ধারাবাহিক

রণজিৎ গুহ ও নিম্নবর্গ নিয়ে তাঁর ইতিহাস-চর্চা

তুমুল গাঢ় সমাচার

প্রকাশ: ২৬ মে ২৩ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বিনায়ক সেন

রণজিৎ গুহ [২৩ মে ১৯২৩–২৮ এপ্রিল ২০২৩]

পর্ব : ০১

১। প্রান্তবর্তী মানুষ
রণজিৎ গুহকে নিয়ে তাঁর প্রায় শতায়ু জীবনের অবসানের পর পত্রপত্রিকায় লেখালিখি অব্যাহত রয়েছে। জীবদ্দশাতে প্রায় কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। তার পেছনে একটি কারণ ছিল যে তিনি নিজেকে কিছুটা সচেতনভাবেই যেন প্রান্তবর্তী করে রেখে দিয়েছিলেন। মেইনস্ট্রিম বনাম বিকল্প ইতিহাস-চর্চার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তিনি হয়তো নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন আরও নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেটা না করে তিনি নিজেকে রেখে দিয়েছিলেন ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্স বা অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অপেক্ষাকৃত নির্জন অবস্থানে। এটা হয়তো ছিল তাঁর সচেতন সিদ্ধান্ত। নিরিবিলি ধ্যানকেন্দ্রী দূরত্বে বসে অবলোকন করা সহজ মেইনস্ট্রিমের ইতিহাস-চর্চার গতি-প্রকৃতি। যেমন করে আদিবাসীরা ঝোপে-ঝাড়ে লুকিয়ে থেকে অবলোকন করে ঔপনিবেশিক সেনাদলকে।
‘পলিটিকস অব নোলেজের’ কথাই যদি বলি, তবে সে রাজনৈতিক লড়াইয়ে প্রান্তবর্তী মানুষদের পক্ষে লড়াইয়ে পুরোধা যোদ্ধা ছিলেন রণজিৎ গুহ। একাধারে এই যুদ্ধের পরিকল্পক, সংগঠক, নির্দেশদাতা ও যোদ্ধা।
রণজিতের জন্ম হয়েছিল বরিশালের সিদ্ধকাঠিতে, মৃত্যু ভিয়েনায়। শেষের দশ-পনেরো বছর তাঁর খুব কাছের দু’তিনজন আত্মার আত্মীয় সাব-অলটার্ন স্টাডিজের সাথে যুক্ত গবেষক ছাড়া প্রায় কারও সাথেই যোগাযোগ রাখতেন না তিনি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও দীপেশ চক্রবর্তী; হয়তো আরও কেউ কেউ। শুনেছি পরিবার-স্বজনদের সাথে তাঁর যোগাযোগ ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে এসেছিল। তার কারণ জানা নেই, তবে কিছুটা যোগাযোগ বোধ করি একমাত্র তাঁর ছোট ভাইয়ের মেয়ে দেবারতির সাথে থেকে থাকবে। এর কারণ শুধু অনুমানই করা চলে। কলকাতার বনেদি মধ্যবিত্তের মধ্যে আধা-সামন্ত্রতন্ত্রের প্রভাব নানাভাবেই উঁকি-ঝুঁকি দিত এমনকি সত্তর-আশির দশকেও। ডোমেস্টিসিটির ঘেরাটোপে বদ্ধ হয়ে ছটপট করত অনেক প্রাণ– তারা সেকালের মতো অন্তঃপুরবাসিনী না হলেও তাদের গতিবিধি খড়ির গণ্ডিতে বাঁধা। ঘরের কাজ ও বাইরের কাজ উভয় দিকই তাদের সামলাতে হতো। এসব আচার রণজিতের ভালো লাগেনি, এমনকি এ নিয়ে তাঁর মাকেও অনুযোগ করতে দ্বিধা করেননি। একবার রণজিৎ তাঁর বিদেশিনী স্ত্রী মেখ্‌টিল্ডকে নিয়ে ক্যানবেরা থেকে কলকাতায় এলেন। উদ্দেশ্য মায়ের সাথে পরিচয় করানো। এ নিয়ে রণজিতের ভাইঝি দেবারতি পরবর্তী সময়ে লিখেছে:
