ব্রিটেনে একটি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে হঠাৎ করে শ্বাসনালিতে খাবার আটকে যায় এক ব্রিটিশ যুবকের। তাৎক্ষণিক তা অপসারণ করা জরুরি হয়ে পড়ে; নয়তো তাকে বাঁচানো অসম্ভব। দ্রুত সেই খাবার অপসারণ করা আবার কঠিন ব্যাপার। এ পরিস্থিতিতে একটি কৌশলে সেই কঠিন কাজটি করে হিরো বনে গেছেন বাংলাদেশি এক তরুণ।

বিবিসি, ডেইলি মেইলসহ ব্রিটেনের প্রভাবশালী অনেক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে ওই তরুণের প্রশংসা করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে এরই মধ্যে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ নাজমুল হাসান রিফাত (২৪) নামে ওই তরুণের বাড়ি ঢাকার উত্তরার কামারপাড়া এলাকায়। ২০১৯ সালে তিনি ব্রিটেনে যান।

ব্যাঙ্গোর তন্দুরি নামে একটি রেস্টুরেন্টে এ ঘটনা ঘটেছে। রেস্টুরেন্টটির মালিক মৌলভীবাজারের ছেলে মোহাম্মদ মোস্তাকিম রাজা। ওই রেস্টুরেন্টে প্রায় আড়াই বছর ধরে কাজ করছেন রিফাত। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আশরাফুল।

খাবার যাওয়ার কথা খাদ্যনালিতে। খুব বিরল পরিস্থিতিতে শক্ত খাবার শ্বাসনালিতে গিয়ে আটকে যেতে পারে। তখন দম বন্ধ হয়ে আসে যে কারও। এ পরিস্থিতিতে বিশেষ পদ্ধতিতে পেটের নাভির অংশে চাপ দিয়ে সেই শক্ত খাবারটি মুহূর্তের মধ্যে বের করে নিতে হয়। তবে এক বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে পিঠে চাপ দিতে হয়। এটিই ছিল রিফাতের কৌশল।

শ্বাসনালিতে খাবার আটকে গেলে এ পদ্ধতি প্রয়োগ ছাড়া তাৎক্ষণিক যে কাউকে বাঁচানো অসম্ভব। অধিকাংশ মানুষের কাছে এটি অজানা। রিফাত তার বাবার কাছ থেকে এ কৌশলটি শিখেছিলেন। ছোটবেলায় তারও এমন হয়েছিল; পরে তার বাবা তাকে বাঁচিয়ে ছিলেন। চার মিনিটের মধ্যে শ্বাসনালি থেকে ওই খাবার অপসারণের কথাও জানান রিফাত।

গত ২৩ মে রিফাত ওই ব্রিটিশ নাগরিককে প্রাণে বাঁচান। রেস্টুরেন্টের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ব্রিটিশ যুবকের পেছনে গিয়ে দুই হাত এক করে তার নাভিতে পুশ করতে থাকেন রিফাত। যাতে করে খাবারটি মুখ দিয়ে আবার বেরিয়ে আসে। একবারের চেষ্টায় শ্বাসনালি থেকে খাবার বের করতে পারেননি তিনি। আটবার চাপ দেওয়ার পর ওই যুবক স্বাভাবিক নিশ্বাস নিতে শুরু করেন। এ সময় উপস্থিত সবাই রিফাতকে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে রিফাত বলেন, 'হঠাৎ কাস্টমারের দিকে তাকিয়ে দেখি অস্বস্তি বোধ করছেন। দম বন্ধ হয়ে চোখ দিয়ে পানি পড়ার মতো অবস্থা তার। মুখ লাল হয়ে আসছিল। মুহূর্তের মধ্যেই আমি বিষয়টি বুঝতে পারি। টেবিল থেকে তাকে টেনে এনে পেছন দিয়ে দুই হাত এক করে পেটের নিচের দিকে চাপ দিই। কয়েকবার চেষ্টার পর শ্বাসনালি থেকে খাবার বেরিয়ে আসে।'

জ্যাক নামে ওই ব্রিটিশ যুবক জীবন ফিরে পেয়ে রিফাতকে জড়িয়ে ধরেন। পরে তাকে ঘোরার আমন্ত্রণ জানান। রিফাত বলেন, 'কাস্টমারের জীবন বাঁচানোর সময় আমি এতকিছু ভাবিনি। আমার শুধু একটা কথাই মনে হয়েছে, এটা বিপজ্জনক। তার স্বাভাবিক নিঃশ্বাস ফিরিয়ে আনাই ছিল আমার উদ্দেশ্য।'