষমতা বৃহৎ শিল্প খাতের তুলনায় অতি স্বল্প। তাই দুর্নীতির প্রভাবও এসএমইর উপর বৃহৎ শিল্প খাতের তুলনায় অধিকতর হইতে বাধ্য। তৎসত্ত্বেও বিশ্বব্যাংকের ইজিং ডুয়িং বিজনেস সূচকে উন্নতি ঘটাইবার লক্ষ্যে যথায় দুর্নীতি হ্রাসও অন্তর্ভুক্ত– সরকার ইতোমধ্যে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করিয়াছে, উহাতে এসএমইর স্থান নাই বলিলেই চলে।
আমরা মনে করি, এসএমই খাতের প্রতি এহেন উদাসীনতার ফল ভালো হইতে পারে না। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই খাতের অবদান অন্য সকল খাত অপেক্ষা অধিক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের সমীক্ষামতে, মোট শ্রমশক্তির ৮০ শতাংশের বেশি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত; আলোচ্য খাতটি যাহার উল্লেখযোগ্য অংশ। আবার এই সত্যও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত– একটা সমৃদ্ধ এসএমই খাত যে কোনো দেশে শিল্পায়নের ভিত্তি।
মঙ্গলবার রাজধানীর এক হোটেলে যে অনুষ্ঠানে আলোচ্য গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হইয়াছে, তথায় আলোচকরা বেশ গুরুত্ব দিয়া বলিয়াছেন, এসএমই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় এক খাত। আমরা মনে করি, তাঁহারা এই সম্ভাবনাকে ফলে রূপ দিবার স্বার্থে সঠিকভাবেই দুর্নীতি দমনের উপর গুরুত্ব আরোপ করিয়াছেন। সরকার তাঁহাদের পরামর্শ বিবেচনায় লইবে বলিয়া আমাদের গভীর প্রত্যাশা।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com