অষ্টগ্রামের দুই গ্রামে এক মাসে ৪০ বার আগুন

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২৩ । ০৫:৪৪ | প্রিন্ট সংস্করণ

কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রতীকী ছবি

গোসল সেরে পুকুর পাড়েই শাড়ি শুকাতে দেন শর্মিলা রানী। ঘণ্টাখানেক পর আনতে গিয়ে ছাই পান। সেখান থেকে ফেরার পথেই বাড়ির একটি ঘর থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখেন। প্রতিবেশীরা দ্রুত নিভিয়ে ফেলায় শর্মিলার পরিবার বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়।

ঘটনাটি মাসখানেক আগের। কিন্তু এর পর থেকে গত এক মাসে শর্মিলার কাকুরিয়া ও পার্শ্ববর্তী সাপান্ত গ্রামে অন্তত ৪০ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবারই দিনের বেলায় আগুন লেগেছে। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার দুপুরে কৃষক নরেন দাসের বাংলোঘরে আগুন লাগে। গ্রাম দুটি কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত কলমা ইউনিয়নে। গ্রামবাসী এটিকে ‘গায়েবি আগুন’ উল্লেখ করে যৌথ আরাধনার ব্যবস্থা করেছে। অবশ্য প্রশাসনের ভাষ্য, আগুন মানুষই দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞ এনে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাকুরিয়া গ্রামে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অজিত দাসের স্ত্রী শর্মিলা রানীর শাড়ি পোড়া দিয়ে আগুনের সূত্রপাত। এর পর এক মাস ধরে আগুন আতঙ্ক চলছে। এ বিষয়ে গতকাল শর্মিলা রানী বলেন, ‘অইদিন বাড়ির সামনের পুকুরে গুছল কইরা পাড়ের মইধ্যে কাপড় লাইরা দিয়া আসি। ঘণ্টাখানেক পরে গিয়া দেহি আমার সারা কাপড় আগুনে পুইড়ে গেছে। এটা মানুষের লাগানো আগুন না।’

ইতোমধ্যে কাকুরিয়া গ্রামের জয়বাসি দাস, জয়কৃষ্ণ দাস, সুশেন দাস, লক্ষ্মণ দাস, পরিমল দাস, অজিত দাস এবং সাপান্ত গ্রামের নিতাই দাস, নারায়ণ দাসসহ ২৫ থেকে ৩০টি বাড়িতে আগুন লেগেছে। কারও কারও ঘরে একাধিকবার আগুন লেগেছে। দু’দিন আগে থেকে শুরু হয়েছে সাপান্ত গ্রামে। গত সোমবার বিকেল ৪টার দিকে সাপান্ত গ্রামের কৃষক নারায়ণ দাসের ঘরের বিছানার চাদরে এবং পরদিন সকালে তাঁর বড় ভাই নিতাই দাসের ঘরের তোশক ও বিছানার চাদরে আগুন লাগে। কে বা কারা আগুন লাগাচ্ছে, তা কেউ-ই দেখতে পাচ্ছেন না। আগুন লাগার পরই টের পাওয়া যাচ্ছে। পুড়ছে বালিশ, বিছানার চাদর, মশারির মতো কাপড় জাতীয় জিনিস। গতকাল নরেশ দাস জানান, অগ্নিকাণ্ডের সময় বাংলোঘরের পাশেই ছিলেন তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘ঘরে আইয়া দেহি লেপ-তোশক আগুনে জ্বলতাছে।’

কাকুরিয়া গ্রামে প্রায় ১ হাজার ২০০ ও সাপান্ত গ্রামে প্রায় ২ হাজার বাসিন্দার বসবাস। সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইন্দ্রজিত দাস জানান, একের পর এক আগুনের ঘটনায় স্থানীয়রা আতঙ্কিত। সম্মিলিতভাবে পুজোর পরামর্শ করতে গ্রামবাসীকে শুক্রবার ডাকা হয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান রাধাকৃষ্ণ দাস জানান, এ পর্যন্ত দুই গ্রামের কোনো বাড়িতে তিন-চারবারও আগুন লেগেছে। কোনো সূত্রপাত না পেয়ে গ্রামবাসী এটিকে ‘গায়েবি আগুন’ মনে করছে। এ জন্য গ্রামে পুজো দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পালাক্রমে আটজন করে পাহারা দিচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ সরকারি গুরুদয়াল কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক শামসুল আলম সাগর বলেন, ‘বৈজ্ঞানিকভাবে গায়েবি আগুনের অস্তিত্ব নেই। কোনো স্বার্থান্বেষী মহল রাসায়নিক পদার্থের সাহায্যে এটি করছে কিনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে বেরিয়ে আসবে।’

অষ্টগ্রাম থানার ওসি মোর্শেদ জামান জানান, পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘মানুষই এসব করছে। এর পরও বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ এনে কাজ করলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com