‘এই শীতে ত্রিপলের নিচে থাকি’
ভাঙা টিনশেড ঘরের সামনে উঠানে ত্রিপল টাঙিয়ে থাকে একটি পরিবার, পাশে আসবাবপত্র ও পোশাক রাখা হয়েছে। ফুলগাজী ইউনিয়ন থেকে তোলা সমকাল
দিলদার হোসেন স্বপন, ফেনী
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:০৪
‘গত আগস্টে ভয়াবহ বন্যায় বাড়িঘর ভেঙে গেছে। বর্ষায় বৃষ্টিতে ভিজেছি। এই শীতে ত্রিপলের নিচে বাচ্চাদের নিয়ে অনেক কষ্টে বসবাস করছি। ঘর তৈরি করার সামর্থ্য নেই। সরকার সহযোগিতা করলে উপকার হবে।’ কথাগুলো বললেন, ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বৈরাগপুর গ্রামের গৃহিণী নয়ন মণি।
ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়ি নির্মাণে সহায়তা পাননি। পুনর্বাসন না হওয়ায় অনেক পরিবার চার মাস পরও খোলা আকাশের নিচে তাবু টাঙিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছে।
ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের বৈরাগপুর গ্রামের রিকশাচালক মোহাম্মদ হাবিব বলেন, ‘ঘর নির্মাণের বিষয়ে উপজেলায় সাহায্যের দরখাস্ত জমা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাইনি। শীতের মধ্যে বৌবাচ্চা নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছি।’
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়াসহ জেলার বেশির ভাগ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারও আংশিক ক্ষতি হয়েছে আবার অনেকের বসতঘর ভেসে গেছে পানির স্রোতে। কিন্তু ঘরহারা মানুষের পুনর্বাসনে সরকারি সহযোগিতা ছিল অপ্রতুল।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন বলেন, ‘বাড়িঘর বন্যার পানি ভেঙে নিয়ে গেছে চার মাস হলো। আমাদের থাকার জায়গা নেই। এখন ছেলেমেয়েদের নিয়ে ত্রিপলের নিচে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছি। ঘর তৈরি করার মতো টাকা-পয়সা আমাদের নেই। সরকার আমাদের ঘরগুলো তৈরি করে দিলে উপকৃত হবো।’
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বন্যায় ফেনীর ৬টি উপজেলায় ১ হাজার ৭১৮টি সম্পূর্ণ, ৬ হাজার ৯৪১টি আংশিকসহ মোট ৮ হাজার ৬৫৯টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৫৩৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। সরকারিভাবে ঢেউটিন ও গৃহমঞ্জুরি ব্যয় বাবদ কিছু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা বিতরণ চলছে।
‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র গৃহহীন মানুষের নিজ বসতভিটায় বিশেষ আবাসন নির্মাণ’ শীর্ষক পাইলট প্রকল্পের আওতায় সেনাবাহিনী ১১০টি ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। ছয়টি উপজেলায় ১১০ জন উপকারভোগীর তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।’
বেসরকারিভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতি পরিবারে ৪ বান্ডিল করে ১৫৭ পরিবারকে ঢেউটিন ও নগদ সাড়ে ছয় লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ৮৫টি নতুন ঘর নির্মাণ করেছে। এ ছাড়া ফেনী সদর ও ফুলগাজী উপজেলায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ ও মন্দিরে নির্মাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ফুলগাজী উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর সহযোগিতায় ১০০টি ঘর মেরামত করা হয়েছে। বেসরকারিভাবেও কিছু ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যেগুলো পুরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে আমরা লিখেছি। আশা করি, শিগগিরই সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ঘর নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ আসবে। পাশাপাশি যেসব ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য সরকারিভাবে টিন ও টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেটা এলে দ্রুত বিতরণ করা হবে।’
- বিষয় :
- ঘর তৈরি