খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ নিয়ে অনিশ্চয়তা

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২৩ । ০৬:২১ | প্রিন্ট সংস্করণ

মামুন রেজা, খুলনা

খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) অধীনে বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে বিমানবন্দর নির্মাণ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। দুই দফায় ৬২৭ একর জমি অধিগ্রহণ, মাটি ভরাট এবং সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর এ ধরনের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ খুলনা অঞ্চলের মানুষ। ১৯৯৬ সালে কাজ শুরুর পর ১৭ বছরে বিমানবন্দর নির্মাণের যে আশা তৈরি হয়েছিল, তা ম্লান হতে চলেছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান সমকালকে জানান, পিপিপির অধীনে বিমানবন্দরটি নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্যতা যাচাই করে তাদের কাছে ‘ফিজিবল’ বলে মনে হয়নি। তারা বলেছে, বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হলে তা লাভজনক হবে না। এ কারণে প্রকল্পটি স্থগিত করা হয়। তিনি জানান, এমনিতেই পদ্মা সেতু নির্মাণের পর যশোর বিমানবন্দর থেকে ঢাকা রুটে যাত্রী কমে গেছে। কারণ, খুলনা-বাগেরহাট থেকে সড়কপথে ঢাকার দূরত্ব ও যাতায়াতে সময় কমেছে। আর নিজস্ব অর্থায়নে বিমানবন্দর নির্মাণ করার মতো অর্থ বেবিচকের নেই। প্রকল্পটি পিপিপি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ফেরত আনা হচ্ছে। ফান্ড পাওয়া গেলে পরবর্তী সময়ে বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে।

সংস্থাটির উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে বিমানবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও সীমানাপ্রাচীর তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু পিপিপিতে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য বিনিয়োগকারী পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, মোংলা বন্দর, পার্শ্ববর্তী শিল্পপ্রতিষ্ঠান, মোংলা ইপিজেড, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি অসংখ্য মানুষ আসে। রাজধানীর সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের জন্য রামপাল উপজেলার ফয়লা এলাকায় নির্মাণাধীন বিমানবন্দরের কাজ সম্পন্ন করা খুবই জরুরি। কিন্তু প্রকল্পটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত দুঃখজনক। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে আসন্ন জাতীয় বাজেটে এ খাতে অর্থ বরাদ্দের দাবি জানান।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, পিপিপিতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেক দেরিতে তা উপলব্ধি করল। এত দূর কাজ এগিয়ে যাওয়ার পর প্রকল্প স্থগিত করা ঠিক হয়নি। ফলে খুলনা অঞ্চলের মানুষ আবারও উন্নয়ন বঞ্চনার শিকার হলো। প্রয়োজনে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বিমানবন্দর নির্মাণ সম্পন্ন করার দাবি জানান তিনি।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব আইনজীবী বাবুল হাওলাদার বলেন, খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের দাবি খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের। বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের ফলে অনেক মানুষ উচ্ছেদ হয়েছে; কৃষিজমি নষ্ট হয়েছে। অনেক খাল ভরাট করতে হয়েছে। উন্নয়নের স্বার্থে মানুষ এগুলো মেনে নিয়েছিল। কিন্তু এখন প্রকল্প স্থগিত করায় অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হলো। আদৌ বিমানবন্দর নির্মাণ হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খুলনা নগরী থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লা এলাকায় বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ১৯৯৬ সালে ৯৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এরপর ওই জমিতে মাটি ভরাট করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন আর কোনো কাজ হয়নি। এরপর ২০১৫ সালে নতুন করে ‘খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প’ গ্রহণ করে সরকার। ব্যয় ধরা হয় ৫৪৫ কোটি  টাকা। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ওই এলাকায় আরও ৫২৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিমানবন্দর এলাকায় মাটি ভরাট ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ ছাড়া অন্য কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি। খুলনা-মোংলা সড়কের পাশে বিমানবন্দরের একটি সাইনবোর্ড ঝোলানো আছে। বিমানবন্দরের জমিতে গরু-ছাগল চরে বেড়াচ্ছে।

এ ব্যাপারে খুলনার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির সমকালকে বলেন, বিমানবন্দর না থাকায় শিল্পনগরী খুলনা, মোংলা বন্দর ও মোংলা ইপিজেডে অনেক ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী আসতে আগ্রহী হন না। এ ছাড়া সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদ ও খানজাহান আলীর মাজার ভ্রমণে আসতে চান না অনেক পর্যটক। এ জন্য দ্রুত বিমানবন্দর নির্মাণ করা প্রয়োজন।

বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প স্থগিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তারা ফের কাজ শুরুর দাবি জানায়। উন্নয়ন কমিটির মহাসচিব শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হলে জমি অধিগ্রহণ এবং উন্নয়ন বাবদ ব্যয় হওয়া বিপুল অঙ্কের অর্থের অপচয় হবে। প্রকল্পটি পিপিপির আওতায় না রেখে সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করতে হবে।

একই দাবিতে বৃহস্পতিবার খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে খুলনা নাগরিক সমাজ। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বীর ‍মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মহসীন, আইনজীবী বাবুল হাওলাদার, নিতাই পাল, দেলোয়ার হোসেন, সাইফুর মিনা, আব্দুস সালাম শিমুল, শাহীন হোসেন ও মোস্তাকুজ্জামান মুক্তা। 

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com