- প্রবাস
- নিভৃতে দেশে ফিরছে প্রবাসীদের বাক্সবন্দি লাশ
এক বছরে স্থানীয়ভাবে দাফন ২৯২
নিভৃতে দেশে ফিরছে প্রবাসীদের বাক্সবন্দি লাশ

একটা সময় বিদেশের মাটিতে কেউ মারা গেলে শোরগোল পড়ে যেত। লাশ দেশে পাঠানোর আগে পর্যন্ত থাকতো বেদনাবিধুর উৎকণ্ঠা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এই শোরগোল কমে গেছে। লাশ দেশে পাঠাতে তৈরি হওয়া বিপত্তির কারণে পরিবারের অনুমতি নিয়ে লাশ সমাহিত করা হয় পরবাসে। এতে করে শত শত প্রবাসীকে শেষবারের মতো দেখা থেকেও বঞ্চিত হন স্বজনরা।
তবে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিকের দিকে যাওয়ায় আবারও প্রবাসীদের লাশ দেশে পাঠানো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বাক্সবন্দি লাশ ফিরছে দেশে।
দুবাই প্রবাসী চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা ইউনিয়নের রহিম উল্ল্যাহ (৬২)। গত ১০ জুন অসুস্থ হয়ে ভর্তি হন স্থানীয় শারজা কুয়েতি হাসপাতালে। সেখানে ২৬ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থা মারা যান রহিম উল্ল্যাহ। ১৯৯৩ সাল থেকে শেষ যাত্রা পর্যন্ত একই কোম্পানিতে কাজ করেছেন তিনি। বুধবার সকালে ২৮ বছরের প্রবাস জীবনের অবসান হলে দেশে ফিরেছে তার বাক্সবন্দি লাশ।
আবুধাবি প্রবাসী চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার নুর উদ্দিন (৫৩)। মারা যাওয়ার পর ৫৪ দিন হাসপাতালের মর্গে পড়ে ছিল তার লাশ। গত সোমবার কয়েকজন প্রবাসীর উদ্যোগে নুর উদ্দিনের লাশ দেশে ফেরে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আবুধাবিতে মারা যাওয়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার প্রদীপ চন্দ্র পালের মৃতদেহ ১২২ দিন ধরে রয়েছে শবাগারে। তার লাশও দেশে পাঠানোর জন্য বেশকিছু ধাপ সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত এক বছরে স্থানীয়ভাবে সমাহিত হয় ২৯২ জন প্রবাসীর লাশ। জুলাই থেকে জুন এই এক বছরে আবুধাবি দূতাবাসের হিসাব অনুযায়ী, দেশটির রাজধানী ও আশেপাশে স্থানীয়ভাবে সমাহিত হয়েছে ১৩৩ জন প্রবাসী বাংলাদেশির লাশ। এর মধ্যে ২৩ জনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এবং ১১০ জন মারা গেছেন করোনায়।
দুবাই ও উত্তর আমিরাত বাংলাদেশ কনস্যুলেটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয়ভাবে দাফন হয়েছে ১৫৯ জন প্রবাসীর লাশ। এর মধ্যে ১২৭ জনই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর গত এক বছরে দেশে ফিরেছে ৩২৭ জন প্রবাসীর লাশ।
আল আইন প্রবাসী সিআইপি শেখ ফরিদ সমকালকে বলেন, 'নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার প্রদীপ চন্দ্র পালের লাশ দেশে পাঠানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। কয়েকটি ধাপও সম্পন্ন করেছি। তবে তার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পাসপোর্ট, আউট পাস ও ফ্লাইট অপ্রতুলতায় লাশ দেশে যেতে সময় লাগছে।'
মিরসরাইয়ের নুর উদ্দিনের মরদেহ প্রেরণকারী আবুধাবি প্রবাসী সাইফুল ইসলাম সমকালকে জানান, করোনা এই পরিস্থিতিতে লাশ দেশে পাঠানো অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে কাগজপত্র তৈরি করতে আগের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। তবুও শেষবার দেখতে প্রবাসীদের লাশ স্বজনদের কাছে পাঠাচ্ছেন তারা।
মন্তব্য করুন