কানাডার ক্যালগেরির বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির ইয়ুথ ফোরামের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো স্ট্যাম্পপিড ব্রেকফাস্ট এর আয়োজন করা হয় বাংলাদেশ সেন্টারে।  এবার ছিল ১০৮ তম স্টাম্পপিড ব্রেকফাস্ট ।

নতুন প্রজন্মের মাঝে ক্যালগেরির ঐতিহ্যবাহী এই স্ট্যাম্পপিড ব্রেকফাস্ট এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। বাঙালির সন্তান হয়েও কানাডিয়ান কালচারে কিভাবে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির পাশাপাশি কানাডিয়ান কালচারের চর্চা ধরে রাখবো এই লক্ষ্যেই আমাদের আজকের এই আয়োজন' বলছিলেন ইয়ুথ ফোরামের স্নিগ্ধা রায় ও নাদিয়া হাসান।

উল্লেখ্য কানাডার ক্যালগেরির ঐতিহাসিক স্ট্যাম্পপিডের রয়েছে কালজয়ী ইতিহাস। এ সময় সাধারণত মিডওয়ে গেমস, ঘোড়াদৌড়, সুস্বাদু খাবার, লাইভ মিউজিক এবং স্থানীয় দর্শক ছোট ছোট শিশু কিশোরদের বিভিন্ন রাইড এবং বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের দ্বারা মুখোরিত থাকে ক্যালগেরি শহর। ক্যালগারি স্ট্যাম্পপিডের  অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে দর্শনার্থীদের জন্য আতশবাজির ব্যবস্থা।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেডিও শো ক্যালগেরি স্টাম্পপিড ১৯১২ সাল থেকে শুরু হয়ে যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে আজ অবধি। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের স্টাম্পপিড সেভাবে উদযাপিত না হচ্ছে না। যেখানে এই সময় সারা পৃথিবী থেকে কাউবয়দের আনাগোনায় পুরো শহর মুখরিত থাকার কথা সেখানে বিরাজ করছে প্রাণের স্পন্দনের শূন্যতা আর নীরবতা।

প্রতি বছরের জুলাই মাসে ক্যালগেরির স্টাম্পপিডে আলোকসজ্জা আর লোকে-লোকারণ্য পরিপূর্ণ থাকে। কাউবয় খ্যাত এই শহরটি মেতে ওঠে তার নিজস্ব অবয়বে।  এ বছর ছিল সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম। করোনাভাইরাস স্তব্ধ করে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে, সেই সাথে ক্যালগেরির স্টাম্পপিডকে করেছে  জন শূন্য। কভিড-১৯এর  প্রাক্কালে এপ্রিল মাসে ক্যালগেরি স্ট্যাম্পপিড বাতিল করা হয়। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন সংগঠন পালন করছে এই ব্রেকফাস্ট ।

বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির ইয়ূথ ফোরামের উদ্যোগে ব্রেকফাস্ট শুরু হয় সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত । সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রায় দুই শ’ জনকে ব্রেকফাস্ট দেওয়া হয়। ইয়ুথ ফোরামের পক্ষ থেকে এই আয়োজনের দায়িত্বে ছিল নাদিয়া হাসান আর স্নিগ্ধা রায়।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইয়ুথ ফোরামের আশিক ইসলাম, রিমিসা রসিদ, তাহিম রসিদ, রিনা তাজরিন, শারলিন রফিক, জয়িতা কাজী, রায়া সুবা, অধরা রাইমা মজুমদার, ফাইজা আফসারা, কাজী মাহির, মারভিত হোসেন সুহা, আদিবা হোসেন,  মো. ফারদিন রহমান, নওশিন নোয়াল, ভিয়েনা হোক ও রিনাত হক। এছাড়াও বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি মো. রশিদ রিপন, সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত বসু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভ মজুমদার, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসলাম মাজহার, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক তাসফিন হুসাইন তপু, ট্রেজারার সানিলা মাহমুদসহ এসোসিয়েশনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।

ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহযোগী ডীন, ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. আনিস হক বলেন, স্ট্যাম্পপিড ব্রেকফাস্ট ক্যালগেরিবাসীদের  এক বিশেষ আকর্ষণ। শহরের ছোট বড় বিভিন্ন জায়গাতে ভোর বেলা থেকে দীর্ঘ লাইন শুরু হয়। প্রাদেশিক সরকার প্রধান থেকে শুরু করে, সিটি মেয়র এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শহরের বিভিন্ন স্থানে নিজ হাতে এই ব্রেকফাস্ট জনগণকে পরিবেশন করেন। কোন কোন স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করতে হয়। ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান স্টাম্পপিড ব্রেকফাস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নিজে পরিবেশন করেন। এবারে ভীষণভাবে মিস করছি জমজমাট কাউবয় পরিবেশে আধা কিলোমিটার লাইনে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ব্রেকফাস্ট।

বিশিষ্ট কলামিস্ট আব্দুল্লা রফিক বলেন, এবছর করোনার প্রার্দুভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রোডিও শো ক্যালগেরি স্টাম্পপিড হচ্ছে না যা ক্যালগেরিবাসীর জন্য সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা। আশাকরি আগামী বছর পূর্ণ উদ্যোমে আমরা আবারো রোডিও শো তে ফিরবো l

ক্যালগেরির স্থানীয় নীতিনির্ধারক এবং বিশ্লেষকরা মনে করেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই এই মুহুর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।