
১৩ বছরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
যুদ্ধাপরাধের বিচার গতি হারিয়েছে
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২৩ । ১৮:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ওয়াকিল আহমেদ হিরন

গণমাধ্যমে একসময় প্রধান শিরোনামে থাকলেও এখন আর আলোচনায় নেই একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচার। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিচার করে দেশে-বিদেশে আলোচিত হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এখন বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের বিচার চললেও, সার্বিকভাবে যেন ট্রাইব্যুনাল আগের গতি হারিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেই আজ ২৫ মার্চ পালিত হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার ১৩তম বার্ষিকী।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এ দেশীয় দোসরদের বিভিন্ন নৃশংস মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে ২০১০ সালের এই দিনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হয়েছিল। প্রথম রায় আসে ২০১৩ সালে। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সেই থেকে এ পর্যন্ত গত ১৩ বছরে ৮২টি মামলার মধ্যে ৫১টির রায় ঘোষণা হয়েছে।
১৩ বছরে এসে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ট্রাইব্যুনালের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা শতভাগ পূরণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা। তাঁরা বলেছেন, নিজস্ব আইনে আন্তর্জাতিকভাবে বিচার করে বাংলাদেশের এই ট্রাইব্যুনাল বিশ্বের কাছে এখন মডেল। কম সংখ্যক জনবল নিয়ে তদন্ত সংস্থার বিরামহীন কার্যক্রম চললেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যুদ্ধাপরাধীমুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তাঁরা।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৩ বছরে ২৩৯ আসামির বিরুদ্ধে ৮২টি অভিযোগের তদন্ত শেষ করেছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এ সময়ে বিচার শেষ হয়েছে মাত্র ৫১ মামলায় ১৩১ জন আসামির। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ৯১, আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ২৫, যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ৯ এবং সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্তের সংখ্যা ৬ জন। রায় হওয়ার আগেই মারা গেছেন ১৮ জন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ৪৭ জন। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে আরও ৩৫ মামলার বিচার চলছে। এ সময় সর্বোচ্চ আদালতে মাত্র ৮টি মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হলেও আরও ৪০টি আপিল আবেদন ঝুলে আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাসহ নানা কারণে তিন বছর ধরে ট্রাইব্যুনালে বিচার অনেকটা ঢিলেঢালা। তবে বিশিষ্টজনের দাবি, জনবল-অবকাঠামোসহ বিরাজমান সমস্যার সমাধান এবং ট্রাইব্যুনালে আরও একটি বেঞ্চ পুনরুজ্জীবিত করা হলে বিচারের গতিশীলতা আরও বাড়বে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, যে গতিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছিল, দুটি ট্রাইব্যুনাল থেকে একটি করায় গত সাত বছরে তা ঝিমিয়ে গেছে। অল্প সময়ে এই বিচারটা কেন এত গুরুত্বহীন হয়ে গেল! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে বিচারটা শুরু করলেন, কিন্তু আমরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল মামলাগুলো কেন শেষ করতে পারলাম না? এত বাধা-বিপত্তির পরও সাফল্যকে কেন হতাশায় রূপান্তরিত করা হচ্ছে, কোনো জবাব পাচ্ছি না। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের পাশাপাশি অপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর বিচার হওয়া দরকার। আইন সংশোধন করে এটা না করায় আমরা ক্ষুব্ধ।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ শিমন বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে অন্যান্য দেশের তুলনায় গত ১৩ বছরে আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের অর্জন কম নয়। প্রত্যাশা আরও ছিল, কিন্তু কাজ করতে গিয়ে নানা বাধার সম্মুখীন হই। এখনও দেশকে রাজাকারের ভাবধারা থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক সানাউল হক বলেন, ‘সীমিত জনবল ও ট্রাইব্যুনাল স্বল্পতার কারণেও সফলতার সঙ্গে ৫১টি মামলার রায় পেয়েছি। সব মামলার রায় আমাদের মনঃপূত হয়েছে। আমরা জাতির কলঙ্ক মোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছি। তবে এখনও কিছু কাজ বাকি আছে। বিভিন্ন এলাকার তৃণমূল পর্যায়ের সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ১৭ মামলার তদন্ত চলছে। এ ছাড়া তদন্ত সংস্থায় জমা থাকা ৭৮৭টি অভিযোগের ৪ হাজার ২১৪ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com