ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

৭৮ লাখ চক্ষু পরীক্ষা অরবিসের

৭৮ লাখ চক্ষু পরীক্ষা অরবিসের

সমাপনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন, অরবিস উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালের পরিচালক মরিস গ্যারিসহ অন্যরা সমকাল

 নাসির উদ্দিন হায়দার

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ২২:৫৯

অরবিস ইন্টারন্যাশনাল গত ৩৯ বছরে বাংলাদেশে ৭৮ লাখ চক্ষু পরীক্ষা পরিচালনা করেছে। ৪৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের চিকিৎসা ও অপটিক্যাল সেবা দিয়েছে, ২ লাখ ৫৮ হাজার চক্ষু সার্জারিতে সহায়তা করেছে। ৪০ হাজার মানুষকে চক্ষু চিকিৎসার ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছে অরবিস। 
পাহাড়তলীর চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (সিইআইটিসি) সার্বিক তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামে ৫ম বারের মতো আসা অরবিস উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শেষে ২৮ নভেম্বর বিদায় নিয়েছে। এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালের ইমরান সেমিনার হলে সমাপনী অনুষ্ঠান হয়। উপস্থিত ছিলেন– সিইআইটিসি’র প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন, অরবিস উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালের পরিচালক মরিস গ্যারি। 
অরবিস ইন্টারন্যাশনালের ভাইস প্রেসিডেন্ট (গ্লোবাল কমিউনিকেশনস অ্যান্ড মার্কেটিং) ক্রিস্টিন টেইলর বলেন, ‘অরবিস গত ৩৯ বছর ধরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। এই চার দশকে, অরবিস শিশুদের চক্ষু চিকিৎসা, মাইক্রোসার্জারি, রেটিনা সার্জারি, কর্নিয়াল রোগ এবং আই ব্যাংকিং, প্রিম্যাচিউর শিশুদের রেটিনোপ্যাথি (আরওপি) এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ওপর স্থানীয় চিকিৎসকদের দক্ষতা ও জ্ঞান উন্নত করতে সহায়তা করেছে।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে এবং অ্যালকন কেয়ারস, অ্যালকন ফাউন্ডেশন ও ফেডেক্সের সহায়তায় অরবিস ফ্লাইং আই হাসপাতাল  চট্টগ্রামে দুই সপ্তাহব্যাপী চক্ষু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গত ১৭ নভেম্বর এ প্রশিক্ষণ শুরু হয়, চলে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। বাংলাদেশে চক্ষু সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য এটি অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটালের একাদশ অবতরণ। প্রথমবার ১৯৮৫ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে এই প্রশিক্ষণ প্রকল্প অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত ফ্লাইং আই হাসপাতাল এবং অরবিসের পার্টনার হাসপাতাল চট্টগ্রাম আই ইনফার্মারি এবং ট্রেনিং কমপ্লেক্সে (সিইআইটিসি) অনুষ্ঠিত হয়।
অরবিস বাংলাদেশে ৪২টি ভিশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে, যা বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোয় চক্ষু সেবা ছড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নারী-নেতৃত্বাধীন গ্রিন ভিশন সেন্টার, যা নারীদের জন্য প্রচলিত বাধাগুলো দূর করে সেবার সুযোগ বৃদ্ধি করে। অরবিস ১৭টি মাধ্যমিক (সেকেন্ডারি) হাসপাতাল, ৪টি তৃতীয় পর্যায়ের (টার্শিয়ারি) হাসপাতাল, ৪টি ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার এবং ২টি ডিজিটাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা বা উন্নত করতে সহায়তা করেছে।  
সহযোগী পরিচালক (গ্লোবাল কমিউনিকেশনস অ্যান্ড মার্কেটিং) জেনা মন্টগোমারি বলেন, ‘অরবিস বাংলাদেশের ৪০০টি কমিউনিটি ক্লিনিককে দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রিম্যাচিউর শিশুদের রেটিনোপ্যাথি নির্ণয় ও ব্যবস্থাপনার জাতীয় গাইডলাইন তৈরি করতে অংশীদার হয়েছে অরবিস। এই রোগটি শিশুদের অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ।’
