বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাটে নতুন প্রকল্প
নির্মাণসামগ্রী সরবরাহে ভাগ চায় চাঁদাবাজ
সন্দ্বীপবাসীর যোগাযোগের সুবিধার্থে বাঁশবাড়িয়ায় শুরু হয়েছে ফেরিঘাটের নির্মাণকাজ সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:০৬
সীতাকুণ্ডের সাগর উপকূলীয় জনপদ বাঁশবাড়িয়া ঘাটে তৈরি হচ্ছে ফেরিঘাট। ফেরিঘাটে সহজে যাতায়াতের জন্য বেড়িবাঁধ থেকে সাগরপাড় পর্যন্ত অ্যাপ্রোচ সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় একটি চক্র। রাজনৈতিক পরিচয়ে তারা নানাভাবে কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরতদের বিব্রত করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা ফেরিঘাট তৈরির কাজ শুরু হওয়ায় উচ্ছ্বসিত। তারা বলছেন, এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হলে সন্দ্বীপবাসীর যাতায়াতের দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে যাবে। পাশাপাশি সন্নিহিত এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।
সন্দ্বীপের সন্তান রেল ও পরিবহন এবং জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা, ড. ফাওজুল কবির খান গত ১৫ নভেম্বর পরিদর্শন শেষে ফেরিঘাট নির্মাণের চূড়ান্ত ঘোষণা দেন। এ ঘাটের সঙ্গে কুমিরা ঘাটের সংযোগ সড়ক থাকবে বলে জানান তিনি।
গত ২৮ ডিসেম্বর বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাটে শুরু হয় অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণকাজ। সড়ক ও জনপদ বিভাগের বিশেষ একটি প্রকল্পের আওতায় এই সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। জেনিসিস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এ কাজ করছে। ৮০০ মিটার দীর্ঘ ও ৫০ মিটার প্রশস্ত বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট সড়ক নির্মিত হলে যাত্রীদের যাতায়াত সন্দ্বীপের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে।
গত বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টায় ঘাটে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর একটি টিম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের তদারকি করছে। কথা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সরোয়ার ও মোহাম্মদ লোকমানের সঙ্গে। সরোয়ার নিজেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেনেসিস ইন্টারন্যাশনাল পরিচালক ও লোকমান সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার বলে পরিচয় দেন। তারা অভিযোগ করেন, ‘মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার সকালে যখন ফেরিঘাটে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য নির্মাণসামগ্রী আনা হয় তখন কয়েক কয়েকজন ব্যক্তি এসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নানা হুমকি দেন। তারা নিজেদের স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মী দাবি করে নির্মাণকাজের ইট, বালু, সিমেন্ট, কংক্রিট ও কাজের শ্রমিক তাদের কাছ থেকে নেওয়ার দাবি জানান। তা না হলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে হুমকি দেন।’
বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাটে মোহাম্মদ বাহার সওদাগর নামে এক বয়সী লোক দাবি করেন, নির্মাণাধীন অ্যাপ্রোচ সড়কের বেড়িবাঁধের পশ্চিম পাশে তাদের এক একর বিএস রেকর্ডভুক্ত জমি রয়েছে। অধিগ্রহণ ছাড়াই ও ক্ষতিপূরণ না দিয়ে সরকার ওই জমিতে ফেরিঘাট নির্মাণ করছে।
প্রশস্ত করতে হবে ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড থেকে বাঁশবাড়িয়া ঘাটে যাওয়ার সড়ক :
ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড থেকে সন্দ্বীপ যাওয়ার জন্য যেতে হয় বাঁশবাড়িয়া ঘাটে। এই সড়কের দূরত্ব দুই কিলোমিটার। আঁকাবাঁকা এ সড়কটির কার্পেটিং হয়েছে। তবে সন্দ্বীপবাসীর দাবি, বাঁশবাড়িয়া ঘাটে ফেরি সার্ভিস চালু হলে সড়কটি আরও প্রশস্ত করতে হবে। বিআইডাব্লিউটিএ’র নীতিমালা অনুযায়ী ফেরি সার্ভিস চালু করতে হলে সড়ক টু-ওয়ে করতে হয়। এ সড়কটি ওয়ান-ওয়ে। ছোট এ সড়কের পাশে রয়েছে বাজার, দোকান, বাড়িঘর। ১২ ফুট প্রশস্ত সড়কটি নূন্যতম আরও ৪ ফুট বাড়াতে হবে।
জানা গেছে, কাগজে-কলমে সন্দ্বীপ চ্যানেলে যাত্রী পারাপারের জন্য সীতাকুণ্ড এলাকায় ৬টি ফেরিঘাট রয়েছে। ঘাটগুলো হলো সৈয়দপুরে বাঁকখালী ঘাট, মুরাদপুরে আমির মোহাম্মদ ফেরিঘাট ও ফকিরহাট ফেরিঘাট, বাড়বকুণ্ড ফেরিঘাট, বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট, কুমিরা ফেরিঘাট। আগে ভাটিয়ারী টোবাকো ছোঁয়াখালীঘাট চালু থাকলেও এখন তা বন্ধ।
সন্দ্বীপের বাসিন্দা প্রবাসী ইকবাল করিম বলেন,
‘সন্দ্বীপের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ থাকেন চট্টগ্রামে শহরের হালিশহর ও আশপাশের এলাকায়। কুমিরা ঘাটের পর সন্দ্বীপের যাত্রীরা যাতায়াত করেন বাঁশবাড়িয়া-কাছিয়াপাড় ঘাট। কুমিরা তবে বাধ্য না হলে যাত্রীরা এই ঘাটে আসতে চান না। কুমিরা ঘাটে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকলে মূলত যাত্রীরা ছুটেন ওই ঘাটে। তবে পরিকল্পিতভাবে বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট তৈরি হলে সন্দ্বীপবাসীর দুঃখ ঘুচবে।’
বিআইডব্লিউটিসির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) গোপাল চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘অ্যাপ্রোচ সড়কটির নির্মাণকাজ তিন মাসের মধ্যে শেষ করে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।’
চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারহান বলেন, ‘প্রকল্পটি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
বেড়িবাঁধে অবৈধ দোকান সরিয়ে নিতে বলেছে সেনাবাহিনী : বাঁশবাড়িয়ার ফেরিঘাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধে গড়ে উঠা অবৈধ দোকান-ঘর সরিয়ে নিতে বলেছে সেনাবাহিনী। বুধবার সেনা সদস্যরা এসে দোকানদারদের দোকান সরিয়ে নিতে বলেন। দোকানদাররা স্বেচ্ছায় দোকানঘর উঠিয়ে না নিলে উচ্ছেদ করা হবে বলে জানানো হয়।
- বিষয় :
- নির্মাণকাজ