
সুদ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২৩ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মেসবাহুল হক

চলতি বাজেটের চেয়ে প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ বাড়িয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট প্রণয়নের প্রাথমিক প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় বাড়তি ব্যয়ের অধিকাংশ যাবে ঋণের সুদ পরিশোধ ও ভর্তুকিতে। পক্ষান্তরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ বাড়ানোর প্রাক্কলন করা হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যয়ের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
জানা গেছে, বাজেট ব্যয়ের প্রাথমিক প্রাক্কলন আগামী ২ এপ্রিল অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে বাজেট প্রাক্কলন পরীক্ষা-সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে। এর পর আগামী ৫ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। ওই বৈঠকে চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকারের খসড়া তৈরি করা হবে। এর পর কয়েক দফা বৈঠক করে সামান্য পরিবর্তন করে চূড়ান্ত করা হবে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ১ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করতে পারেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ জন্য ইতোমধ্যে সংসদ সচিবালয়কে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অন্যান্য কারণে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে সরকারের দেওয়া ভর্তুকি বেড়েছে। আগামী অর্থবছরেও তা অব্যাহত রাখা হতে পারে। তাই ভর্তুকি ও নগদ প্রণোদনা খাতে প্রায় ৩৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। অবশ্য সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৯৯ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা করা হয়। এর মধ্যে শুধু কৃষি খাতে বাড়ানো হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে সার্বিকভাবে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে। এ জন্য ইতোমধ্যে বিদ্যুতের দাম কয়েক দফা বাড়িয়েছে সরকার। তবে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্য ও কৃষিতে সরকারকে ভর্তুকি বাড়াতে হচ্ছে। জ্বালানিতে ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সার্বিকভাবে ভর্তুকি বাড়াতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।
কয়েক বছর ধরে সরকারের পরিচালন বাজেটে ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ঋণের সুদ পরিশোধ। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকা অবমূল্যায়ন, লাইবর রেট অত্যধিক বেড়ে যাওয়া, ইউএস ট্রেজারির সুদহার বাড়ার পাশাপাশি দেশের বাজারে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বাড়ায় আগামী অর্থবছরে সরকারকে সুদ বাবদ ব্যয় প্রায় ২৭ শতাংশ বাড়িয়ে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হতে পারে বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা।
সুদ ও ভর্তুকিতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ বেশি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। চলতি বাজেটের তুলনায় এ খাতে বরাদ্দ মাত্র ৬ শতাংশ বাড়িয়ে আগামী বাজেটে ২ লাখ ৬০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করছে অর্থ বিভাগ। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ সমকালকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনে আগামী বাজেটের ব্যয় আরও বাড়ানো দরকার। বাজেটে সুদ ও ভর্তুকিতে ব্যয় বাড়ছে। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতাও বাড়াতে হবে। এসব খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর ফলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বরাদ্দ তেমন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। বাজেটের আকার আরও বড় করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব বাড়ানোতে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com