বোস্টনে বেইন নির্বাচন: কম ভোট পেয়েও জয়ী মুরাদ-শান্তা!

ছবি: সমকাল
ছাবেদ সাথী, যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ | ০৪:৩৩
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনে বাংলাদেশিদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউ ইংল্যান্ড (বেইন) এর নির্বাচনে কম ভোটপ্রাপ্ত প্যানেলকে নির্বাচিত ঘোষণা করে রেকর্ড গড়লেন নির্বাচন কমিশনার।
গেল শুক্র ও শনিবার (১০ ও ১১ নভেম্বর) নির্বাচনের ফলাফলে খোকা-সাজু-রাজিব পরিষদ বিপুল ভোটে এগিয়ে থাকলেও নিজের ক্ষমতা বলে কম ভোটপ্রাপ্ত প্যানেলকে বিজয়ী ঘোষণা করায় প্রবাসীদের তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। এমন কর্মকাণ্ডে ধিক্কার জানিয়েছেন বোস্টন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বেইন-এর নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ের পথে এগিয়ে রয়েছেন খোকা-সাজু-রাজিব পরিষদ। নির্বাচন কমিশনার আদালতের পূর্বঘোষিত আদেশ অমান্য করে জোরপূর্বক অগ্রিম (এক সপ্তাহ আগে রাতের অন্ধকারে গ্রহণ করা) ৬৯৪ ভোট গণনা করে কম ভোটপ্রাপ্ত প্যানেল তানভির-তাজ-শান্তা পরিষদকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
তারা বলেন, যেহেতু আদালতের একটি পূর্বঘোষিত নির্দেশনা রয়েছে, এজন্য চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আদালতের নতুন নির্দেশনার। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করেন। ওই ফলাফল ঘোষণার সময় খোকা-সাজু-রাজিব পরিষদ কেউই সম্মতি দেননি এবং কেউই উপস্থিত ছিলেন না।
জানা যায়, আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে মাত্র ১৫ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচন কমিশনের পছন্দের প্যানেলকে তাৎক্ষণিক ঘোষণা দিলে ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেন খোকা-সাজু-রাজিব পরিষদের পক্ষে সভাপতি প্রার্থী মাহবুব-ই-খোদা (খোকা)।
লরেন্স সুপরিয়র কোর্টের বিচারক জেনিস ডব্লিউ. হাউয়ের পূর্বঘোষিত নির্দেশনায় অগ্রিম ভোট গণনা বাতিল হলে সভাপতি পদে মাহবুব-ই খোদা ৬৭৯ ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তানভির মুরাদকে পরাজিত করবেন।
নির্বাচন কমিশনার বিচারকের নির্দেশ অমান্য করে খোকা-সাজু-রাজিব পরিষদের প্রতিনিধিদের অসম্মতিতে জোরপূর্বক অগ্রিম ৬৯৪ ভোট (এক সপ্তাহ আগে রাতের অন্ধকারে গ্রহণ করা) যুক্ত করে তানভির মুরাদসহ তার প্যানেলকে বিজয়ী ঘোষণা করে। অন্যদিকে দুদিনের প্রাপ্ত ভোটে খোকা-সাজু-রাজিব পরিষদ বিপুল ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে।
শুক্র ও শনিবার (১০ ও ১১ নভেম্বর) নির্বাচনের প্রায় ৬ হাজার ভোটারের মধ্যে মোট ভোট দেন ১ হাজার ৬২৯ জন। এর মধ্যে সভাপতি পদে খোকা পেয়েছেন ১ হাজার ১ ৫৪ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তানভির মুরাদ পেয়েছেন ৪৭৫ ভোট। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সহসভাপতি পদে সাজ্জাদুর রহমান সাজু পেয়েছেন ১ হাজার ১৭৯ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. তাজ উদ্দিন পেয়েছেন ৪৪১ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে রাজিবুর রহমান রাজিব পেয়েছেন ১ হাজার ১৭৮ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শান্তা বাকী পেয়েছেন ৫৫৯ ভোট। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আশিকুর রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ১৪৭ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাশিবুল আমিন সৈকত পেয়েছেন ৪৫৪ ভোট।
