ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

পানির অভাবে মরছে সড়কের খেজুর গাছ

পানির অভাবে মরছে  সড়কের খেজুর গাছ

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মরে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি চার লেন সড়ক-দ্বীপে রোপণ করা বিদেশি জাতের ৬০০ খেজুর গাছ সমকাল

 প্রদীপ শীল, রাউজান (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা 

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ২২:৩৫

২০২২ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি চার লেন সড়কের রাউজান অংশে সড়ক-দ্বীপে রোপণ করা হয় বিদেশি জাতের ৬০০ খেজুর গাছ। সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর ব্যক্তিগত অর্থায়নে এই খেজুর গাছগুলো রোপণ শুরু হয়। সড়কের হালদা সেতু থেকে রাবার বাগান পর্যন্ত এক হাজার গাছ রোপণের কথা ছিল। বর্তমানে পানির অভাবে মরে যাচ্ছে সড়ক-দ্বীপের এই গাছ। আগে রাউজান পৌরসভা  গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিলেও এখন তারা এ বিষয়ে আগ্রহী নয়।
প্রথম পর্যায়ে ২০২৩ সালে পৌর এলাকার  মুন্সিরঘাটা থেকে চারাবটতল এলাকাজুড়ে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক-দ্বীপে খেজুর গাছ রোপণ করা হয়। ২০২৪ সালে সড়কের পশ্চিম গহিরা এলাকায় শতাধিক খেজুর গাছ রোপণ করা হয়। তখন গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় রাউজান পৌরসভা। গত দুই বছর গাছগুলোর পরিচর্যা, সার ও পানি দেওয়ার মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করে পৌর কর্তৃপক্ষ। গাছগুলো ডালপালা মেলে দৃষ্টিনন্দন রূপ সৃষ্টি করে সড়কে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে পালিয়ে যান রাউজান পৌরসভার মেয়র। গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরী। এ পরিস্থিতিতে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে ছয় শতাধিক খেজুর গাছ। পানি সংকটে গাছগুলো মৃত্যুর পথে। গাছের ডালাপালা শুকিয়ে যাচ্ছে। গোড়ালির মাটিতে ফাটল ধরেছে। কিছু  গাছ মরেও গেছে। এ অবস্থায় খেজুর গাছগুলো বাঁচাতে দায়িত্ব নিতে চায় না পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও রাউজান উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, কিছু দুষ্কৃতকারী রাতের বেলায় রোপণ করা গাছের গোড়ালিতে লবণ দিয়ে নিধন করছে। 
এ প্রসঙ্গে উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সনজিব সুশীল সমকালকে বলেন, ‘আরব দেশের খেজুর গাছগুলো মূলত মরুভূমির গাছ। রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে আমাদের দেশেও চাষাবাদ করা সম্ভব। সমস্যা হচ্ছে সড়ক-দ্বীপে মাটির গভীরতা মাত্র ২০ ইঞ্চি। এ ছাড়া গাছের নিচে পাকা ঢালাই করা। যার কারণে গাছের শেকড় পানিযুক্ত মাটিতে প্রবেশ করতে পারছে না। তাই পানি সংকটে আছে গাছগুলো। নিয়মিত পানি দিতে হবে গাছের গোড়ায়। গাছগুলো দেখভালের দায়িত্ব কৃষি অফিসের নয়।’
জানতে চাইলে রাউজান পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিদুয়ানুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘সড়ক-দ্বীপে খেজুর গাছের পরিচর্যার দায়িত্ব সাবেক মেয়র ব্যক্তিগতভাবে 


নিয়েছিলেন। বর্তমানে গাছগুলো বাচাঁনো দরকার। আমি ফায়ার সার্ভিসকে অনুরোধ করব পানি দিয়ে যেন গাছগুলো রক্ষা করা হয়।’
 স্খানীয় আবদুল করিম বলেন, ‘গাছগুলো যিনিই রোপণ করুন না কেন এসব তো দেশের সম্পদ। আরবে দেশের খেজুর গাছ সড়ক–দ্বীপে রোপণ করার বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষ অনেক উচ্ছ্বসিত ছিল। এখন গাছগুলো পানি–সংকটে মরে যাচ্ছে–এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কারণ আমাদের দেশে তো পানির অভাব নেই। রাউজান পৌরসভা ও কৃষি অফিস চাইলে খুব সহজে গাছগুলো বাঁচাতে পারে।’
স্থানীয় গৃহিণী শামসুন্নাহার বলেন, ‘আমার খুব ইচ্ছে ছিল এসব গাছে খেজুর ধরবে–এই দৃশ্য দেখার। আমি অনেকবার এসব খেজুর গাছ দেখতে সড়কে গিয়েছি। সরকারি কর্তৃপক্ষ যদি গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করতে না চায়, সমস্যা নেই, আমাদের লিজ দিক, আমরা পরম যত্নে গাছগুলো বাঁচানোর চেষ্টা করব। এসব গাছের ফল খেতে হবে এমন কোন কথা নেই, গাছগুলো সড়কের শোভা বাড়াবে, পরিবেশ রক্ষা করবে, এটাও তো কম নয়।’
 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×