প্রলয় গ্যাংয়ে তটস্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২৩ । ০৫:৫৮ | প্রিন্ট সংস্করণ

যোবায়ের আহমদ

ঢাবির ডা. শহীদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের তৃতীয় তলায় কার্যালয় বানিয়েছে প্রলয় গ্যাং-সংগৃহীত

গ্যাংয়ের নাম প্রলয়। ক্যাম্পাসে মারামারি, ছিনতাইয়ে জড়িতদের বেছে বেছে সেই গ্যাংয়ের সদস্য বানানো হয়। ক্যাম্পাসে নানা অপকর্মে তাঁরা জড়িত। নিয়মিত নেশার আসর বসান তাঁরা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু চত্বরের পাশে তাঁদের নেশার স্থান। ওই জায়গার নাম দিয়েছেন ‘নিকুম্ভিলা’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. শহীদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের তৃতীয় তলায় তাঁরা গ্যাংয়ের কার্যালয় বানিয়েছেন। নিয়মিত সেখানে জড়ো হন সদস্যরা, ক্যাম্পাসে চলাফেরা করেন একত্রে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সবাই সংঘবদ্ধ ছবি দেন নিয়মিত। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই একদল শিক্ষার্থী। সবাই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। 

শনিবার রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীন হল ও বিজয় একাত্তর হলের সামনে (হলপাড়া) প্রকাশ্যে ক্রিমিনোলজি বিভাগের জুবায়ের ইবনে হুমায়ুন নামে এক শিক্ষার্থীকে মেরে রক্তাক্ত করেন এ দলের সদস্যরা। জুবায়ের স্যার এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর খোঁজ নিতে গেলে বেরিয়ে আসে এ গ্যাংয়ের নাম।

গ্যাংয়ের নেতৃত্বে আছেন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র মাহিন মুনাওয়ার, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল এবং শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নের তবারক, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের সিফরাত সাহিল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও দর্শন বিভাগের অর্ণব খান, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাদমান তাওহিদ বর্ষণ, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের হেদায়েতুন নুর, ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজ, ইতিহাস বিভাগের বদরুজ্জামান সজীব, মার্কেটিং বিভাগের বিপ্লব হাসান জয় ও মোহাম্মদ শোভন, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন বিভাগের শাহ আলম, মাস্টারদা সূর্য সেন হলের তৌসিফ তাহমিদ অর্পণ ও নাজমুল হোসাইন, কবি জসীম উদ্‌দীন হল ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদ, ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের তাহমিদ ইকবাল মিরাজ, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবু রায়হান ও জগন্নাথ হলের প্রত্যয় সাহা।  

এর মধ্যে নাজমুল হোসাইন ও তৌসিফ তাহমিদ অর্পণ মাস্টারদা সূর্য সেন হল ছাত্রলীগের সহসম্পাদক, মাহিন মুনাওয়ার শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সহসম্পাদক।

জানা যায়, প্রতিটি হল থেকে প্রথম বর্ষ পড়েন– এমন মারদাঙ্গা এবং নেশাগ্রস্ত ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রদের বাছাই করে তাঁরা এই গ্যাংয়ে জড়ো করেছেন। ক্যাম্পাসে এবং উদ্যানে নিজেদের আড্ডা, মাদক, ছিনতাইয়ের জগৎ গড়ে তোলেন। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে মারধর এবং অন্যান্য অপরাধে কয়েকজনকে বিভিন্ন মেয়াদে হল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। তাঁরা সংঘবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করেন। ঢাবি মেডিকেলের তৃতীয় তলায় নিজেদের কার্যালয় গড়ে তুলেছেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে একজন চিকিৎসক বলেন, আমরা রাতের বেলা ডিউটি করতে ভয় পাই। মেডিকেল চারপাশে খোলা এবং একদল শিক্ষার্থী মদ, গাঁজা খায় এবং আড্ডা দেয়। খুবই অনিরাপদ বোধ করি।

গতরাতে তাঁদের মারধরে আহত জুবায়ের সমকালকে জানান, কার্জন হলের সামনে অভিযুক্তরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাইক চালাচ্ছিলেন। সেটা দেখে তিনি তাঁদের বাইক চালাতে নিষেধ করেন। এ সময় তাঁদের মধ্যে একটু কথা কাটাকাটি হয়। এর পর তিনি হলপাড়ায় আসেন। কিছুক্ষণ পর অপরিচিত নাম্বার থেকে (সাহিলের নাম্বার) ফোন করে তবারক তাঁর লোকেশন জিজ্ঞেস করেন এবং দেখা করতে চান। তিনি দেখা করতে এলেই দলের সব সদস্য মিলে তাঁকে মারধর করে রক্তাক্ত করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা বলেন, হঠাৎ করে একদল শিক্ষার্থী এসে ছেলেটিকে মারতে শুরু করেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল এবং জসীম উদ্‌দীন হল থেকে ওই ছেলের বন্ধুবান্ধব দৌড়ে আসেন। এ সময় তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয় সেখানে। তবে এর মধ্যে তাঁকে মেরে তাঁরা পালিয়ে যান। পরে কয়েকজন শিক্ষার্থী যোবায়েরকে রিকশায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, একটি গ্রুপকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শনিবারের ঘটনাটি তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। হলের প্রাধ্যক্ষকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এ বিষয়ে কোনো তথ্য থাকলে তিনি জানাতে বলেন।  
ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই। আমরাও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। নিরাপদ ক্যাম্পাস চায় ছাত্রলীগ। এখানে কোনো গ্যাংয়ের অপকর্ম সহ্য করা হবে না।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com