“That visit of Jethu and Jethima was my first introduction to the idea of ‘personal is political’. During that visit, I often saw Jethu getting angry with his mother, as she made my mother had her meal at the very end after serving everyone else. The goodies, the bigger fish, the bigger glass of milk- all were for the family’s men, while most of the household chores were done by my Ma (mother) alone, day in and day out.”
দেবারতি এ-ও দাবি করেছে যে, এইসব আধা-সামন্তবাদী নিগ্রহ ক্রমাগত অবলোকনের কারণেই রণজিৎ একপর্যায়ে কলকাতার হিন্দু মধ্যবিত্ত পরিবার বা শ্রেণির ওপরেই বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন : ‘Jethu blamed it on the patriarchal.’ এমনকি একপর্যায়ে, দেবারতির মা যখন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলেন, রণজিৎ ‘broke all his ties with his mother and never visited her again.’ মায়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পেছনে ছিল সামন্তবাদী মানসিকতার প্রতি তীব্র বিরুদ্ধাচরণ– তা সে ঘরেই হোক বা বাইরেই হোক। ইতিহাস-চর্চা করতে গিয়ে যিনি সবসময়ে ‘পলিটিকস অব নোলেজ’ নিয়ে সজাগ থেকেছেন, ব্যক্তি বা পারিবারিক জীবনেও তিনি এ বিষয়ে– বিশেষত নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে– বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না। এ ক্ষেত্রে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিকে ‘এক্সট্রিম’ মনে হতে পারে, কিন্তু এক অর্থে তিনি চরমপন্থিই ছিলেন বিশুদ্ধতম অর্থে। রণজিৎ কথাটার মধ্যেই ‘রণ’ লুকিয়ে আছে। যুদ্ধে জয়ী হলেন কিনা, সেটা মহাকালই বলবে। কিন্তু আজীবন যুদ্ধরত ছিলেন, সেটা তাঁর পরম শত্রুও স্বীকার করতে বাধ্য। সেজন্যই মেইনস্টিম ইতিহাস-চর্চার বিপক্ষে ক্রমাগত অবস্থান নিতে পেরেছিলেন এবং নিজেকে তার জন্য তৈরি করতে পেরেছিলেন। এবং এই প্রস্তুতি পর্বে তাঁকে চলতে হয়েছিল প্রায় একাই। আমি সেই ষাট-সত্তর দশকের কথা বলছি যখন পর্যন্ত তাঁর ধারে-পিঠে তরুণ সঙ্গীরা একে একে জমায়েত হতে শুরু করেনি। তরুণ বিদগ্ধ অনুসারীগণ– যাদের তুলনায় রণজিৎ ছিলেন প্রায় দুই দশকের বেশি বয়সী– সমবেতভাবে একটি সংগঠনের শক্তি বা মহিমা এনে দিয়েছিল কলকাতার নিস্তরঙ্গ জীবনে। রণজিতের দীর্ঘ বুদ্ধিবৃত্তিক নিঃসঙ্গতার অবসান ঘটেছিল সাব-অলটার্ন স্টাডিজের ঘোষণার মাধ্যমে। মধ্যযুগের ওপরে গবেষক ও ইতিহাসবিদ আব্দুল মোমিন চৌধুরী যেমন বলেছিলেন, রণজিৎ গুহের সবচেয়ে বড় কীর্তি হচ্ছে একঝাঁক নতুন ইতিহাসবিদের সৃষ্টি। পার্থ চ্যাটার্জি, দীপেশ চক্রবর্তী, গৌতম ভদ্র, শাহিদ আমীন, জ্ঞান পান্ডে– ইতিহাস-রাজনীতি-সমাজতত্ত্ব-দর্শন-সাহিত্য বিবিধ ক্ষেত্রে বিচরণ তাঁদের। কিন্তু এর শুরুটা হয়েছিল রণজিৎ গুহকে দিয়ে। বাংলার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে আলোচনা দিয়ে যার সূত্রপাত।

২। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ছায়া
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত মানে চিরকালের জন্য জমিদারি বন্দোবস্ত। এই বন্দোবস্তের পত্তন হয়েছিল ১৭৯৩ সালে। ওরকম একটি সুদূরবর্তী ঘটনাকে কেন্দ্র করে রণজিৎ গুহের এতটা উৎসাহ কেন– তা নিয়ে একটি প্রশ্ন উঠতেই পারে। কেননা আমরা তো জানি যে, এই দীর্ঘ সময়ে এই ব্যবস্থার ভালো-মন্দ নিয়ে লেখা তো কম হয়নি, এমনকি পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত খতিয়ান নিলেও। রণজিৎ গুহ এর একটি সমকালীন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হলো ফ্লুড কমিশনের রিপোর্ট। তখন চারদিকে একটা রব উঠল যে জমিদারি ব্যবস্থা অচিরেই উঠে যাচ্ছে বা এর বড় আকারের সংস্কার হতে যাচ্ছে। কলকাতা বা ঢাকার (হিন্দু) মধ্যবিত্ত সমাজ– যারা এই ব্যবস্থার ছায়ায় এতকাল লালিত-পালিত হয়েছে– তারা আকস্মিক ভয়ে যেন কুঁকড়ে গেল। রণজিৎ গুহ এভাবে বর্ণনা দিয়েছেন:
‘আমার বাবা ছিলেন হাইকোর্টের উকিল। জীবিকার প্রয়োজনে অনেক বই পড়তেন ও কিনতেন। একদিন দেখি ফ্লুড কমিশনের রিপোর্ট ছয় খণ্ড এসে গেছে। শুনেছিলাম যে তাতে নাকি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষকসভার পক্ষ থেকে একটা বিবৃতি ছাপা হয়েছে। কৃষকসভা যে কমিউনিস্ট পার্টির পরিচালিত গণ-সংগঠন তা জানা ছিল। তাই কলেজ কামিয়ে রিপোর্টটা নিয়ে বসে গেলাম। সেই পড়ার ফলেই গ্রাম-সমাজে ক্ষমতার সম্পর্ক নিয়ে আমার বালকবয়সের কৌতূহল প্রথম যৌবনে রাজনৈতিক জিজ্ঞাসায় রূপায়িত হয় এবং কালক্রমে আমাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ইতিহাস রচনায় প্রবৃত্ত করে।
তবে ভূমিস্বত্ব নিয়ে যে আলোচনা ও বাগ্‌বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়েছিল মহামন্দা ও মহাযুদ্ধের যুগে, তার সঙ্গে, আপাতদৃষ্টিতে, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে লেখা আমার রচনার মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না– না বিষয়বস্তুতে, না দৃষ্টিভঙ্গিতে। জমিদারি প্রথার তৎকালীন সংকট ও তা সমাধানের উপায় কী, তা আমার জিজ্ঞাসা নয়। আমার প্রশ্নও সেই সংকটকে ছুঁয়েছে, তবে সরলে নয় তির্যকে: অর্থাৎ সাম্প্রতিকে নয়– অতীতে দেড়শ বছরের ব্যবধানে, প্রত্যক্ষের প্রতীয়মানতায় নয়– ধারণায়, লক্ষণে নয়– কারণে। কেন, এদিক থেকে, আমার ইতিহাস-চিন্তা উন্মার্গগামী হলো? উত্তরে আমি কেবল এটুকু বলতে পারি যে, অপরিসর গ্রাম্য পরিবেশে কিছু অসংগতির আভাসে যেমন বিভ্রান্ত বোধ করেছিলাম প্রথম বয়সে, তেমনি আবার যৌবনে আরও বড় মাপের আরেকটু জটিল অসংগতি-প্যারাডক্স আমার সংশয়-প্রবণতাকে উত্তেজিত করে।
