ঢাকা শনিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

মুলা নিয়ে শঙ্খচরের চাষিদের ‘জ্বালা’

মুলা নিয়ে শঙ্খচরের চাষিদের ‘জ্বালা’

প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় ক্ষেতেই নষ্ট করা হচ্ছে মুলা। দোহাজারীর শঙ্খচর থেকে তোলা ছবি সমকাল

 মুহাম্মদ এরশাদ, চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) 

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:০৩

শীতকালীন সবজির ভর মৌসুমে মুলা ও ফুলকপি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শঙ্খচরের কৃষক। মুলা ও ফুলকপির উৎপাদন ভালো হলেও দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে। শঙ্খচরে উৎপাদিত মুলার কেজি এখন ২-৩ টাকা। ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪-৫ টাকায়। গত ১৫ দিন ধরে এমন পরিস্থিতির কারণে কৃষকরা শত শত হেক্টর জমির মুলা তুলে ফেলে দিচ্ছেন। কারণ বর্তমানে প্রতিকেজি মুলা ক্ষেত থেকে তুলে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত প্রায় ৭-৮ টাকা খরচ পড়ে। উৎপাদন খরচ না ওঠায় কৃষকরা নিরুপায় হয়ে মুলা ক্ষেত থেকে তুলে ফেলে দিচ্ছেন।
দোহাজারী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সৈকত বড়ুয়া বলেন, শঙ্খচরে উৎপাদিত সবজি ও উত্তরবঙ্গের সবজি প্রায় একই সঙ্গে বাজারে আসায় দাম পড়ে গেছে। যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে প্রণোদনা এলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শঙ্খচরটির অবস্থান মূলত দোহাজারী এলাকায়। কিন্তু এখানকার অধিকাংশ কৃষকই সাতকানিয়ার কালিয়াইশ ও খাগরিয়া অঞ্চলের। ফলে চন্দনাইশ থেকে তাদের প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব হয় না।’ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তিনি সাতকানিয়া কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান। 
শঙ্খচরের কৃষক নুরুল ইসলাম নুরু জানান, তিনি প্রতি মৌসুমে শঙ্খচরে ১৪ থেকে ১৫ কানি জমিতে মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, ধনেপাতাসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজির চাষাবাদ করেন। চলতি মৌসুমের মতো লোকসান আগে কখনোই হয়নি। চলতি মৌসুমে মুলা, বেগুন ও ফুলকপিতে তার ক্ষতি প্রায় ১০ লাখ টাকা। শীতকালীন সবজির ভর মৌসুমে এসে অন্য সবজিও প্রায় পানির দরে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে বেগুনের কেজি ৬-৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 
শঙ্খচরের কৃষক আবু বক্কর জানান, ১৫ দিন আগেও কৃষক পর্যায়ে প্রতিকেজি মুলা ৫০-৬০ টাকা, বেগুন ৩০-৩৫ টাকা, শিম ৫০-৬০ টাকা, ফুলকপি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে শিম ও ধনেপাতার কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের সবজির দর পড়ে যাওয়ায় পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। চলতি মৌসুমে মুলা ও ফুলকপিতে তার কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। মাথার গাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত সবজি ফেলে দিতে হচ্ছে। কারণ এ অঞ্চলে হাজার হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদিত হলেও, সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা করা হয় না। যুগ যুগ ধরে হিমাগার প্রতিষ্ঠার দাবি বাস্তবায়িত হয়নি।
শঙ্খচরের অপর কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রতিবছর কৃষকরা লাখ লাখ টাকা লোকসান দিলেও সরকারি কোনো সহায়তা পান না। আমরা যে চরে সবজির আবাদ করি সেটার অবস্থান দোহাজারী পৌরসভা ও সাতকানিয়ার কালিয়াইশের মধ্যবর্তী স্থানে। তাই কোনো উপজেলা থেকেই কৃষি প্রণোদনা পাই না। কৃষি বিভাগও কখনও আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি।’
কৃষক আবুল কাশেম জানান, তিনি এক কানি জমিতে মুলা চাষ করেছেন; যা এখন বিক্রির উপযুক্ত সময়। কিন্তু উৎপাদন খরচ না উঠায় ক্ষেতেই ফেলে রেখেছেন। মোহাম্মদ মারুফ ও মোহাম্মদ হাসান জানান, প্রতিবছর শীতকালীন সবজির শুরুর দিকে আগাম সবজি চাষাবাদ করতে পারলে তারা লাভবান হন। জমিতে সেচ দিতে না পারা অথবা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবজি উৎপাদনে দেরি হলে লোকসান গুনতে হয় বেশি। তারা শঙ্খচরে উৎপাদিত সবজিতে সেচ সুবিধা পাওয়ার জন্য চরের বিভিন্ন পয়েন্টে গভীর নলকূপ স্থাপনের দাবি জানান।

আরও পড়ুন

×