ভোটোৎসব

প্রকাশ: ২৭ মে ২৩ । ০০:০০ | আপডেট: ২৭ মে ২৩ । ১২:০৯ | প্রিন্ট সংস্করণ

সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হইল গাজীপুর সিটি করপোরেশন গাসিক নির্বাচন। সমকালসহ প্রায় সকল সংবাদমাধ্যমের সংবাদ অনুসারে, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমের ত্রুটিজনিত কতিপয় দুর্বলতা ব্যতীত নির্বাচনে অনিয়মের কোনো অভিযোগ ছিল না। ভোটারগণ তো বটেই, প্রার্থীরাও কোনো প্রকার অনিয়মের অভিযোগ করেন নাই। এমনকি ভোটকে কেন্দ্র করিয়া বিশেষত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হইবার যে নেতিবাচক ঐতিহ্য দীর্ঘদিন ধরিয়া চলিয়া আসিতেছে, উহাও গাসিক নির্বাচনে ছিল না বলিলেই চলে। ফলে কোনো প্রকার ভয়ভীতি ব্যতিরেকে সম্পূর্ণ মুক্তমনে আপন আপন ভোটাধিকার প্রয়োগ করিয়াছেন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল ভোটার। উল্লেখ্য, দেশের সর্ববৃহৎ এই সিটি করপোরেশনে ভোটারসংখ্যা ১১ লক্ষাধিক; আর কেন্দ্রসংখ্যা ছিল ৪৮০। তন্মধ্যে ৩৫১টা ছিল নির্বাচন কমিশনের ঘোষণানুযায়ী  ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থাৎ এত বৃহৎ আয়োজন শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত করা সহজ বিষয় ছিল না। তৎসত্ত্বেও কোথাও কোনো গোলযোগ ঘটে নাই। উপরন্তু মেয়র পদে যিনি জয়ী হইয়াছেন, তিনি একজন গৃহবধূ হইলেও শাসক দল হইতে বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা। অর্থাৎ তিনি ছিলেন কার্যত শাসক দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। এ ধরনের পরিস্থিতিতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ রাখা কঠিন হইয়া পড়ে। কিন্তু গাসিক নির্বাচনের কোনো পর্যায়ে শান্তি বিঘ্নিত হইতে দেখা যায় নাই।

স্মরণ করা যাইতে পারে, দেশে বিশেষ করিয়া বিগত দুইটা নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে সকল জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইয়াছিল, ঐগুলির অধিকাংশেরই মান সম্পর্কে জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন বিদ্যমান। ঐ নির্বাচনসমূহে একদিকে বিপুলসংখ্যক প্রার্থী দৃষ্টিকটুভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য, মেয়র বা চেয়ারম্যান হইয়াছেন। অপরদিকে শাসক দল সমর্থিত প্রার্থী কর্তৃক প্রতিপক্ষকে মারধর, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও জাল ভোট প্রদানের মতন ঘটনা প্রায় নিয়মে পরিণত হইয়াছিল। খুনাখুনিসহ নির্বাচনী সহিংসতার মাত্রা ছিল নজিরবিহীন। মোট কথা, সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনের নিছক দর্শকের ভূমিকা পালনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনমাত্রই প্রহসনে পরিণত হয়; ভোটাররা হইয়া পড়ে ভোটকেন্দ্রবিমুখ। যদি বলা হয়, সদ্য অনুষ্ঠিত গাসিক নির্বাচন ঐ হতাশাজনক ধারায় ছেদ ঘটাইয়াছে, তাহা ভুল হইবে না বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। এই ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ দিলেও বাড়াবাড়ি হইবে না।

শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, নির্বাচন কমিশনের কঠোরতার কারণে এই নির্বাচনে শাসক দলের মেয়র প্রার্থীকেও ঢাকায় আসিয়া আচরণবিধি ভঙ্গ না করিবার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে হইয়াছে। একই অপরাধে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে প্রার্থিতাও হারাইতে হয়। অধিকন্তু প্রতিটা কেন্দ্রে গোপন ক্যামেরা স্থাপন করিয়া নির্বাচন কমিশন ঢাকা হইতেও গোটা নির্বাচনে নজরদারি চালাইয়াছে। ফলস্বরূপ গোপন ভোটকক্ষে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দুইজনকে তাৎক্ষণিক শাস্তি পাইতে হইয়াছে। সন্দেহ নাই, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার উচ্চারিত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানমতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতাদানে গাজীপুর প্রশাসনের টনক নাড়িয়াছে। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন এই দেশে কোনো নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসাপ্রাপ্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে ঘোষণা দিয়াছে, উহাও সংশ্লিষ্ট সকলকে সুষ্ঠু নির্বাচনে মনোযোগী করিয়া থাকিতে পারে। তবে অন্তত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের দৃঢ়তা যে একটা সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা দেয়– গাসিক নির্বাচন উহা পুনরায় প্রমাণ করিল।

গত বছরের মার্চে দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনাররা বিগত দুই পূর্বসূরির লেগাসিমুক্ত, তৎসহিত ভোটারসহ নির্বাচনের সকল অংশীজনের আস্থা অর্জন করিবার অঙ্গীকার করিয়াছিলেন। গাসিক নির্বাচন সে অঙ্গীকার পূরণের আলামত প্রদর্শন করিয়াছে। আমাদের প্রত্যাশা, আগামী দিনগুলিতে তাহা আরও সুস্পষ্ট হইবে। গণতন্ত্র যেমন টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত, তেমনি গণতন্ত্রের প্রথম কথা হইল, শাসক বাছিয়া লইতে জনগণের পূর্ণ অধিকারের নিশ্চয়তা– ইহা কে অস্বীকার করিবে?

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com