ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

ঝটিকা মিছিল করে আরও চাপে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ

ঝটিকা মিছিল করে আরও চাপে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ

.

 তৌফিকুল ইসলাম বাবর

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:০২

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করা হয়েছে। তার ওপর চলছে মামলা ও ধরপাকড়। বেশির ভাগ নেতাকর্মী হয়তো বিদেশে চলে গেছেন, নতুবা দেশে আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। সব মিলিয়ে ভালো নেই দলটির নেতাকর্মীরা। তবে শত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে ছাত্রলীগ। মাঝেমধ্যে বের করছে ঝটিকা মিছিল। 
তবে ঝটিকা মিছিল বের করে পার পাচ্ছেন না ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। যে পুলিশ এতদিন বিএনপি-জামায়াতকে চাপে রেখেছিল– তারাই এখন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের চোখে চোখে রাখছে। ঝটিকা মিছিল করার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করার পর চালানো হচ্ছে গ্রেপ্তার অভিযান। ফলে সাধারণ নেতকর্মীদের উজ্জীবিত করার জন্য যে মিছিল, সেটা তাদের জন্য ‘গলার কাঁটায়’ পরিণত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
আওয়ামী লীগ সরকার আমলেও সরকারের চাপের মুখে প্রকাশ্যে খুব একটা সভা-সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপি। জামায়াত-শিবির তো মাঠেই নামতে পারেনি। ফলে এ ধরনের ঝটিকা মিছিল বের করে গা-ঢাকা দিতে হতো এই দুটি দলের নেতাকর্মীদের। চলত নির্যাতন-নিপীড়নসহ ধরপাকড়। এভাবে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর সময়ে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীর বেশির ভাগই ঘরে থাকতে পারেননি। আদালতে মামলায় হাজিরা দেওয়া আর জেলের ঘানি টেনে কেটেছে অসংখ্য নেতাকর্মীর জীবন।  এবার সেই দুই দলের চেয়েও কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোকে।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী সমকালকে বলেন, ‘বিরোধী দল ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর নির্বিচারে নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে দেশে ভয়-আর আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা। পুলিশকে তাদের পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত করেছিল তারা। নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল গণতন্ত্রকে। আওয়ামী লীগ যেসব অপকর্ম করেছে এখন তারই ফল ভোগ করছে।’
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হারুন জামান সমকালকে বলেন, ‘পাপ কোনোদিন বাপকেও ছাড়ে না– আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও এই প্রবাদবাক্যটি ফলছে। বিরোধী দলের ওপর এমনভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়েছে, তাতে আমরা ঘরে থাকতে পারিনি। তাদের আমাদের চেয়েও কঠিন সময় পার করতে হবে। এটাই  হচ্ছে নিয়তি। এখান থেকে আমাদেরও শিক্ষা নেওয়ার বিষয় রয়েছে। সুযোগকে কাজে লাগাতে গিয়ে যাতে আমরাও যেন বাড়াবাড়ি না করি– সেটা আমাদের দলের নেতাকর্মীদেরও মনে করিয়ে দিতে চাই।’
১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর প্রবর্তক মোড়ে মধ্যরাতে হঠাৎ ঝটিকা মিছিল করে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে মিছিলে থাকা দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা নেতা হলেন- মো. সজীব 


হোসেন (২১) ও দিদারুল আলম (৪৮)। দিদারুল আলম চট্টগ্রাম আইন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি এই মিছিলের জন্য অর্থসহায়তা করেছেন বলে পুলিশের অভিযোগ।
পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরের প্রবর্তক মোড় এলাকায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ১৫ থেকে ২০ জন জড়ো হয়ে মিছিল করেন। রাতে মিছিলের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, নগরের প্রবর্তক এলাকায় বায়েজিদ রোড অংশ থেকে স্লোগান দিয়ে ১৫ থেকে ২০ ব্যক্তি মোড়ের দিকে আসছেন। এ সময় তারা ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। মিছিলটি বদনা শাহ মাজার এলাকা হয়ে গোল পাহাড়ের দিকে চলে যায়।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ এর আগেও মিছিল করেছিল। অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এর কয়েক ঘন্টা আগে নগরীর ওয়াসা এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মিরা। জানা গেছে, ১৮ নভেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ মিছিল করে ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১২ জন কর্মীর একটি দল। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ওয়াসা মোড় সংলগ্ন ব্যাটারি গলির সামনে সড়কে ‘জয় বাংলা স্লোগান দিয়েই এই মিছিল শুরু করেন একদল তরুন। কিছুদূর যাওয়ার পরপরই হাওয়ায় মিলিয়ে যান তারা।
এর এক মাস আগে গত ১৮ অক্টোবর মধ্যরাতে চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান সড়ক ও খুলশীর জাকির হোসেন রোডো আচমকা মিছিল করে ছাত্রলীগের। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত ওয়ার পর চট্টগ্রাম নগরীতে সেটাই সংগঠনটির এই ধরনের প্রথম মিছিল।
১৮ অক্টোবর দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে চেরাগী পাহাড় মোড় থেকে শুরু হয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের একটু আগে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়ে যায়। ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী মিছিলটিতে অংশ নেন। প্রায় একই সময়ে খুলশীর জাকির হোসেন রোড এলাকায়ও এমন মিছিল বের কনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মিরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, জামালখান সড়কে আয়োজিত মিছিলের অগ্রভাগে দুটি মোটরসাইকেলে দুই যুবক মিছিলটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের মুখ ছিল মুখোশে ঢাকা। মিছিল থেকে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে এই মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ দাবি করেছেন, ছাত্রলীগের ওই মিছিলে থাকা অনেকের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন নেতা বলেন, ‘খুনি শেখ হাসিনাকে যাতে পুনঃর্বাসন করা যায় সেজন্য নানামুখি অপতৎপরতা চলছে। একটি বিদেশী শক্তিও এর পেছনে মদদ যোগাচ্ছে। হাজারও শহীদের রক্তরঞ্জিত রাজপথে খুনীদের নামতে দেওয়া হবে না। ঝটিকা মিছিল বের করেও তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হবে না।’

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×