হাতির ভয়ে জনশূন্য আদর্শ গ্রামে আবার ফিরছেন মানুষ
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো শিগগিরই উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হবে সমকাল
মুহাম্মদ এরশাদ, চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ২২:৩৪
বছর বিশেক আগে জঙ্গল জামিজুরী আদর্শ গ্রামের মানুষ নতুন ঘর পেয়ে দারুণ খুশি হয়েছিলেন। সেই ঘরে তারা বসবাসও শুরু করেন। কিন্তু এরই মধ্যে হানা দেয় বন্য হাতির পাল। গ্রামের একজন মানুষ হাতির আক্রমণে মারাও যান। এরপর ভয়ে আদর্শ গ্রামের ১৬০ পরিবার অন্যত্র পালিয়ে যায়। সেই থেকে পরিত্যক্ত ছিল এসব ঘর। সাম্প্রতিক সময় ঘরগুলো আবার নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী মাসেই উপকারভোগীদের কাছে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে।
চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার জঙ্গল জামিজুরী আদর্শ গ্রামে আশ্রয়ণের ১৬০টি ঘর নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছে এসব ঘর। ৫ম পর্যায়ে ৩ একর ২০ শতক জমির ওপর এসব ঘর নির্মাণকাজ গত জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। দুর্গম এলাকায় নির্মাণসামগ্রী নেওয়া কষ্টসাধ্য হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষে উপকারভোগীদের কাছে ঘরগুলো হস্তান্তরের চেষ্টা করছে উপজেলা প্রশাসন।
জানা যায়, ২০০৫ সালে জঙ্গল জামিজুরী আদর্শ গ্রামে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে লোহার এঙ্গেল ও টিন দিয়ে ৪০টি ঘর নির্মাণ করে স্থানীয় ভূমি ও গৃহহীনদের কাছে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। তখন উপকারভোগীরা ঘরগুলো বরাদ্দ পেয়ে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু বাদ সাধে বন্যহাতির পাল। তখন প্রায় প্রতি রাতেই হাতির পাল হানা দিত আদর্শ গ্রামে। এক পর্যায়ে হাতির হামলায় প্রাণ হারান আদর্শ গ্রামের এক বাসিন্দা। এরপর থেকে প্রাণে বাঁচতে একে একে নিজেদের শেষ আশ্রয়স্থল ছেড়ে দেন উপকারভোগীরা। আর এভাবে কয়েক মাসের মধ্যে বসতিশূন্য হয়ে পড়ে পুরো আদর্শ গ্রাম। বছরের পর বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল ঘরগুলো।
গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৫ম পর্যায়ে ওই এলাকায় পুরোনো টিনের ঘরগুলো ভেঙে নতুন করে ১৬০টি দৃষ্টিনন্দন সেমিপাকা ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষে উপকারভোগীদের কাছে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে। হাতির উপদ্রব না থাকায় জামিজুরী আদর্শ গ্রামে আবার ফিরে আসবে প্রাণচাঞ্চল্য। পাহাড়ের ভেতর রঙিন টিনের ঘরগুলো সুখের মায়া ছড়াবে।
স্থানীয় জনগণের দাবি, নির্মাণাধীন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর ওপরের চালায় কাঠের পরিবর্তে লোহার এঙ্গেল ব্যবহার করলে আরও টেকসই ও মজবুত হতো। এর আগে আশ্রয়ণ যেসব প্রকল্পের ঘরে লোহার বদলে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে সেসব ঘরের কাঠগুলো অল্প কিছুদিন পর পোকায় ধরে নষ্ট হয়ে যায়। ছাল নষ্ট হয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় উপকারভোগীদের।
স্থানীয় গৌতম দাশ জানান, একসঙ্গে ১৬০টি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করায় জঙ্গল জামিজুরী এলাকায় আবারও মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। তবে এসব ঘরে যাতায়াতের ব্যবস্থা ভালো নয়। আদর্শ গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনকারী
সাতছড়িখালে ইতিপূর্বে নির্মিত সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে পুরোপুরি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। আদর্শ গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করতে সাতছড়ি খালে সেতু নির্মাণ জরুরি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘দোহাজারী পৌরসভার জঙ্গল জামিজুরীতে নির্মাণাধীন প্রতিটি ঘর ২২/২০ ফুট আকারের এবং উপরের ছালা কাঠ দিয়ে ডিজাইন অনুযায়ীই টেকসইভাবে তৈরি করা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যেই ঘরগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হবে। এরপর যাচাই-বাচাই করে উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আদর্শ গ্রামে যাতায়াত স্থাপনকারী সাতছড়িখালে নতুন সেতু নির্মাণের ব্যাপারে ইতিমধ্যে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি এলজিইডি অফিসকেও অবহিত করা হয়েছে।’
চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিব হোসেন জানান, জঙ্গল জামিজুরীর ১৬০টি পরিবারের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য চারপাশে কাঁটা তারের বাড়ে ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে।’
- বিষয় :
- গ্রাম