আরব আমিরাতের দুবাইয়ের প্রমিজ ব্রিজ বা প্রতিশ্রুতি সেতু পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা। প্যারিসের 'পঁত দো আর্টস' সেতুর আদলে দুবাইয়ের আল খাওয়ানিজ এলাকায় নির্মিত এই সেতুটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২০১৮ সালে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্রমণে আসা প্রেমিক যুগলদের পছন্দের জায়গাও এটি। সম্পর্কের ভিত্তি বা প্রতিশ্রুতির শক্তি বিবেচনায় তাদের অনেকে এই সেতুর গায়ে রেখে যান নিজেদের স্মৃতিচিহ্ন 'ভালোবাসার তালা'। ভ্রমণে আসা পর্যটকরা বিভিন্ন রকমের তালার ওপর নিজেদের নাম লিখে সেগুলো ব্রিজের গায়ে বেঁধে রেখে যান। বর্তমানে কয়েক হাজার তালা ঝুলে রয়েছে এই ধাতব ব্রিজের গায়ে।
মূলত দুবাই ইয়ার্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে এই সেতুর অবস্থান। ৩৫ হাজার বর্গফুট জায়গায় বিস্তৃত ইয়ার্ডের মধ্যভাগে কৃত্রিম হ্রদের ওপর ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ হাজারো তালার ভার বয়ে যাচ্ছে সেতুটি। পর্যটকদের জন্য এটি ইয়ার্ড দুবাই বা লাস্ট এক্সিট ডি ৮৯ নামেও পরিচিত। সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যেখানে লোকেলোকারণ্য ছিল সেখানে এখন পর্যটক খরা চলছে। করোনা মহামারির কারণে গত জানুয়ারি থেকে এই সেতুতে পর্যটকের তেমন আনাগোনা নেই। দর্শনার্থীদের হাতের ছোঁয়া না পাওয়ায় মরিচা ধরছে সেতুর গায়ে থাকা 'ভালোবাসার তালায়'।
সরেজমিনে দেখা যায়, কৃত্রিম হ্রদের মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রতিশ্রুতি রক্ষার নামে পরিচিত এই সেতু। লেকে কয়েকটি জায়গায় শোভা পাচ্ছে সাদা শাপলা। কৃত্রিম হাঁস ও বক রয়েছে লেকের পানিতে। ব্রিজের দুই পাশে লোহার হাতলে ঝুলছে হাজার হাজার তালা। লাল, নীল, সোনালি, রুপালি রঙের তালার কোনোটিতে ছেলে ও মেয়ের নাম, কোনোটিতে নামের আদ্যক্ষর, কোনোটিতে লাভ সাইন, কোনোটিতে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা। বেশির ভাগ তালায় ইংরেজি হরফে লেখা থাকলেও আরবি, উর্দু, হিন্দি, তামিলসহ আরও বেশকিছু ভাষার আঁচড়ও রয়েছে তালাগুলোর গায়ে। তবে দূর থেকে বোঝা না গেলেও কাছাকাছি গেলে নজরে আসে বেশির ভাগ তালার ওপর মরিচা ধরে গেছে। রঙ নষ্ট হয়ে তালাগুলোর সৌন্দর্য প্রায় বিলীন হওয়ার পথে।
সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বর্তমানে পর্যটক নেই। করোনায় আনাগোনা কমেছে দর্শনার্থীর। স্বাভাবিক সময় পর্যটকের একটি বড় অংশ এই সেতু দেখতে আসতেন তাদের সম্পর্কের চিহ্ন রেখে যেতে। পাশাপাশি ভালোবাসার গভীরতা বাড়াতে। যারা আগ্রহ নিয়ে তালা বাঁধতে চান তাদের জন্য কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরনের তালা সরবরাহ করে থাকে। এই তালাগুলোর দাম নূ্যনতম ১০ দিরহাম থেকে ওপরের দিকে ধরা হয়। যে যার পছন্দ মতো তালা কিনতে পারেন। তালার ওপর রঙ দিয়ে নিজেদের নাম লিখে ব্রিজের গায়ে বেঁধে দেন তারা। কেউ কেউ বন্ধ তালার চাবিটি লেকের পানিতে ফেলে যান।
মূলত দুবাইয়ের এই প্রমিজ ব্রিজের চারদিক ঘিরে আছে অভিজাত খাবারের হোটেল ও কিছু ভাসমান রেস্তোরাঁ। পর্যটক টানতে এলাকাটি সাজানো হয়েছে কৃষিপণ্য, কৃত্রিম হ্রদ ও পশুপাখির প্রতিকৃতি দিয়ে। এ ছাড়াও ভ্রমণকারীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে একমুখী সড়ক। বর্তমানে এই সেতুর মূল ফটকে খোলা হয়েছে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প। সেখানে পরীক্ষার জন্য আগেই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হয়। নিবন্ধিতরা বারকোড দিয়ে পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে করতে পারেন করোনা পরীক্ষা। মূল ফটকে করোনা পরীক্ষার জন্য দীর্ঘ লাইন থাকলেও ইয়ার্ডের ভেতরে কিংবা সেতুতে দর্শনার্থী নেই বললেই চলে। তবে এখনও বিকেল বা সন্ধ্যায় কোনো কোনো পর্যটক, দম্পতি দেখতে আসেন এই সেতুর সৌন্দর্য।

বিষয় : দুবাইয়ের প্রতিশ্রুতি সেতু

মন্তব্য করুন