
সাক্ষাৎকার
খাতুনগঞ্জ ছাড়ছেন বনেদি ব্যবসায়ীরা
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২৩ । ১০:০৩ | প্রিন্ট সংস্করণ
--

মাহবুবুল আলম, সভাপতি, চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন
সমকাল: এক সময় দেশের ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় মোট লেনদেনের অর্ধেকই হতো খাতুনগঞ্জে। এখন সেই চিত্র বদলেছে কতটা?
মাহবুবুল আলম: খাতুনগঞ্জ এক সময় পুরো দেশের হৃৎপিণ্ড ছিল। ভোগ্যপণ্য লেনদেনের বড় অংশ হতো এখানে। প্রতিদিন বেচাকেনা হতো হাজার কোটি টাকা। এখন সেই বেচাকেনার অর্ধেকও নেই। রমজানের এমন ভরা মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত বেচাকেনা নেই পাইকারি এ মোকামে। নেই আগের সেই সরগরম চিত্রও।
সমকাল: বনেদি ব্যবসায়ী অনেকেই ছেড়ে গেছেন খাতুনগঞ্জ। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে আপনি এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন।
মাহবুবুল আলম: বনেদি ব্যবসায়ীদের খাতুনগঞ্জ ছাড়ার কারণ অনেক। সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটুপানি জমে এই মোকামে। প্রতি বছর বৃষ্টি এলে গুদামে নষ্ট হয় কোটি কোটি টাকার পণ্য। সময়ের হাত ধরে যেভাবে সাজানো দরকার ছিল সেভাবে তৈরি করা যায়নি এই পাইকারি মোকামকে। চাক্তাই খালের ওপর অপরিকল্পিভাবে স্লুইসগেট দেওয়া হয়েছে। কর্ণফুলী নদীও নিয়মিত ড্রেজিং হচ্ছে না। এটি নাব্য হারাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর পানির ধারণ ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। আগে এই মোকাম ঘিরে অনেক ঘাট ছিল। এখন তিন-চারটি ঘাট সচল আছে। বাকিগুলো পলি জমে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারণে বড় ব্যবসায়ী অনেকে খাতুনগঞ্জ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র অফিস খুলেছেন।
সমকাল: খাতুনগঞ্জের যানজট ব্যবস্থাপনাতেও আসেনি আলো। আপনাদের পদক্ষেপ কী ছিল?
মাহবুবুল আলম: খাতুনগঞ্জের জলাবদ্ধতা ও যানজট নিয়ে মিটিংয়ের পর মিটিং করেছি। মেয়র মহোদয় ও সিডিএ চেয়ারম্যানকে সরেজমিনেও সমস্যা দেখিয়েছি। কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। কিন্তু যানজট নিরসনে তা পর্যাপ্ত নয়। এখনও যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। জলাবদ্ধতা নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকেন পাঁচ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী। আমরা জানি না এর সমাধান কার হাতে আছে।
সমকাল: জলাবদ্ধতায় খাতুনগঞ্জের ক্ষতি নিয়ে আপনাদের সহায়তায় একটি গবেষণা হয়েছিল। সেখানে কিছু সুপারিশও ছিল। বাস্তবায়নে অগ্রগতি কতটুকু?
মাহবুবুল আলম: আমি চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি পদেও আছি। সেই চেম্বারের সহযোগিতায় পরিকল্পনা কমিশনের ন্যাশনাল রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) যৌথ উদ্যোগে একটি গবেষণা করা হয়। এই গবেষণায় উঠে আসে দেশের বড় পাইকারি এ বাণিজ্য কেন্দ্রে এক দশকে ক্ষতির চিত্রটি। গবেষণা বলছে, জলাবদ্ধতার কারণে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ ও কোরবানীগঞ্জে ২ হাজার ৫১৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সরাসরি এই ক্ষতি হয়েছে পাঁচ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। ২০২১ সালে প্রকাশিত হওয়া এই গবেষণাতে সমস্যা সমাধানে দেওয়া হয় কিছু সুপারিশও। গবেষণার তথ্য তুলে দিয়েছিলাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর হাতেও। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি এখনও।
সমকাল: খাতুনগঞ্জে বারবার প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। আপনাদের বিশ্বাসের ঘরে এটি সংকট তৈরি করছে কিনা?
মাহবুবুল আলম: অবশ্যই। পাইকারি এ মোকামের প্রধান পুঁজি হচ্ছে বিশ্বাস। এখানে মুখের কথায় শত কোটি টাকাও লেনদেন হয়। যারা এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত তারা দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সুনাম দিয়ে এটি অর্জন করেছেন। গুটি কয়েক অসাধু ব্যবসায়ী টাকা মেরে দিয়ে এ বিশ্বাস ম্লান করেছে অনেকখানি। গত দুই দশকে হাজার কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে খাতুনগঞ্জে। এখানকার ব্যবসা কমে যাওয়ার এটিও একটি প্রধান কারণ। আবার ঋণের টাকা যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পেরেও অনেক বনেদি ব্যবসায়ীকে ছাড়তে হয়েছে ব্যবসা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে থাকা ওজন স্কেলও ঢাকার সঙ্গে আমাদের বৈষম্য তৈরি করেছে। পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। আসলে দেশের অন্যতম প্রধান এই পাইকারি মোকামে ব্যবসা কমে যাওয়ার এমন অনেক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণ রয়েছে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারোয়ার সুমন
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com