
শিশুপার্কে 'প্রলয় গ্যাংয়ের' আস্তানা
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২৩ । ২২:০৯ | আপডেট: ২৯ মার্চ ২৩ । ২২:১৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশুপার্কে ডিএসসিসির অস্থায়ী অফিস। ছবি: সমকাল
দীর্ঘদিনের ‘সংস্কারকাজ’ জটিলতায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশুপার্কটি বন্ধ রয়েছে। চারদিকে টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে জায়গাটি। চারদিকে ঘেরা দেওয়া ও মানুষজন না থাকায় মাদকের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে পার্কটি। এর ভেতরে থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অফিসে আস্তানা বানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদক, নেশা ও ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত ক্যাম্পাসভিত্তিক ‘প্রলয় গ্যাং’। শিশুপার্কের বটগাছতলায় গড়ে তুলেছে নেশার আড্ডাখানা ‘নিকুম্ভিলা’। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের একদল শিক্ষার্থী এ গ্যাং চালান।
আজ বুধবার গ্যাংটির এক সদস্যের তথ্য অনুযায়ী শিশুপার্কে গিয়ে দেখা যায়, চারদিক টিন দিয়ে ঘেরাও থাকলেও ভেতরে প্রবেশের কয়েকটি গোপন জায়গা রয়েছে। পরিচর্যা না থাকায় গাছপালা আগাছা গ্রাস করেছে চতুর্দিক। পার্ক বন্ধ থাকলেও ভেতরের মানুষের চলাচল রয়েছে। রাতের বেলা এ স্থান চঞ্চল হয়ে ওঠে বলে জানা গেছে। পার্কের ভেতরে টিনশেড দেওয়া ডিএসসিসির একটি অস্থায়ী অফিস রয়েছে। একতলা এ অফিসের একটি কক্ষেই আস্তানা গাঁড়ে প্রলয় গ্যাং। এছাড়া ভবনটির দরজার পাশে ‘প্রলয়’ লেখা রয়েছে। বন্ধ জানালার ফাঁক দিয়ে ভেতরে তাদের পোশাক জামা-কাপড় ইত্যাদি দেখা যায়।
গ্যাং সদস্যদের তথ্য অনুযায়ী, নিকুম্ভিলায় আড্ডা দিতে গিয়ে অফিসটির জানালা দিয়ে ভেতরে তোশক পড়ে থাকতে দেখেন তারা। তারপর এখানে তালা ভেঙে থাকতে শুরু করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক সার্কেল) আনিছুর রহমান সমকালকে বলেন, শিশুপার্কের কিছু জায়গায় স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ চলছে। এখানে আমাদের একটি অফিস ছিল। সেটি ভেঙে ফেলায় নতুন অফিসটি করা হয়। সেখানে আমাদের কিছু কর্মচারী থাকত। এমনটি হওয়ার কথা নয়। আমি কালকে খোঁজ নেব।
নাম না প্রকাশের শর্তে গ্যাংয়ের এক সদস্য জানান, তাদের অধিকাংশ সদস্য ঢাকার স্থানীয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগেই উদ্যানের বিষয়ে জানত। এর আগে তারা হলপাড়া নেশাখোর কল্যাণ সমিতি (হপানেকস) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গ্রুপে যুক্ত ছিল। ২০২২ সালের প্রথমদিকে উদ্যানের লেকপাড়ে বসে গ্যাংয়ের নাম প্রস্তাব করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদ। তার বাসা লালবাগে। তারা একশ’ গ্রাম গাঁজা দিয়ে ‘প্রলয় গ্যাং’ উদ্বোধন করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সেই গাঁজা নিয়ে আসেন ফয়সাল আহমেদ সাকিব। তিনি প্রেসিডেন্ট সাকিব নামে পরিচিত। প্রথমে নেশায় সীমাবদ্ধ থাকলেও ধীরে ধীরে তারা ছিনতাই ও মারধরে জড়িয়ে পড়েন।
তিনি আরও জানান, নিত্যনতুন পদ্ধতিতে ছিনতাই করার কারণে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজকে ডাকা হতো ‘ফিটিং গড’ নামে। মারামারিতে সবচেয়ে বেশি অগ্রগামী ছিল শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের তবারক মিয়া। তারা যে জায়গায় আড্ডা দিত সে জায়গার একটি নাম দিত। উদ্যানে তাদের রফিক চত্বর, পড়শীবাজার, গ্লাস টাওয়ার ইত্যাদি নানা আড্ডাস্থল ছিল। দলবদ্ধ হয়ে থাকার কারণে ‘বড় ভাইরা’ তাদের সমীহ করত। তাদের পছন্দ করত। এজন্য অনেকে তাদের সঙ্গে চলতে শুরু করে।
ঢাবির ডা. শহীদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের তৃতীয় তলায় কার্যালয় বানিয়েছে প্রলয় গ্যাং। ছবি: সংগৃহীত
গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দিন হলের সামনে জোবায়ের ইবনে হুমায়ুন নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে আলোচনায় আসে প্রলয় গ্যাং। এ ঘটনায় জোবায়েরের মা ১৯ জনের পরিচয়ে এবং ছয় থেকে সাতজন অজ্ঞাতপরিচয় নামে শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় গতকাল সোমবার দুইজনকে কারাগারে পাঠিয়েছে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট (সিএমএম)। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্যাং সদস্যদের চিহ্নিত করতে ১১ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
শাহবাগ থানার ওসি নুর মোহাম্মদ বলেন, অতীতে তাদের নামে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। তদন্ত চলমান আছে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com