হলফনামা বিশ্লেষণ

আ’লীগ প্রার্থী সম্পদে এগিয়ে, শিক্ষায় পিছিয়ে

বরিশাল

প্রকাশ: ২৩ মে ২৩ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশাল ব্যুরো

 বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ছয় মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সম্পদে এগিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তবে শিক্ষায় পিছিয়ে তিনি। গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হলফনামায় নিজেকে স্বশিক্ষিত উল্লেখ করেছেন। সম্পদের হিসাবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছাকাছি অবস্থানে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। শিক্ষায় তিনি বিএসসি। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মুফতি সৈয়দ ম. ফয়জুল করীম কামিল-ফিকাহ, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রূপন এমএসএস, জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু এইচএসসি পাস এবং স্বতন্ত্র আরেক প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদারও স্বশিক্ষিত।

 আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল্লাহর স্ত্রীও কোটিপতি
খুলনায় জাহাজে পণ্য বোঝাই ও খালাসে শ্রমিক সরবরাহের ব্যবসা করেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। এ ব্যবসায় তাঁর দুটি লাইসেন্স রয়েছে যথাক্রমে খুলনা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড এবং ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ (অংশীদারিত্বে)। তাঁর হাতে নগদ রয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭২ টাকা, ব্যাংকে জমা ৭৫ হাজার ৫৭২ টাকা, বন্ড ও ঋণপত্র বাবদ ২০ লাখ টাকা, একটি গাড়ি এবং লাইসেন্স করা দুটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। খুলনায় তাঁর ৪০ লাখ টাকা মূল্যের চার তলা একটি দালান, ঢাকার ধানমন্ডিতে ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ও উত্তরায় ১৪ লাখ টাকা মূল্যের একটি করে অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দিয়ে বছরে আয় করেন ৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৫০ টাকা। ব্যাংক আমানত থেকে আয় ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭২ টাকা। আবুল খায়েরের স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার  টাকা নগদ এবং ব্যাংকে আছে ১২ হাজার ৩৯৭ টাকা। তাঁর নামে কোনো মামলা নেই।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী তাপসও সম্পদশালী
জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুটি প্রতারণা মামলা বিচারাধীন। দুটি মামলাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি দেওয়ানি মামলা রয়েছে। ব্যবসায়ী তাপস একটি প্রিন্টিং কোম্পানির নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সাউথ অ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অংশীদার। পাশাপাশি সাউথ অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও সাউথ অ্যাপোলো প্রপার্টিজের পরিচালক। এই পরিচালক পদের সম্মানী হিসেবে বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বেতন বাবদ বছরে আয় ৭৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯২৭ টাকা। প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ২৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। সঞ্চয়ী আমানতের মুনাফা বাবদ আয় ১ হাজার ১৯৬ টাকা। তিনি ২ কোটি ২৯ লাখ ২৫ হাজার নগদ টাকার মালিক। ব্যাংকে জমা ৬৫ লাখ ৩২ হাজার ২৪ টাকা। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের শেয়ারমূল্যের ১২ লাখ ৫০ হাজার, মেডিকেল কলেজের ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার, প্রপার্টিজে ১৫ লাখ টাকা। নিজের ৩৮ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি রয়েছে। যৌথ মালিকানার চার তলা ভবন। প্রাইম ব্যাংকের কাছ থেকে গৃহসংস্কার ঋণ বাবদ ১৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৫৫ টাকা নিয়েছেন।

ইসলামী আন্দোলনের ফয়জুলের আয়ের উৎস চাকরি
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর আয়ের প্রধান উৎস চাকরি। তিনি চরমোনাই আহসানাবাদ রশীদিয়া কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস বা হাদিস বিশারদ। তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে বছরে আয় হয় ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা। শিক্ষকতা পেশায় বছরে বেতন বাবদ পান ৭ লাখ ৬ হাজার টাকা। ফয়জুল করিম ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫১৩ নগদ টাকার মালিক। ব্যাংকে জমা আছে ১ লাখ ২১ হাজার ৭৬৯ টাকা। ৮২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ কৃষিজমি এবং ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ অকৃষি জমির মালিক। তাঁর দালান রয়েছে একটি এবং দুটি অ্যাপার্টমেন্ট। তাঁর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত পাঁচটি মামলা দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে ২০০৩ সালে দ্রুত বিচার আইনে মামলা ছিল। তবে সবগুলো মামলারই নিষ্পত্তি হয়েছে।

মা-বোনের কাছ থেকে ধার নিয়েছেন কামরুল
স্বতন্ত্র এ প্রার্থীর প্রধান আয়ের উৎস দেখানো হয়েছে মৎস্য, পশু ও কৃষি খামার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান রিভার আইল্যান্ড ইন্টিগ্রেশন লিমিটেড। এ ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫ টাকা। ব্যাংক সুদ বাবদ ১ হাজার ৯৩৬ টাকা। নগদ ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৪০৫ টাকার মালিক। ব্যাংকে জমা ১২ হাজার ১৬৫ টাকা। তাঁর প্রতিষ্ঠান রিভার আইল্যান্ড ইন্টিগ্রেশন ১ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ারের মালিক। ২৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যমানের একটি গাড়ির মালিক। তবে মা ও বোনের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা ধার নিয়েছেন তিনি।

জাকের পার্টির বাচ্চুর আয় হোটেল ব্যবসা
মিজানুর রহমান বাচ্চুর আয়ের প্রধান উৎস আবাসিক হোটেল ব্যবসা ও গৃহসম্পত্তি আয়। তিনি ঘরভাড়া বাবদ বছরে ৬ লাখ ৬ হাজার ৯৮০ টাকা ও দোকান ভাড়া দিয়ে ৬ লাখ ২৩ হাজার ৬৬০ টাকা আয় করেন। তাঁর কোনো নগদ টাকা না থাকলেও স্ত্রীর নগদ ৩ লাখ ও ব্যাংকে ছেলের নামে জমা ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। নিজের একটি প্রাইভেটকার ও একটি মোটরসাইকেল রয়েছে।

যানবাহনে এগিয়ে আলী হোসেন
স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার আলী অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক। এটাই তাঁর আয়ের প্রধান উৎস। বাড়ি ও দোকান ভাড়া দিয়ে বছরে আয় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আয় ৬ লাখ ৩৭ হাজার ১৩ টাকা। নগদ ৫০ হাজার টাকার মালিক। ব্যাংকে জমা ১৮ লাখ টাকা। দুটি ট্রাক, একটি মোটরগাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল রয়েছে। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী মিলে ২০ ভরি স্বর্ণের মালিক। তিনি দোকান স্থাপনের জন্য ৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কৃষিজমি পৈতৃক সূত্রে ৩ একর এবং ইজারা নিয়েছেন ২ একর। অকৃষি জমির মালিক ৫৬ শতাংশ। একটি ভবনের মালিক। উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেছেন।   

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com