
ডিএসইতে লেনদেন ফের ৯০০ কোটি টাকা ছাড়াল
সাড়ে ছয় মাস পর ডিএসইএক্স ৬৩০০ পয়েন্টে
প্রকাশ: ২৪ মে ২৩ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সমকাল প্রতিবেদক

ঢাকার শেয়ারবাজার ডিএসইতে টাকার অঙ্কে শেয়ার লেনদেন ফের ৯০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার এ বাজারে কেনাবেচা হয়েছে ৯২০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের শেয়ার। এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রায় ৯৩৩ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। গত ২৭ এপ্রিলও কেনাবেচা হয়েছিল ৯৬৭ কোটি টাকার বেশি শেয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে এ পরিমাণ লেনদেন খুব কমই হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত এ বছরের ৯৫ কার্যদিবসের মধ্যে মাত্র পাঁচ দিন ৯০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। তবে এখনও লেনদেন হাজার কোটি টাকা পার হয়নি। গত ২৭ এপ্রিলের লেনদেনই এ বছরের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ লেনদেন।
চলতি বছর এক দিনের লেনদেন এখনও হাজার কোটি টাকা পার না হলেও সাম্প্রতিক লেনদেন বাড়ায় খুশি বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের আশা, লেনদেন আরও বাড়বে। এ অবস্থায় দীর্ঘ মন্দার পর নতুন করে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন অনেকে। কারণ সিংহভাগ শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে নামার কারণে গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে লেনদেনও ২০০-৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে গিয়েছিল।
গত মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের পর থেকে ধীরে ধীরে কিছু শেয়ার ফ্লোর প্রাইস ছাড়তে শুরু করে। তালিকাভুক্ত ৩৯২ শেয়ারের মধ্যে ২৫৬টিকে ফ্লোর প্রাইসে নিয়ে মে মাসের লেনদেন শুরু হয়েছিল। গতকাল লেনদেন শেষে এ সংখ্যা ২২০টিতে নেমে এসেছে। ফ্লোর প্রাইস ছেড়ে আসা শেয়ারগুলোর লেনদেন বৃদ্ধি সার্বিক লেনদেন বাড়াতে সহায়তা করছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত এপ্রিলের ১৮ কার্যদিবসে যেখানে ১০ হাজার ২৯৬ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়, সেখানে গতকাল পর্যন্ত চলতি মে মাসের ১৫ কার্যদিবসেই ১১ হাজার ৭৯২ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। দৈনিক গড় লেনদেন মে মাসে এসে ৭৮৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত এক মাসে লেনদেন বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইস্টার্ন হাউজিং, ইউনিক হোটেল, সি পার্ল হোটেল, জেমিনি সি ফুডস, ইন্ট্রাকো সিএনজি, জেনেক্স ইনফোসিস, রূপালী লাইফ, আমরা নেটওয়ার্কস ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ।
সোমবারের তুলনায় গতকাল ডিএসইর লেনদেন বেড়েছে প্রায় ২১৩ কোটি টাকা। এতে ব্লক মার্কেটে ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ১০৯ কোটি টাকা লেনদেনের বড় ভূমিকা ছিল। এর বাইরে সার্বিক হিসাবে বীমা খাতের ৫১ কোটি টাকা, ওষুধ ও রসায়ন খাতের প্রায় ৪৬ কোটি টাকা, সেবা ও নির্মাণ খাতের ১৯ কোটি টাকা, সিমেন্ট খাতের পৌনে ১৯ কোটি টাকা এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের সাড়ে ১৩ কোটি টাকার লেনদেন বৃদ্ধিরও ভূমিকা আছে।
বিপরীতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের লেনদেন সাড়ে ১৩ কোটি টাকা কমেছে। একইভাবে বস্ত্র খাতের লেনদেন ১১ কোটি টাকা কমে সাড়ে ৫১ কোটি টাকায় এবং সিরামিক খাতের লেনদেন পৌনে ১০ কোটি টাকা কমে ১০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে।
ব্লক লেনদেন নিয়ে একক কোম্পানি হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ছিল লেনদেনের শীর্ষে। প্রায় ৪২ কোটি টাকার লেনদেন নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের প্রায় ৪১ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
এদিকে উল্লেখযোগ্য শেয়ারের দর বাড়ায় প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্সও ২৪ পয়েন্ট বেড়ে গত সাড়ে ছয় মাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে। ক্লোজিং পয়েন্টের হিসাবে গতকাল সূচকটির সর্বশেষ অবস্থান ছিল ৬৩০৬ পয়েন্টে। অব্যাহত দরপতনের মুখে গত বছরের ১৩ নভেম্বর সূচকটি ৬৩০৪ পয়েন্ট ওঠে ফের নেমে যায়। লেনদেনের মাঝে গত ২৯ জানুয়ারি কিছু সময়ের জন্য সূচকটি ৬৩০০ পয়েন্ট পার করলেও তা স্থায়ী হয়নি।
গতকালের সূচক বৃদ্ধিতে সর্বাধিক অবদান ছিল সি পার্ল হোটেল, হেইডেলবার্গ সিমেন্ট, লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট, ইউনিক হোটেল। এ পাঁচ শেয়ারের দরবৃদ্ধিতেই সূচক প্রায় সাড়ে ৮ পয়েন্ট বেড়েছে। ডিএসইতে গতকাল ১৩৪ শেয়ারের দর বেড়েছে, কমেছে ৩৬টির এবং অপরিবর্তিত ১৭৮টির দর।
দিনের পর দিন ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকা শেয়ারে ক্রেতাশূন্য অবস্থা দেখে দেখে হতাশ বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যে কিছুটা ব্যতিক্রমী দিন দেখলেন তাঁরা। অবশ্য এর বেশিরভাগ শেয়ার ছিল রুগ্ণ বা বন্ধ কোম্পানি। গতকাল ডিএসইতে যেসব শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয় সেগুলো হলো– আরামিট সিমেন্ট, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, জিকিউ বলপেন, হেইডেলবার্গ সিমেন্ট, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্দার্ন জুট, ন্যাশনাল টি এবং নতুন তালিকাভুক্ত ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com