আমি তখন এমএ ক্লাসে এক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকের কাছে ইংরেজ রাজত্বে বঙ্গদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাস পড়া নিচ্ছি। সেই সূত্রেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মূল প্রবক্তা ফিলিপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে লাট কাউন্সিলে ওয়ারেন হেস্টিংসের মতানৈক্যের বিবরণ পড়ে আমার যেন মনে হচ্ছিল যে, রাজস্ব ও রাষ্ট্রক্ষমতার স্বার্থে বাংলার কৃষিতে এক প্রকার ধনতন্ত্রের প্রবর্তন করাই ফ্রান্সিসের উদ্দেশ্য। অথচ ফ্লুড কমিশনের রিপোর্টে সংকলিত বিবৃতিগুলো থেকে স্পষ্ট জানা যায় যে, সেই বন্দোবস্তের জোরেই জমিদারি প্রথা গ্রাম-সমাজে আধাসামন্ত শোষণ ও সংস্কৃতিকে এতকাল কায়েম রাখতে পেরেছে। তাহলে কি বুঝতে হবে যে মূল পরিকল্পনাটিতেই এমন কিছু স্ববিরোধিতা ছিল, যা তার ধারণারই মর্মস্থ এবং যার ফলে তত্ত্বে ও প্রয়োগে সামঞ্জস্য ঘটতে পারেনি? ভাবি, এই অসংগতি কি আমারই মিথ্যা অনুমান, নাকি ছিটেফোঁটা ঐতিহাসিক সত্য তাতে থাকলেও থাকতে পারে?
কী করে সেই সংশয়ের নিরসন হয় জানি না, অথচ তা মন থেকে সরাতেও পারি না। তাই মরিয়া হয়ে অধ্যাপক মহাশয়কে একদিন জিজ্ঞেস করে বসলুম, আর তিনিও সোজাসুজি উত্তর দিলেন– থাক, এখন ওসব থাক, আগে পরীক্ষাটা ভালো করে দাও, তারপরে দেখা যাবে। তিনি আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, আমার সাফল্য কামনা করেন বলেই সেই রকম উপদেশ দিলেন। কিন্তু আমার জিজ্ঞাসা যে বাগ মানে না। নানা বই উল্টোই, উত্তর খুঁজি। মাঝে মাঝে দু-এক ঝলক আলো এসে পড়ে  এখান থেকে ওখান থেকে, মনে হয় যা ভাবছি তা হয়তো অবান্তর নয়। কিন্তু এমন কোনো তথ্য মিলছে না যে তার ওপর নির্ভর করে সঠিক কিছু সিদ্ধান্তে আসা যায়।’
এই ধাঁধার কারণটি কী? এলিয়ট বলেছিলেন– ‘Between the idea and reality/Falls the Shadow’ ev ‘Between the conception and creation/Falls the Shadow’. এই ধাঁধা কি সে রকমই কিছু: ‘ভেবেছিলাম এক, আর হলো আরেক। শিব গড়তে বাঁদর গড়া?’ আপাতদৃষ্টিতে যেটি কেবল ‘আইডিয়ার ইতিহাস’, রণজিৎ গুহের হাতে পড়ে তা অন্য এক টুইস্ট পেল। প্রথম পর্যায়ের ধাঁধা ছিল এরকম। ব্রিটিশরা তো এ দেশে জমিতে ব্যক্তিগত মালিকানার প্রবর্তন করতে চেয়েছিল এবং তারা আশা করেছিল যে, এটি করা হলে জমিতে বিনিয়োগের প্রতি জমির মালিকের আগ্রহ বাড়বে এবং কালক্রমে একটি পুঁজিবাদী খামার ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। যেমনটা হয়েছিল ইউরোপে, কিন্তু তা না হয়ে এক ধরনের ‘সামন্তবাদী’ বা ‘আধা-সামন্তবাদী’ ব্যবস্থার জন্ম হলো কেন পুঁজিবাদের পরিবর্তে?
১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তন যাঁরা চেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন স্যার ফিলিপ ফ্রান্সিস। তিনি তো জমিতে ব্যক্তিগত মালিকানা ব্যবস্থার ঘোর সমর্থক ছিলেন। রণজিৎ তাঁকে অর্থশাস্ত্রের জনক এডাম স্মিথের সাথে অনেক ক্ষেত্রে তুলনা করেছেন প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার মানদণ্ডে। তাহলে তিনি কেন বুঝতে পারছিলেন না যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের নামে যে-ব্যবস্থা বাংলার কৃষিতে পত্তন হতে যাচ্ছে, তা কৃষককুলের সর্বনাশ বয়ে আনবে (কতটা সর্বনাশ সেটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বঙ্গদেশের কৃষক’-এর পাঠক মাত্রেই জানেন)।

[ক্রমশ]

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com