
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল
প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল এখন দেশসেরা
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২৪ মার্চ ২৩ । ০১:৪১ | প্রিন্ট সংস্করণ
আমিরুল হক, নীলফামারী

সুবিধাবঞ্চিত হয়েও দেশসেরা হওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নীলফামারীর পূর্ব পঞ্চপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলোয়াড়রা এমন নজিরই গড়ল সমকাল
নীলফামারী সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরের পূর্ব পঞ্চপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্ষাকালে কাদা আর গ্রীষ্মকালে ধুলা পেরিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে। ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে নেই আধুনিক কোনো সুযোগ-সুবিধা। প্রত্যন্ত এলাকার এ বিদ্যালয়টিই দেশসেরা হয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের মুকুট জিতেছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত টুর্নামেন্টে গত মঙ্গলবার আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে এ বিদ্যালয় মাগুরার বিনোদপুর কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ২-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে। তাদের এ সাফল্যে জেলাজুড়ে চলছে আনন্দ-উল্লাস। হয়েছে বিজয় মিছিল। আয়োজন করা হচ্ছে সংবর্ধনারও।
তবে গ্রামের বিদ্যালয় হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠ ও খেলাধুলাবিষয়ক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের সামনে ও পেছনে বিশাল জায়গাজুড়ে খেলার মাঠ দেখলেই এটি বোঝা যায়। সুশৃঙ্খল পরিবেশ, শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং খেলাধুলায় কঠোর তদারকি এ সফলতার মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। খেলায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অনুপস্থিতিজনিত সমস্যায় পড়তে হয় না। ক্ষতি পুষিয়ে দিতে শিক্ষকরা বাড়তি সময় দিয়ে খেলোয়াড় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন।
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টকে লক্ষ্য করে বছরের শুরু থেকেই কঠোর অনুশীলনের মধ্যে ছিল শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের মাঠ ছাড়াও তারা মাঝে মাঝে স্টেডিয়ামে গিয়ে অনুশীলন করত। রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা হওয়ার পর নীলফামারীর জেলা ক্রীড়া সংস্থা এ খেলোয়াড়দের নিয়ে স্টেডিয়ামে ১০ দিনের ক্যাম্প করে। তাদের থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করে ক্রীড়া সংস্থা। এ সময় পর্যায়ক্রমে তাদের তদারকির দায়িত্বে থাকতেন শিক্ষকরা। এ ছাড়া সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিরা।
১৯৭১ সালে আলী, আছিম উদ্দিন ও এনায়ত আলীর দান করা ৭৫ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পূর্ব পঞ্চপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টিকে সরকারীকরণ করা হয়। চারজন পুরুষ ও দু’জন নারী নিয়ে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের সংখ্যা ৬। অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২০৪। রয়েছে একতলা দুটি ভবন। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে শ্রেণি সংকটে পড়তে হয় শিক্ষকদের। তারপরও কয়েক বছর ধরে ইউনিয়নের মধ্যে পিএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।
টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা জাহিম (৪ গোল) এবং সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়া মনিরুল ইসলামও এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে প্রাইজমানি, গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল গ্রহণ করে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে তাদের মাঝে পুরস্কার ও পদক বিতরণ করেন।
খেলোয়াড় শিক্ষার্থী জাহিম, সাদিক সিরাজ মুইয, পারভেজ ও মামুন জানায়, শিক্ষকদের কঠোর তদারকি ও মাঠে অনুশীলনের ফলে তাদের এ বিজয়। কোচ জিতেন্দ্র নাথ স্যারও অনেক পরিশ্রম করেছেন। খেলায় সেরা হয়ে সবার ভালোবাসা পাওয়া অনেক আনন্দের।
মুইযের বাবা কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মোর ছাওয়া পড়াশোনাত য্যাঙ্কা, ফুটবলও স্যাঙ্কাই খেলে। মুই এ্যালা খুব খুশি হইছোঁ। স্যারেরা হামার ছাওয়ার বাদে মেল্ল্যা কষ্ট করছে। মুই আল্লাহর কাছে দোয়া করো ছাওয়া মোর একদিন দেশত হইয়্যা যেন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলি পারে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনও একজন খেলোয়াড় এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য। তিনি বলেন, খেলাধুলাতে জীবনের প্রথম থেকেই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। এতে এটির সুফল সারাজীবন ধরে পাওয়া যায়। তাই খেলাধুলার ব্যাপারে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উৎসাহিত করা হয়। পাঠদানে তাদের আলাদাভাবে সহায়তা করা হয়। অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে প্রতিদিন অনুশীলন করানো হয়েছে।
নীলফামারী সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এনামুল হক সরকার জানান, দেশসেরা হয়ে চমক দেখিয়েছে বিদ্যালয়টি। এ জন্য সত্যি আমরা গর্বিত। শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা ও সমন্বয়ের কারণে এ সাফল্য এসেছে। শিগগির তাদের সংবর্ধনা জানাতে বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com