সাংগঠনিক ও দপ্তর সম্পাদক পদে জহিরুল হুসেইন পেয়েছেন ১ হাজার ১২৬ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রিতম বড়ুয়া পেয়েছেন ৪৮৭ ভোট। কোষাধ্যক্ষ পদে মনিরুজ্জামান খান পেয়েছেন ১ হাজার ১৩৯ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইবনুল হাসান ইপু পেয়েছেন ৪৬৮ ভোট।
যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ পদে এডি শুভ পেয়েছেন ১ হাজার ১৩৬ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সেলিনা চৌধুরী পেয়েছেন ৪৭৮ ভোট। সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে রেহানা পারভীন ইতি পেয়েছেন ১ হাজার ১৪৩ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাহের নোহা আহমেদ পেয়েছেন ৪৭৩ ভোট।
যুগ্ম সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মৌসুমি রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ১৫১ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নাসরিন শাহরিয়ার পেয়েছেন ৪৫৯ ভোট। সমাজ কল্যাণ সম্পাদক পদে বিএম রায়হানুজ্জামান পেয়েছেন ১ হাজার ১২৪ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইসতিয়াক আহমেদ পেয়েছেন ৪৭৭ ভোট।
ক্রীড়া সম্পাদক পদে একরামুল পিজন পেয়েছেন ১ হাজার ১০১ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নুর মোহাম্মদ পেয়েছেন ৫১৯ ভোট।
শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক পদে আমিন হোসেন পেয়েছেন ১ হাজার ১৩১ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. মেরাজুল ইসলাম পেয়েছেন ৪৭৪ ভোট। গণসংযোগ সম্পাদক পদে পঙ্কজ চন্দ্র দাস পেয়েছেন ১ হাজার ১০৭ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাসুদ আকবর পেয়েছেন ৪৯৮ ভোট। নির্বাহী সদস্য পদে (এক) এসএম সাইফুর ইসলাম পেয়েছেন ১ হাজার ১১২ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আমতিয়াজ উদ্দিন পেয়েছেন ৪৯৮ ভোট এবং নির্বাহী সদস্য পদে (দুই) পদে মো. মাসুদ রানা পেয়েছেন ১ হাজার ১৪৪ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুল কাদের পেয়েছেন ৪৫৮ ভোট।
ফলাফল থেকে অগ্রিম ৬৯৪ ভোট বিয়োগ করা হয়েছে।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে থেকেই নির্বাচন কমিশনার সালাউদ্দিন খান সৈকত অপর প্যানেল তানভির-তাজ-শান্তা পরিষদে সঙ্গে যোগসাজসের অভিযোগ পাওয়া যায়। ভোট গ্রহণের নির্ধারিত দিনের এক সপ্তাহ আগে তানভির-তাজ-শান্তা পরিষদকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন শহরে গিয়ে রাতের অন্ধকারে ভোট গ্রহণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বড় দুর্নীতির অভিযোগ ছিল গঠনতন্ত্র পরিপন্থী ‘ডাকযোগে ভোট প্রদান’ প্রক্রিয়া। শুরু থেকেই খোকা-সাজু-রাজিব পরিষদ ডাকযোগে ভোট প্রদানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন খোকা-সাজু-রাজিব পরিষদের কোনো অভিযোগকে গুরুত্ব দেননি। ফলে নিরুপায় হয়ে খোকা-সাজু-রাজিব পরিষদ আদালতের শরণাপন্ন হন।
আইনজীবীর করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) ম্যাসাচুসেটসের দেওয়ানী কার্যবিধি বিধির ৬৫ ধারায় উক্ত নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন বিচারক।
নির্বাচন কমিশনার সালাউদ্দিন খান সৈকত আদালতের নিষেধাজ্ঞা মাথায় রেখে আমরা সংবিধান মোতাবেক শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ভোট ও শনিবার (১১ নভেম্বর) দিনব্যাপী ভোট গ্রহণ করার কথা যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেসকে জানালেও সেটি তিনি পালন করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
বেইনের কার্যকরী পরিষদের ১৫টি পদের জন্য এবারে দুটি প্যানেলে ৩০ প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হয়।