‘কাউকে অনুকরণ নয়, আমি আমার মতো হতে চেয়েছি’
লন্ডন প্রতিনিধি
অভিনয় জগতের দীর্ঘ অনুশীলনে একক কাউকে অনুকরণ নয়, বরং নিজের মতো হতে চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলা নাটক ও চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ও খ্যাতিমান অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু।
সোমবার সন্ধ্যায় লন্ডনে এক ‘সঙ্গীত সন্ধ্যা ও আড্ডা’ অনুষ্ঠানে এমনটাই জানান তিনি।
হাউজিং প্রতিষ্ঠান ‘প্রবাসী পল্লি’র সহযোগিতায় অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘সত্যবাণী’র উদ্যোগে ফজলুর রহমান বাবুর সম্মানে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ভক্তশ্রোতাদের সঙ্গে দীর্ঘ আড্ডায় মেতে উঠা বাংলা নাটকের এই খ্যাতিমান অভিনেতা বলেন, আমার নাটকের গুরু মামুনুর রশীদ। আমি তার কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করেছি, শিখেছি অনেক। অভিনয়ের সময় যারা সামনে থাকতেন তাদের কথা শুনতাম, অনুশীলন করতাম, কিন্তু অভিনয় করতাম আমার নিজের মতো করে। আসলে অভিনয় জীবনের প্রথম থেকেই কাউকে অনুকরণ নয়, আমি আমার মতো হতে চেয়েছি।
সত্যবাণী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফটোসেশনের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে প্রথমেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সত্যবাণীর উপদেষ্ঠা সম্পাদক আবু মুসা হাসান ও প্রধান সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের মূল পৃষ্ঠপোষক, রাজনীতিবিদ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সত্যবাণীর বার্তা সম্পাদক নিলুফা ইয়াসমিন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ফেরদৌসি কলি, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মতিয়ার চৌধুরী ও কমিউনিটি করেসপন্ডেন্ট জামাল খান।
সত্যবাণীর পক্ষে কথোপকথন ও প্রশ্নোত্তর পর্বটি উপস্থাপনা করেন টেলিভিশন উপস্থাপক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব বুলবুল হাসান।
উপস্থাপকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নিজের পেশাগত জীবনের অনেক না বলা কথা ভক্তদের জানান ফজলুর রহমান বাবু।
সত্যবাণীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যবাণীর আমন্ত্রণ পেয়ে আমি উৎসাহিত হয়েছি। ব্রিটেনে যারা সত্যবাণী পত্রিকার জন্ম দিয়েছিলেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও বর্তমানে যারা এটি আবার অনলাইনে নিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
অভিনয় জগতে তার সফলতার কারণ জানতে চাইলে বাবু বলেন, আমি ফরিদপুরের মানুষ। নদীবেষ্টিত আমার এলাকার প্রকৃতি নিয়মিতই আমাকে টানে। নদীর সঙ্গে আমার নাড়ির সম্পর্ক। প্রকৃতিই আসলে আমাকে গড়ে তুলেছে।
পাড়ার এক বড় ভাইয়ের আহ্বানে প্রথম অভিনয়, এমন তথ্য দিয়ে তিনি জানান, ফরিদপুরে আয়োজিত জাতীয় নাট্যৎসবে অভিনয়ের মাধ্যমেই এ জগতে তার প্রথম পদার্পণ। পড়াশোনার জন্য ঢাকায় আসার পর নাটককে নিজের করে নেন।
বাবু বলেন, অভিনয় আমার পছন্দের পেশা। আমি এমন একজন ভাগ্যবান, যে নিজের পছন্দের বিষয়টিকে পেশা হিসেবে নিতে পেরেছি। আমি সব সময়ই চেষ্টা করি যাতে পেশাদারিত্ব বজায় রেখেই আমি আমার কাজটি করতে পারি।
একজন অভিনতার জন্য আরাধ্য জায়গা হলো মঞ্চ ও চলচ্চিত্র জানিয়ে বাবু বলেন, মাঝখানের দু’টি দশক আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য খুবই খারাপ সময় ছিলো। আমরা এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম যে, কোনো রুচিশীল দর্শক সিনেমা হলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। এই সময়ে সিনেমার সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু দর্শক কমেছে। এখন ৫শ’ টি সিনেমা হলের মধ্যে ভালো সিনেমা থাকে বড়জোর ১১টি। আর এ কারণেই একসময় দেশে ২ হাজার ৪শ’ সিনেমা হল থাকলেও এখন আছে মাত্র ২শ’টি।
ভবিষ্যতে দর্শকরা আপনাকে কতটুকু মনে রাখবে এমন প্রশ্নের জবাবে বাবু বলেন, ভবিষ্যৎ বলার ক্ষমতা আমার নেই। মানুষের স্মৃতিতেই আমাদের বেঁচে থাকা। দর্শকদের স্মৃতিতে কিভাবে বেঁচে থাকা যায় অভিনয় করতে গিয়ে আমি সবসময় সেই চেষ্টাই করি।
তার দু-একটি চরিত্রের অভিনয়ে ঘৃণার উগ্রেক হয়েছে জানতে পেরে বাবু বলেন, অভিনয়ে এটিই আমার স্বার্থকতা। ঘৃণার চোখে হলেও আমি দর্শকের স্মৃতিতে আছি। একজন অভিনয় শিল্পীর কাছে এর চেয়ে আর কি পাওয়ার থাকতে পারে।
টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর রমরমা উপস্থাপন সংস্কৃতি বিকাশে কেমন ভূমিকা রাখছে এমন প্রশ্নে বাবু বলেন, আজ যারা টিভি চ্যানেলগুলোর মালিক আসলে তাদের টিভি চালানোর কথা না। তাদের কমিটমেন্ট সুস্থ ধারার সংস্কৃতি বিকাশ নয়, তাদের কমিটমেন্ট বাণিজ্য ও ক্ষমতা চর্চার প্রতি।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে বাবু সঙ্গীত পরিবেশন করেন।