ঢাকা রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

ব্যবসা ছেড়ে বরই চাষ আজম এখন লাখোপতি

ব্যবসা ছেড়ে বরই চাষ  আজম এখন লাখোপতি

আজম খানের বাগানে বরইয়ের ভারে নুইয়ে পড়েছে গাছ সমকাল

 কাইছার হামিদ, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) 

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ | ২১:৩৯

‘আম পাকে বৈশাখে, কুল পাকে ফাগুনে/কাঁচা ইট পাকা হয় পোড়ালে তা আগুনে’– বরই পাকা নিয়ে সুকুমার রায় তার ‘পাকাপাকি’ ছড়ায় এমনটাই বলেছিলেন। সুকুমার রায়ের ছড়াটি যেন আজম খানের বরই বাগান নিয়ে লেখা। এক একটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে পাকা বরই। গাছে পাতার চেয়ে বরইয়ের পরিমাণ যে বেশি। বরইয়ের ভারে মাটিতে নুইয়ে পড়েছে বাগানের প্রতিটি গাছ।
বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ কেজি বরই বিক্রি হয়। প্রতি কেজির দাম ১১০-১২০ টাকা। এ বছর ১৫ টন কুল বিক্রি করে প্রায় ১৬ লাখ টাকা পাবেন বলে আশাবাদী আজম খান। খরচ বাদ দিয়ে ১০ লাখ টাকা লাভ থাকবে তার।
লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলার গৌড়স্থান সরই খালঘেঁষে বল সুন্দরী ও ভারত সুন্দরী কুল চাষে বদলে গেছে আজম খানের ভাগ্য। তার দেখাদেখি বরই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় অনেক কৃষক। 
আজম খান আগে পুটিবিলা গৌড়স্থান নয়া বাজারে কাপড়ের দোকান করতেন। ব্যবসায় তিনি তেমন সফল হতে পারেননি। এ কারণে ছেড়ে দেন এ ব্যবসা। পরিবারের সদস্যদের অনুপ্রেরণায় এবং অনলাইনে বাগানের ভিডিও দেখে বরই বাগান করার প্রবল ইচ্ছা হয় আজম খানের। গত বছর শুরু করেন ভারত সুন্দরী ও বল সুন্দরী কুল জাতের নার্সারি। একই বছর দুই একর জমি আট বছরের চুক্তিতে ৪০ হাজার টাকায় বর্গা নিয়ে চারা রোপণ করেন। প্রতিটি চারায় ৪০-৫০ টাকা খরচ হয়।  দুই একরে ১ হাজার চারা রোপণ করেন তিনি। ভারত সুন্দরী কুল ৩০০ ও বল সুন্দরী কুলের ৭০০ চারা রোপণ করেন। যথাযথ পরিচর্যায় মাত্র এক বছরের মাথায় গত ডিসেম্বরে সবকটি গাছেই ফুল আসে। এখন প্রতিটি গাছে ঝুলছে থোকা থোকা পাকা কুল। 
গত বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, বাগানের চারদিকে কেবল বরই আর বরই। ছোট গাছগুলো বরইয়ের ভারে নুইয়ে পড়েছে। আপেলের মতো দেখতে বড় বরই দুলছে গাছে গাছে। পোকা ও পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষায় বাগানের চারপাশে ও ওপরে মশারি জালের বেড়া দেওয়া হয়েছে। গাছ থেকে চারজন শ্রমিক কুল পেড়ে বিক্রি করছেন। দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা বাগানে এসে কুল কিনছেন। স্থানীয় মোহাম্মদ দস্তগীর সিকদার মানিক বলেন, ‘আজম খানের কুল বাগানে ভালো ফলন হয়েছে। তার কুল বাগান দেখে অনেক কৃষক এ কুল চাষে আগ্রহী হয়েছেন।’ 

আজম খান বলেন, গাছের প্রতিটি থোকায় থোকায় কুল দেখলে মন ভরে যায়। কাপড় ব্যবসায় লোকসানের শিকার হয়ে হতাশ ছিলাম। বরই বাগান করে আমার ভাগ্যবদল হচ্ছে। পুরো বাগানে আট লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ বছরই ৮–১০ লাখ টাকা লাভ হবে। আগামী বছর দ্বিগুণ ফলন হবে। তবে খরচ তেমন বাড়বে না।
তিনি আরও বলেন, ‘ভাবিনি প্রথম বছরেই এতো ফলন হবে। ইতিমধ্যে অনেক কৃষক চারা সংগ্রহ ও পরামর্শের জন্য আমার কাছে এসেছেন। সরইখালে ব্রিজ না থাকায় যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি অফিসের কোন পরামর্শ ও সহযোগিতা পাইনি। এসব বাগানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও দরকার। যাতে বেকার যুবকরা কৃষি উদ্যোগক্তা হতে পারেন।’
আজিজনগর হর্টিকালচারের কৃষি অফিসার ডি. কৃষিবিদ মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ান জাতের বল সুন্দরী কুল দেখতে সুন্দর। খেতেও সুস্বাদু। এ অঞ্চলে এই কুল চাষ নেই বললেই চলে। বল সুন্দরী কুল চাষ করে সহজেই কৃষকরা লাভবান হতে পারবেন।’

আরও পড়ুন

×