
নিউ সুপারমার্কেটে আগুন
সহযোগিতার হাত বাড়ানো ৪৩ পুলিশ সদস্যকে পুরস্কার
প্রকাশ: ০২ মে ২৩ । ২০:৫৯ | আপডেট: ০২ মে ২৩ । ২০:৫৯
সমকাল প্রতিবেদক

ব্যবসায়ীদের মালপত্র নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা - ফাইল ছবি
রাজধানীর নিউ সুপারমার্কেট (দক্ষিণ) ভবনে আগুন লাগলে দোকানের ভেতর থেকে ব্যবসায়ীদের মালপত্র নিরাপদে সরিয়ে আনতে সহযোগিতা করেন পুলিশ সদস্যরা। সেদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ৪৩ পুলিশ সদস্যকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের শহীদ এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তনে তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
পুরস্কার পাওয়া কনস্টেবল রাজু আহমেদ রাজের সঙ্গে কথা হয় সমকালের। তিনি বলেন, ‘১৫ এপ্রিল নাইট ডিউটিতে ছিলাম। ডিউটি সকাল সাড়ে ৬টায় শেষ হওয়ার কথা। তবে ৫টার দিকে নিউ সুপারমার্কেটে আগুনের সংবাদ আসে। এ সময় পাঁচ প্লাটুন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে যান। প্রথমে আমরা নিরাপত্তার কাজ করছিলাম। পরে ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থলে আসতে শুরু করলে, সেখানে অন্য রকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তাঁরা যাকেই সামনে পাচ্ছিলেন শুধু শেষ সম্বলটুকু (মালপত্র) বাঁচানোর আকুতিই করছিলেন। পরে ডিসি স্যারের নির্দেশে আমরা কিছু সদস্য ব্যবসায়ীদের মালপত্র উদ্ধারে কাজ শুরু করি। আর বাকি সদস্যরা অস্ত্র পাহারা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে কাজ করেন। সেদিন মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি, এটাই জীবনের সার্থকতা।’
পুলিশের এমন মহানুভবতা সে সময় ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভাইরাল হওয়া পুলিশ কনেস্টবলের একজন পরাণ সরকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব মূলত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। কারোর মালপত্র ধরার অনুমতি নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন স্যারদের নির্দেশ না পাব, কারোর কিছু ধরারও সুযোগ নেই। দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় ব্যবসায়ীদের আহাজারি দেখে পীড়া দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল কিছু একটা যদি করতে পারতাম। সে সময় ডিসি স্যার ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি দেখে নির্দেশনা দিলেন তোমাদের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব হয় ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করো।’
পরাণ বলেন, ‘মার্কেটের ভেতরে প্রচণ্ড তাপ এবং কালো ধোঁয়ায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পানি দিচ্ছিলেন। পানিও গরম হয়ে যাচ্ছিল। এরমধ্যে ব্যবসায়ীদের আহাজারি সেটিও সহ্য করার মতো না। তবু যতটুকু সম্ভব তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। ভেতর থেকে মাল নিয়ে এসে পানি মাথায় ঢালছি, একটু ঠান্ডা হলে আবার ভেতরে ঢুকছি।’
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে বিশ্বের উন্নত পুলিশ যেটি করতে পারেনি, সেটি বাংলাদেশ পুলিশ করেছে। এখন এই ইউনিফর্মের মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে। এছাড়া আগামীতে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ আসবে। প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে জীবন দিয়ে হলেও সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘সেদিন পুলিশ সদস্যরা মানবিক কাজের যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন, তাতে খুশি হয়ে ডিএমপি কমিশনার সেসব সদস্যকে সম্মানিত করেছেন।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আজ পুলিশ আছে বলেই আমরা নিরাপদে বাসায় ঘুমাতে পারি। এখন থেকে দোকান মালিক-কর্মচারীরাও পুলিশের পাশে থাকবেন।’
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com