অন্যদৃষ্টি

সালাউদ্দিনের রুচিদুর্ভিক্ষ

প্রকাশ: ০৭ মে ২৩ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মিজান শাজাহান

বেফাঁস মন্তব্যের জন্য তিনি যত বিখ্যাত, ততটা সফলতা তাঁর পেশাদারি দায়িত্বের বেলায় দেখা যায় না। তিনি বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। বেফাঁস কথাবার্তা বলায় সংবাদমাধ্যম তো বটেই, সামাজিক মাধ্যমেও তিনি প্রায়ই ঝড় তুলতে সক্ষম হন। অবশ্য ঝড়টা নিন্দার।  তাঁর মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পদত্যাগ দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। ঝড়টা এতই জোরেশোরে উঠেছিল যে, মন্তব্যটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরপর রাতের বেলায় ভিডিও বার্তায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন সালাউদ্দিন।

কী বলেছেন তিনি? সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ভাষ্য অনুযায়ী, বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার পর সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন কাজী নাবিল আহমেদকে বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের বাফুফে ভবনে ঢুকতে হলে তাঁদের এবং তাঁদের বাপের জুতা পরা ছবি দিতে হবে।’ এ সময় কাজী সালাউদ্দিনকে উদ্দেশ করে কাজী নাবিল আহমেদকেও বলতে শোনা যায়, ‘আমার রিকুয়েস্ট হচ্ছে অন্য। কে আন্ডারওয়্যার পরে বড় হয়েছে আর কে হয়নি, সেটাও দেখতে হবে।’

বাফুফে সভাপতি দাবি করেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে সহকর্মীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আলাপকালে রসিকতাচ্ছলে বলা তাঁর বক্তব্য রেকর্ড হয়ে গেছে। যে সহকর্মীর সঙ্গে কাজী সালাউদ্দিন রসিকতা করছিলেন, তিনি বাফুফের সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ। তিনি যশোর সদর আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যও বটে।

যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম, তাঁরা দু’জন নদীর তীরে বসে জ্যোৎস্না রাতে আকাশের তারা দেখছিলেন। সেই সময় এমন একটা কথা তাঁদের মনে জাগ্রত হলো। কিন্তু মন্তব্য পরের কথা, এ রকম মনোভাব পোষণ করাই তো নিম্নরুচির পরিচয়। এ রকম মনোভাব তো বর্ণবাদী, কৃষকবিদ্বেষী, গরিববিদ্বেষী। ৫০-৬০ বছর আগে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন, ‘দেশে একটা রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। আমরা সেই রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেছি।’ দুই কাজীর মন্তব্যে সেই দুর্ভিক্ষের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি নাট্যকার মামুনুর রশীদ রুচির দুর্ভিক্ষের কারণে হিরো আলমের মতো লোকের উত্থান হয়েছে মর্মে মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছিলেন। হিরো আলম সংগ্রাম করে উঠে এসেছেন। বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারেননি, শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে জানেন না। তারপরও কাজী সালাউদ্দিন ও কাজী নাবিলের মতো কোনো উক্তি তো তাঁর মুখে শোনা যায়নি। কে তবে বেশি রুচিশীল ও মানবিক? বাফুফের সভাপতি ও সহসভাপতির সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষোভের কারণ কারও অজানা নয়। বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালি অতীত ছিল। কাজী সালাউদ্দিনও সেই অতীতের অংশ। বাংলাদেশের ক্রিকেট দিন দিন সাফল্যের মুখ দেখলেও ফুটবলের দুর্দিন চলছে। এ জন্য বাফুফেকে দায়ী করেছেন অনেক সাবেক তারকা ফুটবলার। সংবাদমাধ্যমও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তাঁদের ব্যর্থতা পেয়েছে। এসব কারণে সংবাদমাধ্যমের প্রতি কাজী সাহেবদের ক্ষোভ জমতেই পারে। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দায়ে বাফুফের সাধারণ সম্পাদককে জরিমানার পাশাপাশি নিষিদ্ধ করে ফুটবলের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। এ নিয়ে সংবাদ করায় বাফুফে নীতিনির্ধারকরা ক্ষুব্ধ হয়ে থাকতে পারেন।

গত ৫ এপ্রিল মিয়ানমারে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের জন্য এশীয় অঞ্চলের নারী ফুটবল বাছাই পর্বের বি গ্রুপের খেলা ছিল। সেখানে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাধারী বাংলাদেশের মেয়েদের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ২৯ মার্চ বাফুফে জানায়, টাকার অভাবে তাদের পক্ষে দল পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। সাবিনা খাতুন-রূপনা চাকমাদের বাছাইয়ে খেলতে যেতে না পারার জন্য বাফুফেকে দায়ী করেছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। তাঁর মতে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের কাজ করে সরকারকে ভাবমূর্তি সংকটে ফেলেছে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও বাফুফে সভাপতির সমালোচনা করেছেন। সাবেক ফুটবলারদের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এতসব নেতিবাচক সংবাদের চাপ সামলাতে গিয়ে সম্ভবত অন্তর্জ্বালা শুরু হয়েছে বাফুফে কর্মকর্তাদের। বাফুফেতে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারলে তাঁদের জ্বালা হয়তো কমত। কিন্তু বিধি বাম। মনের জ্বালা যে ভাষায় মুখে এলো, তা যখন সবাই জেনে গেল; তখন পদরক্ষা হলেও মুখরক্ষা হবে কী করে!

মিজান শাজাহান: সহ-সম্পাদক, সমকাল
mizanshajahan@gmail.com

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com