জানা যায়, ২০০০ সালে অরবিস বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি প্রোগ্রাম চালু করে এবং স্থানীয় চক্ষু হাসপাতাল ও এনজিওদের সঙ্গে মিলে চক্ষু রোগ প্রতিরোধ ও দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করে, যা দূরবর্তী এলাকায় যেমন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায় এবং সিলেটের নারী চা শ্রমিকদের মধ্যেও পৌঁছে গেছে।
ফেডেক্স অরবিসের মিশনে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সহায়তা প্রদান করছে এবং ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অনুদান ও পণ্যসামগ্রী পরিবহনের মাধ্যমে অবদান রেখেছে। ২০২১ সালে ফেডেক্স তাদের দৃষ্টি সুরক্ষা মিশনে অরবিসের প্রতি নতুনভাবে প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে, এখানে তারা ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেয়। এই অনুদান অরবিসের ফ্লাইং আই হাসপাতাল এবং এর প্রকল্পগুলোর জন্য আর্থিক, লজিস্টিক এবং অপারেশনাল সহায়তা প্রদান করবে আগামী পাঁচ বছরে। এ ছাড়া ফেডেক্স বিমান যন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পাইলট প্রশিক্ষণ সরবরাহ করে। ফ্লাইং আই হাসপাতালটি পরিচালনা করেন ফেডেক্স পাইলটরা, যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সময় দান করেন এবং সারাবিশ্বে অরবিস প্রকল্পে বিমানটি পরিচালনা করে নিয়ে যান। 
‘ফ্লাইং আই হাসপাতাল উদ্ভাবন এবং সহানুভূতির এক অসাধারণ উদাহরণ। এটি এমন একটি সম্পদ, যা বিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী কোণগুলোয় আশার আলো ও চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিচ্ছে’– বলেন ফেডেক্সের ফ্লাইট অপারেশনস এবং এয়ারলাইন প্ল্যানিংয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ব্রাউনলি।’
আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের চক্ষু বিশেষজ্ঞদের জন্য অরবিস ফ্লাইং আই হাসপাতালের ভেতরে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে, যা বিশ্বের একমাত্র সম্পূর্ণ স্বীকৃত বিমানভিত্তিক চক্ষু শিক্ষাদান হাসপাতাল। অরবিসের ক্লিনিক্যাল স্টাফ এবং স্বেচ্ছাসেবক বিশেষজ্ঞরা (ভলান্টিয়ার ফ্যাকাল্টি) সারাদেশ থেকে আসা চক্ষু বিশেষজ্ঞদের হাতে-কলমে সার্জারি ও রোগী সেবা প্রশিক্ষণ প্রদান করবে, এর পাশাপাশি সিমুলেশন প্রশিক্ষণ ও চক্ষু কর্মশালার আয়োজনও করা হবে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য স্থানীয় চক্ষু সেবাদাতাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং বাংলাদেশে চক্ষু স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। এ প্রকল্পটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে এবং অ্যালকন ফাউন্ডেশন ও ফেডেক্সের সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া অ্যালকন কেয়ারস, অফথালমোলোজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওএসবি), বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন (বিসিপিএস) এবং ন্যাশনাল আই কেয়ার এই প্রকল্পে সহায়তা করছে। অ্যালকন এবং অরবিসের চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অংশীদারিত্ব রয়েছে, যেখানে তারা অ্যালকন কেয়ারসের মাধ্যমে সরঞ্জাম দান ও অ্যালকন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অর্থায়ন করে থাকে। এ ছাড়া অ্যালকনের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও প্রশিক্ষকরা অরবিস প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে, যেখানে তারা চক্ষু সেবা প্রযুক্তি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করে। অ্যালকন সর্বশেষ ২০২৩ সালে মঙ্গোলিয়ায় ফ্লাইং আই হাসপাতাল প্রকল্পেও সহায়তা করেছে।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×